যাদের দেখে ক্রিকেট শেখা তাদের নেতৃত্ব দেওয়া সৌভাগ্যের: জ্যোতি

মোশারফ হোসাইন
মোশারফ হোসাইন মোশারফ হোসাইন , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৮:০৬ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০২২

মানুষের জীবনে ভালো-খারাপ সময় থাকে। ভালো সময়ে মানসিকতা যতোটা শক্ত থাকে খারাপ সময়ে আরও বেশি শক্ত হওয়া উচিত। খারাপ সময় তো অবশ্যই গিয়েছে। যদি বলি আমার খারাপ সময়, আমার কাছে মনে হয়েছে দল যেটা আমার কাছে চেয়েছে আমি হয়তো সেটা দিতে পারিনি।

যখন আমার খারাপ সময় যায় আমি আমার ভালো সময়গুলো মনে করার চেষ্টা করি। অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় এসেছি শুধুমাত্র সাময়িক খারাপ সময়ের জন্য নিজেকে ছোট করে দেখবো- তা করি না আমি। আমি চিন্তা করি নিজেকে আরও কীভাবে দক্ষ করে গড়ে সেরাটা দিবো। আমার ভালো ইনিংসগুলো দেখার চেষ্টা করি, মনে করার চেষ্টা করি- জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমনটিই জানাচ্ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি।

আপনি যখন জাতীয় দলে এলেন তখন সালমা খাতুন, রোমানা আহমেদ ও জাহানারা আলমরা রীতিমতো বড় তারকা। শুরুতে তাদের সঙ্গে খেলেছেন, তাদের অধিনায়কত্বে খেলেছেন। এখন সময়ের পালাবদলে আপনি তাদের অধিনায়ক, এই বিষয়টি কখনও ভাবায় কি না? সিনিয়রদের নিয়ে একসঙ্গে দলকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি কেমন উপভোগ করেন?

এই প্রশ্নের জবাবে নিগার সুলতানা জ্যোতি বলেন, আমি যাকে দেখে ক্রিকেটে আসি তিনি হলেন সালমা আপু। আমার সব সময় ইচ্ছে ছিল সালমা আপুর সঙ্গে খেলার, তার অধীনে খেলার। তাকে আমার এতোটাই ভালো লাগতো। একটা সময় ইচ্ছেটা ছিল একসঙ্গে খেলার। তাদের নেতৃত্ব দিতে হবে এটা একটা সময়ের ভাবনা ছিল। তবে এতো জলদি তাদের অধিনায়কত্ব করার সুযোগ পাবো এটা কখনও ভাবিনি। যাদের দেখে ক্রিকেট শেখা, ক্রিকেটে আসা, যাদের আইডল মনে করা, তাদের সঙ্গে খেলা তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি অনেক গর্বের আমি মনে করি। সবসময় মনে করি এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া নিজেকে মেলে ধরার। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার থাকে, অনেক কিছু জানার থাকে তারা আমার কাজগুলোকে অনেক সময় সহজ করে দেন। কারণ তারা অনেক অভিজ্ঞ। তারা দলের নিয়ম আরও ভালো জানেন। আমি মনে করি আমি অনেক সৌভাগ্যবান তাদের সঙ্গে খেলতে পেরে তাদের নেতৃত্ব দিতে পেরে।

সালমা-রোমানা-জাহানারারা আপনাদের আগের প্রজন্ম বলা যায়। তারা বাংলাদেশ নারী দলকে একটা পর্যায়ে এনে দিয়েছেন। আপনারা তথা আপনি ক্যারিয়ার শেষে নারী ক্রিকেটকে কোন জায়গায় দেখতে চান? এর জবাবে জ্যোতি বলেন, আমি জানি না তাদের ক্যারিয়ার কতটা লম্বা হবে। তাদের স্বপ্ন ছিল তারা দলকে একটা জায়গাতে নিয়ে এসেছেন।

আমরা এখন যারা খেলছি আমাদের স্বপ্নটা কিন্তু এখন আলাদা হয়ে গেছে। যেহেতু আমরা আইসিসির এফটিপিতে ঢুকে গেছি, আমরা এখন অনেক বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবো। একজন খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে আমার ইচ্ছে থাকবে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে নিজেদেরকে এমনভাবে গড়ে তুলবো সামনের বিশ্বকাপে যেন নিজেদের কোনো বাঁধা না আসে। আমরা এখন ভালো ভালো টিমগুলোর সঙ্গে খেলবো। এখন বেশি ম্যাচ পাওয়ায় যেটা হবে আমরা যখন ভালো করবো দলও তখন ভালো জায়গাতে এসে দাঁড়াবে।

পরের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন আপনার। বিশ্বের অন্যান্য নারী দলগুলোর তুলনায় আমাদের দলের সীমাবদ্ধতা অনেক। এসব কাটিয়ে উঠে সেমির পথে সত্যিকারের স্বপ্ন দেখতে বিশ্বকাপের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত জানতে চাইলে জ্যোতি বলেন, আমার তেমন পরিকল্পনা আছে বলেই আমি কথাটা বলেছি। এবারের বিশ্বকাপটাই  দেখেন আমরা কিন্তু ভালো করেছি। বোলিং ইউনিট ভালো করেছে, ব্যাটাররা আরও একটু ভালো করলে ফল আরও বেশি ভালো হতো। ব্যাটিংটা উন্নতি করা যায় কিন্তু ম্যাচ খেলে। আমরা যেহেতু সামনে অনেকগুলো ম্যাচ পাবো, আমার মনেহয় ব্যাটাররা ভালো করার একটা সুযোগ পাবে। ব্যাটাররা যদি ভালো করতে থাকে, সবাই যদি টিমকে ভালো কিছু দিতে থাকি, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে বিশ্ব ক্রিকেটে আমরা ভালোভাবে প্রতিযোগিতা করতে পারবো।

নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার লক্ষ্য কী? জ্যোতির উত্তর, একটা মানুষের লক্ষ্য থাকে আমি যদি নিজেকে একটা ভালো জায়গাতে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি এটা টিমের জন্যও ভালো হবে। আমি চাই বিশ্বের সেরা দশ ব্যাটারের মধ্যে থাকতে। একটা বড় রানের মাইলফলক ছুঁতে চাই যেন বাকি ব্যাটাররা এটা মাথায় নিয়ে খেলে যে জ্যোতির ওই রানকে ছোয়ার চেষ্টা করবো। দেশের তো বটেই বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার হতে চাই।

আলাপচারিতায় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, সবাই আমার খারাপ ও ভালো সময়ে আমাকে ইতিবাচকভাবে সমর্থন করে যাচ্ছেন। আমি মনে করি নারী ক্রিকেটে সমর্থন অনেক বেশি জরুরি। এভাবেই আমাদের সমর্থন করে গেলে একদিন আমরা দেশের জন্য বিশ্বজয় করতে পারবো।

এসএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।