শীর্ষ তারকাদের ছাড়া কঠিন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে পারবে সোহানের দল?
মাশরাফি নেই প্রায় সাড়ে ৫ বছর; সেই ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে। তামিমও ২০২০ সালের মার্চ থেকে। এই জিম্বাবুয়ের মাটিতেই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে শেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। এর মধ্যে আবার ঘোষণা দিয়ে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরও নিয়ে ফেলেছেন দেশের এক নম্বর ওপেনার।
বাকি তিনজনের মধ্যে সাকিব ছুটি নিয়েছেন, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিশ্রাম দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিসিবি। তাতেই এবার জিম্বাবুয়ে সফরে ‘পঞ্চপাণ্ডবশূন্য টিম বাংলাদেশ’।
এই পাঁচ শীর্ষ ও জনপ্রিয় তারকাকে ছাড়াই এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে জিম্বাবুয়ের পথে টাইগাররা। অধিনায়ক পদেও এসেছে পরিবর্তন। সাড়ে তিন বছর ক্যাপ্টেন্সি করা রিয়াদের পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক করা হয়েছে উইকেটরক্ষক কাম ব্যাটার নুরুল হাসান সোহানকে।
এক যুগের বেশি সময় সব ফরম্যাটেই টিম বাংলাদেশের প্রধান চালিকাশক্তি, সবচেয়ে বড় নির্ভরতা ‘পঞ্চপাণ্ডব।’ তাদের ছাড়া টিম বাংলাদেশ কল্পনাও করা যায়নি। সব আসর, সিরিজে তাদের ঘিরেই আবর্তিতত হতো সব কিছু। বিশেষ করে সাকিব, তামিম, মুশফিক আর রিয়াদের অন্তত তিনজন ছাড়া ক্রিকেটের ছোট পরিসরে দল হয়েছে খুব কম।
অথচ এবার তাদের একজনও নেই। তাদের অনুপস্থিতিতে একঝাঁক তরুণ ও নবীন ক্রিকেটারে গড়া দল নিয়েই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে সোহানের দল।
প্রতিপক্ষ দলটি জিম্বাবুয়ে। যার বিপক্ষে বেশ কয়েক বছর ধরে প্রায় বলেকয়েই জেতে বাংলাদেশ। সুতরাং, ধরে নেয়া হচ্ছে এবার পরিণত, অভিজ্ঞ আর শীর্ষ তারকাদের ছাড়াও হয়তো সমস্যা হবে না টিম বাংলাদেশের।
কিন্তু আসলে কি তাই? কাজটা বাস্তবে ততটা সহজ হবে? জিম্বাবুয়ে যত দুর্বল দলই হোক না কেন, বাংলাদেশের যে দলটি সোহানের নেতৃত্বে খেলতে নামবে, সেই দল কী বলেকয়ে জিম্বাবুয়েকে হারানোর সামর্থ্য রাখে?
অনেকের মনেই প্রশ্ন, সিনিয়র ও অভিজ্ঞ এবং অপরিহার্য সদস্যদের অনুপস্থিতিতে এসব তরুণরা কী পারবেন নিজেদের মেলে ধরে দলকে সাফল্যের বন্দরে পৌছে দিতে?
সবাই শুধু সাকিব, রিয়াদ, মুশফিক আর তামিমকে ছাড়া অনেকদিন পর মাঠে নামা নিয়ে হাপিত্যেশ করছেন; কিন্তু কেউ কী এই শীর্ষ তারকাদের ম্যাচ সংখ্যা, রান, ফিফটির সঙ্গে এবার দলে থাকা তরুণদের ম্যাচ, রান ও পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন?
সাকিব, রিয়াদ, তামিম ও মুশফিকদের পরিসংখ্যান আসলে কত সমৃদ্ধ, দলের জন্য তাদের অবদান কত বেশি? তা ক’জন খুঁটিয়ে দেখেছেন? খুঁটিয়ে দেখলে বুঝবেন সাফল্য, অর্জন, কৃতিত্ব আর অভিজ্ঞতার অনুপাতে শীর্ষ তারকাদের তুলনায় তরুণরা যোজন যোজন পিছিয়ে।
ছোট্র একটা পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। টি-টোয়েন্টিতে সাকিব আল হাসান (৯৯ ম্যাচ রান ২০১০, হাফ সেঞ্চুরি ১০টি), তামিম ইকবাল (৭৮ ম্যাচে ১৭৫৮ রান, এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান, সাতটি হাফ সেঞ্চুরি), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (১১৮ ম্যাচে ২০৪৩ রান। হাফ সেঞ্চুরি ৬টি) এবং মুশফিকুর রহিম (১০০ ম্যাচে ১৪৯৫ রান। হাফ সেঞ্চুরি ৬টি) মিলে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ৩৯৫টি।
চারজনের সর্বমোট সংগ্রহ ৭৩০৬ রান। তাদের সবার ব্যাট থেকে এসেছে একটি সেঞ্চুরি এবং ২৯টি হাফ সেঞ্চুরি। সেখানে মুনিম শাহরিয়ার (৩ ম্যাচে ২৩ রান, সর্বোচ্চ ১৭), এনামুল হক বিজয় (১৬ ম্যাচে ৩৮৪ রান, সর্বোচ্চ ৫৮, ১টিমাত্র হাফ সেঞ্চুরি), নাজমুল হোসেন শান্ত (৬ ম্যাচে ৭৬ রান, সর্বোচ্চ ৪০), লিটন দাস (৫১ ম্যাচে ৯৮০ রান, সর্বোচ্চ ৬১, ফিফটি ৫টি), আফিফ হোসেন ধ্রুব (৪৪ ম্যাচে ৬১৯ রান, সর্বোচ্চ ৫২, ফিফটি ২টি), মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (১৮ ম্যাচে ২২৫ রান, সর্বোচ্চ ৩৪) এবং নুরুল হাসান সোহান (৩৩ ম্যাচে ২৭১ রান, সর্বোচ্চ ৩০*) মিলে খেলেছেন ১৭১টি ম্যাচ। তাদের সবার রান ২৫৭২। সেঞ্চুরি নেই। হাফ সেঞ্চুরি মোটে ৮টি।
অর্থ্যাৎ, ম্যাচ খেলার সংখ্যা, রান তোলা আর পঞ্চাশ হাঁকানোর অনুপাত ৪:১-এরও কম। এটা কিন্তু একটু-আধটু ঘাটতি নয়, অনেক।
এক কথায় তারকাশূন্য বাংলাদেশ খেলতে নামবে তিনভাগের একভাগ শক্তি নিয়ে। এ ঘাটতি পুষিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সোহানের নবীন বাহিনী কতটা কী করতে পারবে? তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। তরুণদের কাজটা কিন্তু অনেক কঠিন। চ্যালেঞ্জটাও ভিষণ শক্ত। শক্তি, সামর্থ্য আর অভিজ্ঞতার এ বিশাল ফারাকটা কী বাস্তবে অতিক্রম করতে পারবে সোহানের দল?
আগামী ৩০ জুলাই রাতেই মিলবে এ প্রশ্নর প্রাথমিক উত্তর। সবটুকু জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে ২ আগস্ট পর্যন্ত।
এআরবি/আইএইচএস