সেই আফিফ-মিরাজের জুটিতে লড়ছে বাংলাদেশ
মাসখানেক আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইতিহাস গড়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। মাত্র ৪৫ রানে ৬ উইকেট পতনের পর ১৭৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে দলকে অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দিয়েছিলেন এ দুই তরুণ।
সেই সুখস্মৃতির মাসখানেকের মধ্যেই আবার দলের বিপর্যয়ে হাল ধরলেন আফিফ ও মিরাজ। এবার অবশ্য ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটেছে দলীয় ৯৪ রানে। সেখান থেকে সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে দেড়শ রানের ঘর পার করিয়ে দিয়েছেন আফিফ ও মিরাজ।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৪১ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৫১ রান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি করে ৬০ রানে অপরাজিত রয়েছেন আফিফ। অন্যদিকে মিরাজের সংগ্রহ ২৩ রান। এরই মধ্যে এ জুটিতে চলে এসেছে ৫৭ রান।
জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্সে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লে'র দশ ওভারে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন প্রথম তিন ব্যাটার তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। পরে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি মিডলঅর্ডারের দুই ব্যাটার ইয়াসির আলি রাব্বি এবং মুশফিকুর রহিম। কাগিসো রাবাদা একাই নিয়েছেন ৩ উইকেট।
হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারিতে পরাস্ত হয়েছেন তামিম ও সাকিব। লুঙ্গি এনগিডির বলে তার গ্লাভসে লেগে বল চলে যায় কেশভ মহারাজের হাতে। টাইগার অধিনায়ক ৪ বল খেলে করেছেন ১ রান। পরে রাবাদার একই ধরনের ডেলিভারিতে ফ্লিক করে গিয়ে বাইরের কানায় লেগে সাজঘরে ফেরেন রানের খাতা খুলতে না পারা সাকিব।
শুরু থেকেই এ দুজনের চেয়ে তুলনামূলক সাবলীল ছিলেন লিটন। তিন চারের মারে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল তার ব্যাটে। কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তিনি। রাবাদার ভেতরে ঢোকা বাউন্সারে ধরা পড়েন লিটন।
ইনিংসের অষ্টম ওভারের প্রথম বলটিই খানিক টেনে খাটো লেন্থে করেন রাবাদা। হালকা সুইং করে ভেতরে ঢুকছিল সেই ডেলিভারি। বলের লাইন থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেও বাঁচতে পারেননি লিটন। বল তার ব্যাটের কানায় লেগে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের গ্লাভসে।
একই ওভারে সাজঘরে ফিরতে পারতেন পাঁচ নম্বরে নামা ইয়াসির আলি রাব্বিও। তবে স্লিপে দাঁড়িয়ে তার সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন প্রথম স্লিপের ফিল্ডার জানেমান মালান। রাব্বি বেঁচে গেলেও, বাঁচেননি লিটন। তিনি আউট হওয়ার আগে ২১ বলে করেছেন ১৫ রান।
অবশ্য রাব্বিও বেশিক্ষণ বাঁচতে পারেননি। ইনিংসের ১২তম ওভারে টানা ষষ্ঠ ওভার করতে এসে শেষ বলে রাব্বিকে সাজঘরে পাঠান রাবাদা। আগের ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পেলেও, আজ মাত্র ২ রান করতে পেরেছেন রাব্বি।
পরের ওভারে প্রায় পাঁচ বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা ওয়েইন পারনেলের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন উইকেটরক্ষক ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। তিনি ৩১ বল খেলে করতে পেরেছেন মাত্র ১২ রান।
এরপর উইকেটে এসে শুরু থেকেই পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেন তরুণ বাঁহাতি ব্যাটার আফিফ। রাবাদার করা ১৪তম ওভারে তিন বলের ব্যবধানে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। যা খানিক স্বস্তির বাতাস বইয়ে দেয় বাংলাদেশ ডাগআউটে। পরে টেম্বা বাভুমার বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৭ ওভারে দলের পঞ্চাশ পূরণ করে দেন আফিফ।
তরুণ সতীর্থের দেখাদেখি হাত খুলে খেলার চেষ্টা করেন মাহমুদউল্লাহও। প্রোটিয়া অধিনায়কের করা ২৩তম ওভারে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। এক ওভার পর কেশভ মহারাজের বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আফিফের সঙ্গে পঞ্চাশ রানের জুটি পূরণ করেন মাহমুদউল্লাহ।
কিন্তু তিনিও বেশিদূর যেতে পারেননি। দলীয় একশ হওয়ার আগে তাবরাইজ শামসির ফাঁদে পা দেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের ২৮তম ওভারে লেগ স্লিপ নিয়ে বোলিং শুরু করেন শামসি। প্রথম বলেই ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে সেই স্লিপে দাঁড়ানো জানেমান মালানের হাতে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ।
দলীয় ৯৪ রানের মাথায় আউট হওয়ার আগে তিন চারের মারে ৪৪ বলে ২৫ রান করেছেন তিনি। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে ভাঙে ৬০ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি। অভিজ্ঞ সতীর্থ ফিরে যাওয়ার পর উইকেটে এসে প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান মেহেদি মিরাজ।
পরের ওভারে মহারাজের বলে ফের বাউন্ডারি তুলে নেন আফিফ। ঠিক পরের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি। জীবন পাওয়ার পর ইনিংসের ৩৬তম ওভারে লুঙ্গি এনগিডির বলে চার মেরে পৌঁছে যান ৪৮ রানে। পরের ওভারে মহারাজের বলে দৃষ্টিনন্দন শটে হাঁকান আরেক বাউন্ডারি।
অবশ্য সেই ওভারের প্রথম বলে এক রান নিয়েই পূরণ হয় আফিফের ফিফটি। পঞ্চাশে পৌঁছতে ৭৯ বল খেলেন তিনি। যেখানে ছিল ৭টি চারের মার। আফিফের ফিফটি পূরণে আগে মহারাজের করা ৩৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে স্লগ সুইপ করে ইনিংসের প্রথম ছক্কা মারেন মেহেদি মিরাজ।
তারা দুজনই সাজঘরে ফিরতে পারতেন প্রোটিয়া অধিনায়কের করা ৪১তম ওভারে। সেই ওভারের তৃতীয় বলে বড় শট খেলতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ তুলে দেন মিরাজ। কিন্তু তালুবন্দী করতে পারেননি জানেমান মালান। পরে শেষ বলে ঝাঁপিয়ে পড়েও ফিরতি ক্যাচ হাতে রাখতে পারেননি বাভুমা। উল্টো আঙুলে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে যান তিনি।
এসএএস/জিকেএস