ক্রিকেটের এই দিনে: বিশ্বকাপে সাকলায়েনের সেই হ্যাটট্রিক
ক্রিকেট বিশ্বে প্রতিনিয়তই কত ঘটনা ঘটে যায়। কত কিছুই না ইতিহাস হয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে ক্রিকেটের পাতায়। প্রায় দেড়শত বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রতিদিনই জমছে নানা রকমের ঘটনা। সেই জমানো ইতিহাস থেকেই বের করে আনা হয় সংশ্লিষ্ট দিনটির উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
আজ ১১ জুন, ২০২২। ক্রিকেট ইতিহাসে এই দিনে ঘটেছে অনেকগুলো ঘটনা। যেগুলো তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য।
১৯৯৯ বিশ্বকাপ: সাকলায়েন মোস্তাকের হ্যাটট্রিক
১৯৯৯ সালের এইদিনে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেছিলেন পাকিস্তানের অফ স্পিনার (বর্তমান কোচ) সাকলায়েন মোস্তাক। বিশ্বকাপের সুপার লিগের সপ্তম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ওইদিন ১৪৮ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল পাকিস্তান।
ওয়াসিম আকরামের দলের প্রথমে ব্যাট করে করা ২৭১ রানের জবাবে মাত্র ১২৩ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। আজহার মাহমুদ, শোয়েব আখতার এবং আবদুল রাজ্জাকদের তোপের মুখে এমনিতেই কোনঠাসা হয়ে গিয়েছিল জিম্বাবুইয়ানরা।
শেষ দিকে এসে প্রতিপক্ষের লেজ পুরোপুরি মুড়ে দেন সাকলায়েন মোস্তাক, দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে। হেনরি ওলোঙ্গা, অ্যাডাম হ্যাকল এবং পোনি এমবাঙওয়ার উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন তিনি।
জিম্বাবুয়ের শেষ দিকের তিন ব্যাটারের উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক করার কারণে অনেকেরই হয়তো একে মূল্যায়ন করতে কষ্ট হয়। কিন্তু বিশ্বকাপের হ্যাটট্রিক মানেই আলাদা কিছু। সেটা যেমনই হোক। আর তখনও পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে দুটি করে হ্যাটট্রিক করা মাত্র দ্বিতীয় বোলার সাকলায়েন। এর আগে দুই হ্যাটট্রিক করা প্রথম বোলার ছিলেন ওয়াসিম আকরাম।
১৯৩৯: টেস্টে প্রথম নারী ছক্কাড়ু রেইচেল হেইহো ফ্লিন্ট-এর জন্মদিন
ইংলিশ নারী ক্রিকেটার রেইচেল হেইহো ফ্লিন্ট- নারী ক্রিকেট ইতিহাসে বিখ্যাত এক নাম। নারী টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ছক্কা হাঁকানোর গৌরব তার নামের পাশে। ১৯৬৩ সালে দ্য ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ডটি গড়েন তিনি। ছিলেন দুর্দান্ত এক ব্যাটার এবং নিজ দেশের অধিনায়ক।
তবে বিশ্ববাসির চোখে নারী ক্রিকেটে তার সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে, প্রথম নারী বিশ্বকাপ আয়োজনে সবচেয়ে বড় উদ্যোক্তা তিনি। ১৯৭৩ সালে তার নেতৃত্বে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ও করে। এর এক বছর আগেই অবশ্য ব্রিটেনের তৃতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা পুরস্কার এমবিই (মেম্বার অব দ্য মোস্ট এক্সিলেন্ট অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার) তে ভূষিত হন হেইহো ফ্লিন্ট।
ইংল্যান্ড জাতীয় নারী হকি দলের হয়ে হকিও খেলেছেন তিনি। এছাড়া এমসিসিতে নারী সদস্য পদ দেয়ার জন্য প্রথম ক্যাম্পেইন শুরু করেন তিনি। আজ হচ্ছে রেইচেল হেইহো ফ্লিন্ট-এর জন্মদিন। ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
১৯০৭: নর্দাম্পটনশায়ারের লজ্জা
কাউন্টি ক্রিকেটে তিন সপ্তাহ আগে কেন্টের কাছে ৬০ এবং ৩৯ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জায় ডুবেছিল নর্দাম্পটনশায়ার। তিন সপ্তাহ পর গ্লস্টারশায়ারের কাছে ৪০ মিনিটের ব্যবধানে মাত্র ১২ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল তারা। ১১৫ বছর পরও কাউন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে কম রানের লজ্জা এখনও নর্দাম্পটনশায়ারের দখলে। আর সর্বকালের তৃতীয় সর্বনিম্ন রানের স্কোর এটা।
১৯০৭ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে গ্লস্টারশায়ারকে ৬০ রানে অলআউট করে দিয়েছিল নর্দাম্পটনশায়ার। এরপর নিজেরা অলআউট হয় ১২ রানে। মূলতঃ জর্জ ডেনেটের বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনেই ধরাশায়ী হয় তারা। ৯ রান দিয়ে ৮ উইকেট নেন তিনি (এই ৮ ইউকেট পড়েছে আবার ৩ রানের ব্যবধানে)। দ্বিতীয় ইনিংসে নর্দাম্পটনশায়ার ৭ উইকেটে করেছিল ৪০ রান। ওই ইনিংসেও ১২ রান দিয়ে ৭ উইকেটই নেন জর্জ ডেনেট। ম্যাচটি হয়েছিল ড্র।
১৯৫১: ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার কলিস কিংয়ের জন্মদিন
ক্যারিবিয়ানের ক্যালিপসো অলরাউন্ডার কলিস কিংয়ের জন্মদিন। ১৯৫১ সালের এই দিনে তিনি বার্বাডোজের ক্রাইস্টচার্চের ফেয়ারভিউতে জন্মগ্রহণ করেন।
তার নিজের সময়ে নিঃসন্দেহে একজন বিধ্বংসী ব্যাটার ছিলেন কলিস কিং। ১৯৭৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের সবচেয়ে বিধ্বংসী চেহারা প্রদর্শণ করেন তিনি। ক্যারিবীয়দের হয়ে ওইদিন ১৩৮ রান করেছিলেন স্যার ভিভ রিচার্ডস। কিন্তু কলিস কিং না থাকলে ভিভ রিচার্ডসের সেঞ্চুরিও হতো না, ওয়েস্ট ইন্ডিজও জিততো না।
৬৬ বল খেলে ৮৬ রান করেন কলিস কিং। ১০টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৩টি ছক্কার মার মারেন তিনি। ক্যারিয়ারটাকে লম্বা করতে পারেননি ১৯৮৩-৮৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি বিদ্রোহী সফরে অংশ নেয়ায় নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে। কাউন্টিতে গ্লেমারগন এবং ওস্টারশায়ারের হয়েও খেলেছিলেন তিনি।
১৯৮৭: দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ডিন এলগারের জন্মদিন
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান টেস্ট দলের অধিনায়ক ডিন এলগারের জন্মদিন আজ। ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। এরপর জাতীয় দলে ডাক পেতে বেশ সময় লেগে যায় এলগারের। ২০১১ সালে ওয়ানডে অভিষেক ঘটে তার। টেস্ট অভিষেক ঘটে ২০১২ সালের নভেম্বরে।
১৯৪২: সোমচন্দ্র ডি সিলভার জন্মদিন
মুত্তিয়া মুরালিধরনের যুগ শুরু হওয়ার আগে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে সেরা স্পিনার ছিলেন সোমচন্দ্র ডি সিলভা। যার জন্ম হয়েছিল আজকের দিনে। তার বয়স যখন ছিল ৩৯, তখন টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় শ্রীলঙ্কার। তিনিই প্রথম ক্রিকেটার, যিনি শ্রীলঙ্কার হয়ে ৫ উইকেট নেন।
ফয়সালাবাদে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনি নিয়েছিলেন ৫৯ রানে ৫ উইকেট। এছাড়া ১৯৮৪ সালে লর্ডসনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লঙ্কানদের বিখ্যাত ড্র ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন তিনি। তার বোলিং ফিগার ছিল ৪৫-১৬-৮৫-২।
আইএইচএস/