পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ হ্যাটট্রিকের শুরু
ক্রিকেট বিশ্বে প্রতিনিয়তই কত ঘটনা ঘটে যায়। কত কিছুই না ইতিহাস হয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে ক্রিকেটের পাতায়। প্রায় দেড়শত বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রতিদিনই জমছে নানা রকমের ঘটনা। সেই জমানো ইতিহাস থেকেই বের করে আনা হয় সংশ্লিষ্ট দিনটির উল্লেখযোগ্য কোনো বিষয়।
আজ ২০ জুন, ২০২২। ক্রিকেট ইতিহাসে এই দিনে ঘটেছে অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য।
১৯৯৯: পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দ্বিতীয়বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া
ক্রিকেট বিশ্বকাপে সবার সেরা অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। এখন পর্যন্ত পাঁচবার বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে তারা। এর মধ্যে ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ সালে টানা তিনবার বিশ্বকাপ জিতে হ্যাটট্রিক করেছেন রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, গ্লেন ম্যাকগ্রাহরা। আর তাদের এই হ্যাটট্রিকের শুরুটা হয়েছিল আজকের তারিখে।
১৯৯৯ সালের ২০ জুন ঐতিহাসিক লর্ডসে শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া। গ্রুপপর্বের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১০ রানে হারানোর সুখস্মৃতি ছিল পাকিস্তানের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণার। কিন্তু সেদিনের ফাইনালে শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণির সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে ওয়াসিম আকরামের দল।
টস জিতে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানকে ঘোল খাওয়ান ওয়ার্ন। সেমিফাইনালের মতো ফাইনালেও চারটি উইকেট নেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটার। ওয়ার্নের ৩৩ রানে ৪ উইকেটের সঙ্গে টম মুডি ও গ্লেন ম্যাকগ্রা (৯ ওভারে মাত্র ১৩ রান দেন) দুইটি করে উইকেট নিলে ৩৯ ওভারে ১৩২ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান।
এ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট শুরুর সাত বছর আগেই যেনো টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং করেন বাঁহাতি ওপেনার গিলক্রিস্ট। তার ৩৬ বলে ৫৪ রানের ঝড়ো ইনিংসে মাত্র ২০.১ ওভারে দুই উইকেট হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। মার্ক ওয়াহ ৩৭, রিকি পন্টিং ২৪ ও ড্যামিয়েন মার্টিন করেন ১৩ রান।
১৯৯৩: এক হোঁচটে আদারটনের আজন্ম আক্ষেপ
১৯৯৩ সালের আজকের দিনে নিজের ক্যারিয়ারের আজন্ম আক্ষেপের জন্ম দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের তারকা ব্যাটার মাইক আদারটন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লর্ডস টেস্টের চতুর্থ দিন সেঞ্চুরির পথেই এগোচ্ছিলেন তখনকার ২৫ বছর বয়সী এ ওপেনার। ব্যক্তিগত ৯৭ থেকে তিন রান নিয়ে সেঞ্চুরির আশায় ছিলেন তিনি।
কিন্তু দুই রান সম্পন্ন করার পর তৃতীয় রান নিতে গিয়েই সবুজ উইকেটের ওপর হোঁচট খেয়ে পড়ে যান আদারটন। সেখান থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি। পড়ে থাকা অবস্থায়ই দেখতে পান চোখের সামনে স্ট্যাম্পের বেলস উপ্রে দিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক ইয়ান হিলি। ফলে ৯৯ রানে রানআউট হয়ে সমাপ্তি ঘটে আদারটনের চার ঘণ্টায় খেলা ২১৫ বলের ইনিংসের।
ঐতিহাসিক লর্ডসে আদারটনের এটি সবে চতুর্থ টেস্ট ছিল। এরপর এই মাঠে তিনি আরও ১১ বার টেস্ট খেলতে নেমেছেন। কিন্তু জাদুকরী তিন অঙ্ক আর ছোঁয়া হয়নি। পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারে ১১৫ ম্যাচ খেলে ১৬টি সেঞ্চুরি হাঁকালেও লর্ডসের অনার্স বোর্ডে আর নাম তোলা হয়নি আদারটনের। উল্লেখ্য, টেস্টে ১৬ জন ব্যাটার ৯৯ রানে রানআউট হয়েছেন।
সেই ম্যাচটিতে ইনিংস ও ৬২ রানে পরাজিত হয় ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে করা ৬৩২ রানের জবাবে ২০৫ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ফলো অনে পড়ে আদারটন, মাইক গ্যাটিং, গ্রাহাম হিক ও অ্যালেক স্টেয়ার্টের ফিফটির পরেও ৩৬৫ রানের বেশি করতে পারেনি ইংলিশরা। ফলে সহজ জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।
১৯৫৮: নিউজিল্যান্ডকে লজ্জায় ডোবালো ইংল্যান্ড
আরও একবার লর্ডস টেস্টের ঘটনা। ১৯৫৮ সালের আজকের দিনে ঐতিহাসিক লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৪৭ রানে অলআউট হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। যা টেস্ট ক্রিকেটে তখনকার সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার বিশ্বরেকর্ড ছিল। জিম লেকার ও টনি লক মিলে নেন নয়টি উইকেট।
প্রথম ইনিংসে ৪৭ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ড থামে মাত্র ৭৪ রানে। সবমিলিয়ে ম্যাচটির বয়স ছিল ১২ ঘণ্টারও কম। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ম্যাচটিতে প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৬৯ রান করেও ইনিংস ও ১৪৮ রানের বড় ব্যবধানে জয়ের স্বাদ পায় স্বাগতিক ইংল্যান্ড।
এছাড়া ২০ জুন জন্ম হয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের এক ঝাঁক খেলোয়াড়ের। যারা হলেন- ইংল্যান্ডের জর্জ ভারনন (১৮৫৬), অস্ট্রেলিয়ার জ্যাক উরাল (১৮৬০), দক্ষিণ আফ্রিকার সাইরিল ফ্র্যাংকোইস (১৮৯৭), ওয়েস্ট ইন্ডিজের রবার্ট মার্লে (১৯০৯), ভারতের রামাকান্ত দেসাই (১৯৩৯), ভারতের আরানি জয়প্রকাশ (১৯৪৯), দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যালান ল্যাম্ব (১৯৫৪), যুক্তরাষ্ট্রের আইজাজ আলি (১৯৬৮), নিউজিল্যান্ডের মাইয়া লুইস (১৯৭০), ভারতের পরশ হামব্রে (১৯৭২), পাকিস্তানের তৌফিক ওমর (১৯৮১) ও জিম্বাবুয়ের ওয়াডিংটন মোয়েঙ্গা (১৯৮৪)।
এসএএস/এএসএম