আগামী বিপিএলে বিদেশি ক্রিকেটারই পাবে না বিসিবি!
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের জন্য তিন বছরে পরিকল্পনা আগেই প্রকাশ করে দিয়েছে বিসিবি। আগামী তিন বছর জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ বিপিএলের জমজমাট আসর। কিন্তু মাঠে গড়ানোর কিংবা এ নিয়ে কার্যক্রম শুরুর আগেই তুমুল এক প্রতিদ্বন্দ্বীতার মুখোমুখি হয়ে গেলো বিপিএল।
বিসিবি যে সময়টায় বিপিএল আয়োজনের সূচি নির্ধারণ করেছে, সে সময়টায় অনুষ্ঠিত হবে আরও বেশ কয়েকটি ফ্রাঞ্চাইজি লিগ। শুধু তাই নয়, ওসব লিগে এত বেশি অর্থলগ্নি হচ্ছে যে, বিপিএলের জন্য ভালোমানের কোনো বিদেশী ক্রিকেটার পাবে কি না বিসিবি সে শঙ্কাই দেখা দিয়েছে।
বিসিবি বিপিএল আয়োজনের জন্য সময় নির্ধারণ করেছে ৬ জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই সময়টাই সংঘর্ষ বাধিয়ে দিচ্ছে নতুন করে আরব আমিরাতে আয়োজন হতে যাওয়া আইএল টি-টোয়েন্টি (ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টি) এর সঙ্গে। একই সময়ে আয়োজন হবে দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রাঞ্চাইজি লিগ। যেটার নাম এখনও নির্ধারণ করা হয়নি এবং অস্ট্রেলিয়ান বিগব্যাশ লিগ।
অস্ট্রেলিয়ার বিগব্যাশ লিগের জন্য খেলোয়াড় ড্রাফট আয়োজনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ আগস্ট। আর আরব আমিরাত ও দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি লিগের খবর তো প্রতিদিনই সংবাদ মাধ্যমে চলে আসতেছে।
সবচেয়ে বড়কথা আরব আমিরাত এবং দক্ষিণ আফ্রিকান লিগে এরই মধ্যে নাম লিখেছেন বিশ্বের নামি-দামি সব টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ। এই পরিস্থিতিতে একই সময়ে অনুষ্ঠিতব্য বিপিএল বিদেশি ক্রিকেটারের খরায় ভুগবে, তা নিশ্চিত করেই বলে দেয়া যায়।
বিদেশি ক্রিকেটারের অভাবে স্থানীয় তারকা ক্রিকেটাররাই বড় ভরসা
যেখানে অন্যদেশগুলো ফ্রাঞ্চাইজি ঠিক করে প্লেয়ার ড্রাফট করে ফেলছে, খেলোয়াড় কিনছে এবং দল গঠন প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে নিয়ে এসেছে, সেখানে বিসিবি এখনও ফ্রাঞ্চাইজিই ঠিক করতে পারেনি। ৩১ আগস্ট তারা একটা সময়সীমা বেধে দিয়েছে ফ্রাঞ্চাইজি কেনার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ইওআই (এক্সপ্রেস অব ইন্টারেস্ট) নেয়ার জন্য।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন আগেই জানিয়েছেন, তারা আশা করছেন আগের ফ্রাঞ্চাইজি মালিকরাই এবার আসবে বিপিএলের দল কেনার জন্য। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল ঘোষণা দিয়েছে, যারাই আসবে ফ্রাঞ্চাইজি হতে, তাদের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি হবে। এর আগে বিপিএল ফ্রাঞ্চাইজিতের চুক্তি ছিল কেবল এক বছরের জন্য।
নিজামউদ্দিন চৌধুরী বলেছিলেন, ‘আমরা চেষ্টা করবো খুব দ্রুতই সব কিছু চূড়ান্ত করে ফেলতে। মালিকরা যেন তাদের প্রস্তুতি করে দিতে পারে।’
একইসঙ্গে বিসিবি এটাও জানিয়েছে যে, বিপিএল অবশ্যই বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়েই অনুষ্ঠিত হবে এবং একইসঙ্গে সব বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে খেলতে হবে বিপিএলে। তারা বিদেশি লিগে গিয়ে খেলতে পারবে না। বিসিবি প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, সদস্যদেশগুলো (আইসিসির) ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগের জন্য সূচি খুঁজতেছে। ফলে অন্য দেশগুলো যদি একই সময়ে তাদের লিগ আয়োজনের চেষ্টা করে, তাহলে সূচির একটা সংঘাত হতেই পারে। এর ফলে সবাই ভুক্তভোগি হবে, শুধু আমরাই নই।’
নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন তখন আরো বলেছিলেন, ‘আমাদের দুই থেকে তিনজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় অবশ্যই নিজেদের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ খেলবে। আমি তাদের নাম বলতে চাই না। তবে যারা সাধারণত বিদেশি লিগ খেলে থাকেন, তারা এবার সেগুলো মিস করতে পারেন। তবে, অবশ্যই চাইবো বিদেশি ক্রিকেটাররা আমাদের লিগে আসুক।’
বিপিএলের সময় অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়ার বিগব্যাশ লিগ
‘এখানে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দেয়ারও একটা বিষয় আছে। সদস্যদেশগুলোর মধ্যে একটা অলিখিত চুক্তিই রয়েছে যে, এনওসি ছাড়া কেউ অন্যলিগে খেলতে পারবে না। সবাই এ নিয়মই মেনে চলে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না, কেউ নিজেদের লিগ ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে খেলার চিন্তা করবে।’
কিন্তু ঘরের কয়েকজন তারকা দিয়ে তো আর লিগ জমে উঠবে না। যারাই ফ্রাঞ্চাইজি মালিকানা ক্রয় করুক, তাদের চাওয়া হবে বিদেশি প্রতিষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি তারকারা। এরই মধ্যে আরব আমিরাতের আইএল টি-টোয়েন্টি ডোয়াইন ব্র্যাভো এবং আন্দ্রে ফ্লেচারকে চুক্তিবদ্ধ করে নিয়েছে। এ দু’জন গত বিপিএলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন।
ফ্যাফ ডু প্লেসি, মইন আলি এবং সুনিল নারিন- এরা ছিলেন চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বড় শক্তি। এদের কাউকেই পাওয়া যাবে না এবার। ডু প্লেসি খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা লিগে, মইন আলি, সুনিল নারিন এবং মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার ক্রিকেটার আন্দ্রে রাসেল এরই মধ্যে নাম লিখেছেন আইএল টি-টোয়েন্টিতে। ফরচুন বরিশালের মুজিব-উর রহমানও নাম লিখেছেন আরব আমিরাতে।
এর মধ্যে আবার রয়েছে বিগব্যাশ লিগ। অস্ট্রেলিয়ার এই টুর্নামেন্টটি শুরু হবে ১৩ ডিসেম্বর এবং চলবে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তারা এরই মধ্যে ১৭০জন ক্রিকেটারের নাম ঘোষণা করে ফেলেছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন রশিদ খান, অ্যালেক্স হেলস, ডু প্লেসি, রাইলি রুশো এবং ডোয়াইন ব্রাভোর মত ক্রিকেটার।
তবে, আরব আমিরাতের আইএল টি-টোয়েন্টি সবচেয়ে বেশি অ্যাকটিভ খেলোয়াড় চুক্তিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে। তারা বাছাই করে করে বিশ্বসেরা সব ক্রিকেটারকেই নিজেদের লিগের জন্য চুক্তির আওতায় নিয়ে আসছে। পিছিয়ে নেই দক্ষিণ আফ্রিকান লিগও।
বিপিএলে ৩১ ডিসেম্বরই যদি ফ্রাঞ্চাইজি হতে আগ্রহীদের নামের তালিকা প্রকাশ হয়, এরপর আরও বেশ কিছুদিন সময় লেগে যাবে নির্দিষ্ট ফ্রাঞ্চাইজি মালিক চূড়ান্ত করনের প্রক্রিয়া শেষ করতে। তাতে সময় লাগতে পারে ১ থেকে ২ মাসও। এরপর আসবে খেলোয়াড় তালিকা তৈরি করা, ড্রাফট, অকশন- অনেক কিছু। আগামী অক্টোবরের আগে এসব কিছু শেষ করা মোটেও সম্ভব নয়।
ওই একই সময়ে অনেকগুলো টি-টোয়েন্টি লিগের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে এবং স্বাভাবিকভাবেই খেলোয়াড়দের চাহিদাও উঠে যাবে তুঙ্গে। এসব বিষয় নিয়ে বিপিএল যদি আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতো, তাহলে সম্ভবত তারাও অনেক বেশি উপকৃত হতে পারতো।
ঐতিহাসিকভাবে বিপিএল ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর পেমেন্ট ভালো। তারা ভালো পারিশ্রমিক দিয়ে থাকেন। কিন্তু এর মধ্যেও খুঁত রয়েছে। কিছু কিছু খেলোয়াড়ের এজেন্ট মিডিয়াকে জানিয়েছে যে, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে তাদেরকে অনেক বেশি ট্যাক্স দিতে হয়। যে কারণে বিদেশি ক্রিকেটাররা বাংলাদেশে এসে খেলতে আগ্রহ পান না।
সুতরাং, পরিস্থিতি এমন দাঁড়াচ্ছে যে, বিপিএল বিদেশি ক্রিকেটারদের খুব কমই পাবে। যদি পায়ও তারা হবেন অখ্যাত। যাদের নামের ওপর বিপিএল কখনোই জমজমাট হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে নতুন খবর হলো, আরব আমিরাতের আইএল টি-টোয়েন্টি কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য সূচির সংঘাত এড়াতে অন্যদেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে যাচ্ছে। ক্রিকইনফো জানিয়েছে এ খবর। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া কিংবা বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করে সম্ভাব্য এই সূচির সংঘাতের ফলে কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছে আইএল টি-টোয়েন্টি লিগ। এমিরেটস ক্রিকেট বোর্ডের জেনারেল সেক্রেটারি মুবাশ্বির উসমানি জানিয়েছে এ তথ্য।
আইএইচএস/