বিসিবি-ডোমিঙ্গো নাটকের শেষ কোথায়!
জাতীয় ক্রিকেট দলের হেড কোচের দায়িত্ব ছাড়ছেন। বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই খবর শুনে বেশ বিব্রত রাসেল ডোমিঙ্গো। প্রোটিয়া এই কোচ নাকি বলেছেন, তার কথা অন্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেননি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরীর এমন আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের পর ডোমিঙ্গোর পদত্যাগ নিয়ে সৃষ্ট গরম বাতাস অনেকটাই ঠান্ডা।
অনেকেরই ধারণা, টেস্ট আর ওয়ানডে কোচ হিসেবে থেকে যাবেন ডোমিঙ্গো। আসলেই কি তাই? এখন হেড কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর খবরে তিনি যতই বিব্রতবোধ করুন না কেন, ভেতরে ভেতরে কি ডোমিঙ্গো এমন কিছু ভাবছেন না?
তাকে টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব থেকে সরানো এবং ভারতের টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট কোচ শ্রীধরন শ্রীরামকে টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার করে এশিয়া কাপে পাঠানোই শেষ কথা নয়। বিসিবি পরিচালক গেম ডেভেলপমেন্ট প্রধান ও জাতীয় দলের ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে, সে উত্তেজনা কি এমনি এমনি থেমে যাবে?
ডোমিঙ্গোর ক্রিকেট দর্শন ও কোচিং স্টাইলটা বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের সঙ্গে লাগসই হচ্ছে না-খালেদ মাহমুদ সুজনের এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ডোমিঙ্গোও পাল্টা মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, ধমক আর চিৎকারে পারফরম্যান্স উন্নত করা যায় না। এতে করে ক্রিকেটারদের মনোযোগ-মনোসংযোগে উল্টো সমস্যা হয়।
এছাড়া ড্রেসিংরুম ও দলের অভ্যন্তরীণ আরও কিছু কথাবার্তাও বলে ফেলেছেন ডোমিঙ্গো। যার কিছু কথা শুধু খালেদ মাহমুদ সুজনের বিপক্ষে গেছে, আর কিছু বক্তব্য বোর্ডের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিপক্ষেও গেছে।
জাতীয় দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বোর্ডের উর্ধ্বতন মহলের অযাচিত হস্তক্ষেপের কথা বেরিয়ে এসেছে ডোমিঙ্গোর মুখ থেকে। যা বোর্ডের বিপক্ষেই গেছে। তারই প্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেই ফেলেছেন, ‘এখনও ডোমিঙ্গোর সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে এবং সরাসরি কিছু অভিযোগ আছে। এই অভিযোগগুলো আমি খণ্ডন করছি না।’
প্রশ্ন হলো, বোর্ডের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কি আদৌ নিজের পদ ধরে রাখতে পারবেন ডোমিঙ্গো? বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস ও চলমান সংস্কৃতি কিন্তু তা বলে না। বোর্ড বা ফেডারেশনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কোনো ভিনদেশি কোচের টিকে থাকা কঠিন।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী আজ বলেছেন, ডোমিঙ্গোর সঙ্গে তার খোলামেলা কথা হয়েছে এবং তার পদত্যাগের খবর ঠিক নয়। ক্রিকেট পাড়ায় শোনা যাচ্ছে, আগামী মাসের মাঝামাঝি ‘এ’ দলের আফগানিস্তান সফরের ম্যাচ দেখতে ডোমিঙ্গো আফগানিস্তান যাবেন।
কিন্তু অনেকের মনেই সন্দেহ, এই যাওয়াই হয়তো শেষ। আর নাও ফিরতে পারেন ডোমিঙ্গো। ভেতরের খবর, খুব গোপনে চাকুরি খুঁজছেন ডোমিঙ্গো। আগামী ২০২৩ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ডোমিঙ্গোর নিজ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবে আন্তর্জাতিক ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের আসর।
শোনা যাচ্ছে, সেখানে একটি দলের কোচ হতে যাচ্ছেন ডোমিঙ্গো। এখনও কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়নি। কোনো দলের সঙ্গে চুক্তি পাকা হয়ে গেলেই হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের হেড কোচ পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেবেন ডোমিঙ্গো।
তবে এ মুহূর্তে তার বিসিবির সঙ্গে আগে করা চুক্তি ভঙ্গের সম্ভাবনা খুব কম। তার মানে পদত্যাগের ঘোষণা আসলেও আরও মাস তিনেক পর। এই তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো টেস্ট আর ওয়ানডে সিরিজ নেই।
বিসিবির সঙ্গে ডোমিঙ্গোর চুক্তি ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। যেহেতু তিন মাস কাজ নেই, তাই ভেতরে ভেতরে চাকরি খুঁজে নেওয়ার ভালো সুযোগ থাকছে ডোমিঙ্গোর।
বাংলাদেশের চাকরিটা এক হাতে রেখে সেই কাজটাই করছেন প্রোটিয়া এই কোচ। কেননা বোর্ডের সঙ্গে তার যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, তারপর চাইলেও একসঙ্গে কাজ করা কঠিন হয়ে যাবে। এখন শুধু দুই পক্ষের বিচ্ছেদের ঘোষণা আসা বাকি!
এআরবি/এমএমআর/এএসএম