ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিকম্যানের জন্মদিন
ক্রিকেট বিশ্বে প্রতিনিয়তই কত ঘটনা ঘটে যায়। কত কিছুই না ইতিহাস হয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে ক্রিকেটের পাতায়। প্রায় দেড়শত বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রতিদিনই জমছে নানা রকমের ঘটনা। সেই জমানো ইতিহাস থেকেই বের করে আনা হয় সংশ্লিষ্ট দিনটির উল্লেখযোগ্য কোনো বিষয়।
আজ ১২ জুন, ২০২২। ক্রিকেট ইতিহাসে এই দিনে ঘটেছে অনেকগুলো ঘটনা। যেগুলো তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য।
১৯৫৭: `বড়ে মিয়াঁ'খ্যাত জাভেদ মিয়াঁদাদের জন্ম, যার গড় কখনোই ৫০ এর নিচে নামেনি
পাকিস্তানের গ্রেটেস্ট ব্যাটার বলা হয় তাকে। ১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে লাহোরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচেই যখন ১৬৩ রানের অনবদ্য ইনিংস খেললেন, তখনই সবাই বলে দিয়েছিল ছেলেটি জিনিয়াস। জাভেদ মিয়াঁদাদ, পাকিস্তানিরা যাকে ডাকে ‘বড়ে মিয়াঁ’ নামে।
তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অন্যতম পরিচয় হলো, ক্রিকেট ইতিহাসে দুইজন মাত্র ব্যাটার রয়েছেন, যাদের রানের গড় কখনোই ৫০-এর নিচে নামেনি। তার মধ্যে একজন হলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ, অন্যজন হলেন ইংল্যান্ডের হার্বার্ট সাকলিফি।
নিজের চতুর্থ টেস্ট ইনিংসেই ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বসেন মিয়াঁদাদ। সব মিলিয়ে মোট ৬টি ডাবল সেঞ্চুরি করেন তিনি। শুধুমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই সবচেয়ে কম গড় মিয়াঁদাদের, ১৬ টেস্টে মাত্র ২৯ গড়।
তবে, ক্যারিবীয়দের বিপক্ষেই সম্ভবত ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে গায়ানা টেস্টে ১১৪ রান করেছিলেন মিয়াঁদাদ।
তার সময়ের বোলাররা বলাবলি করতেন, মিয়াঁদাদকে আউট করতে হলে একসঙ্গে তার তিন স্ট্যাম্পেই বল আঘাত করতে হবে। না হয়, তিনি আউট হবেন না। পুরো ক্যারিয়ারে বিদেশের মাটিতে যেখানে মাত্র ১৫বার এলবিডব্লিউ আউট হয়েছিলেন তিনি। সেখানে ঘরের মাটিতে মাত্র একবার পড়েছিলেন লেগ বিফোরের ফাঁদে।
জাভেদ মিয়াঁদাদ একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি রেকর্ড ৬টি বিশ্বকাপ খেলেছেন। আবার একটি বিতর্কিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত তার নাম। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে পার্থ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ান পেসার ডেনিস লিলিকে হুমকি দিয়ে তার মুখের ওপর ব্যাট ঘুরিয়ে বিখ্যাত হয়েছেন তিনি।
১৯৯২ বিশ্বকাপে সিডনিতে ভারতীয় উইকেটরক্ষক কিরণ মোরের লাফ দিয়ে এবং চিৎকার বিরক্তিকর আপিলে জাভেদ মিঁয়াদাদ এতটাই বিরক্তবোধ করেছিলেন যে, তাকে সেভাবেই নকল করে মাঠের মধ্যে বিদ্রুপ করা শুরু করেন।
১৯৫৬: গ্রাহাম গুচের জম, টেরি অ্যালডারমনের জন্মদিন
টেরি অ্যালডারমন- অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট মিডিয়াম। যাকে মনে করা হয়, ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ব্যাটার গ্রাহাম গুচের সাক্ষাৎ জম। এই টেরি অ্যালডারমনের সামনে পড়লেই কেন যেন সব টেকনিক হারিয়ে বসতেন গুচ। বিশেষ করে ১৯৮৯ সালে অ্যালডারমনের সামনে গুচের ফর্ম এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, তাকে দল থেকে বাট দেয়ারও কথা উঠেছিল।
সব মিলিয়ে মোট সাতবার গ্রাহাম গুচের উইকেট নেন অ্যালডারমন। উইকেট-টু-উইকেট বল করতে পারতেন তিনি। ইংল্যান্ডে দুই সিরিজে ছিলেন সবচেয়ে বিধ্বংসী। ১৯৮১ এবং ১৯৮৯ সালে। ১৯৮৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্রোহী সফরের কারণে ইংল্যান্ড যেতে পারেননি।
ইংল্যান্ডের মাটিতে নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন তিনি। ১২ টেস্টে মোট ৮৩টি উইকেট নেন তিনি। ক্যারিয়ারের বাকি ২৯ টেস্টে ৮৭টি উইকেট নেন তিনি ইংল্যান্ডের বাইরে নিজের দেশ অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যসব দেশে।
১৯৮৩: অস্ট্রেলিয়াকে ধ্বসিয়ে দেয়া সেই বোলিং
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডানহাতি ফাস্ট বোলার উইনস্টন ডেভিসের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ১৯৮৩ সালের এদিন ধ্বস নেমেছিল অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিংয়ে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৮৩ বিশ্বকাপের সপ্তম ম্যাচ ছিল সেটি। লিডসের হেডিংলিতে মুখোমুখি ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়া।
প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৫২ রান করেছিল ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয়রা। জবাব দিতে নেমে অস্ট্রেলিয়া এতটাই বিপদে পড়েছিল যে বলার বাইরে। ক্যারিবীয় বোলিং লাইনআপের দিকে চোখ রাখলেই যে কারো পিলে চমকে উঠবে। অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং, উইনস্টন ডেভিসরা তখন আগুন ঝরাচ্ছিলেন।
এর মধ্যে উইনসন্টন ডেভিসের বোলিংয়েই ধ্বস নামে অস্ট্রেলিয়া শিবিরে। ৩০.৩ ওভার বল করে মাত্র ১৫১ রানে অলআউট অসিরা। ১০.৩ ওভার বল করে ৫১ রান দিয়ে একাই ৭ উইকেট নেন ডেভিস। তখনও পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে এটাই ছিল এক ইনিংসে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড।
অথচ, উইনস্টন ডেভিসের ওটা ছিল মাত্র ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচ। তাতেই তার আগুনে ঝলসে গেছে পুরো অস্ট্রেলিয়া। তবে, পরের ৭ উইকেট নিতে উইনস্টন ডেভিসের লেগেছিল ১২ ম্যাচ।
১৯৭৩: ট্রেন্ট ব্রিজে ইংল্যান্ডের সেই শ্বাসরূদ্ধকর জয়
১৯৭৩ সালের ১২ জুন, ট্রেন্টব্রিজে ইতিহাস রচনা করেছিল ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শ্বাসরূদ্ধকর এক জয় পেয়েছিল তারা। নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়ে গিয়েছিল মাত্র ৯৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের সামনে জয়ের জন্য দাঁড়ায় ৪৭৯ রানের বিশাল লক্ষ্য।
জবাব দিতে নেমে বেভান কংডন এবং ভিক পোলার্ড যেন আঠা লাগিয়ে উইকেটে সেট হয়ে গিয়েছিলেন। দু’জনের ব্যাটে এক সময় দেখা গেলো ৬ উইকেটে ৪০২ রান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৪৪০ রানে অলআউট নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ড ম্যাচ জিতেছিল ৩৮ রানে। ১৭৬ রান করেছিলেন কংডন এবং ভিক পোলার্ড করেছিলেন ১১৬ রান।
১৯৫৯: ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিকম্যানের জন্মদিন
ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করেছিলেন পাকিস্তানের জালালুদ্দিন। ক্যারিয়ারে মাত্র ৬টি টেস্ট এবং ৮টি ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখে গেছেন তিনি। ওয়ানডেতে ৮ ম্যাচে নিয়েছে ১৪টি উইকেট। গড় ১৫।
নিজের মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচেই রেকর্ডবুকে নাম তুলে ফেলেন জালালুদ্দিন। ১৯৮২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর, সিন্ধের হায়দরাবাদে নিয়াজি স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার রডনি মার্শ, ব্রুস ইয়ার্ডলি এবং জিওফ লসনের উইকেট নিয়ে ওয়ানেড ক্রিকেটের প্রথম হ্যাটট্রিকের গৌরব অর্জন করেন তিনি। আজ সেই জালালুদ্দিনের জন্মদিন।
আইএইচএস/