আগের কোনো দল যা পারেনি, তামিমরা তা পারবেন?
তবে কি রাসেল ডোমিঙ্গোর আশাই পূর্ণ হবে? ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে টাইগার হেড কোচ অনেক কথার ভিড়ে একটি অতি তাৎপর্য্যপূর্ণ কথা বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আগে বাংলাদেশের কোন দল কখনও যা পারেনি, এবার তা করে দেখাতে পারে আমাদের দল।
সেই কখনও না পারা বলতে আসলে ডোমিঙ্গো কী বুঝিয়েছেন? অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের মতো অন্তত এক ম্যাচ জয়ের আশায় অমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন টিম বাংলাদেশের এ দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ?
তামিম-সাকিব দুজনই দেশ ছাড়ার আগে বলে গেছেন, সিরিজ জেতাটা হবে অনেক বড় কৃতিত্ব, অনেক বেশি ভালো লাগার। তবে অন্তত একটি ম্যাচ জেতাটাও হবে বড় অর্জন। ডোমিঙ্গো ঠিক ঐ ভাষায় কথা না বলে লক্ষ্য-পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘আমরা এমন কিছু করে দেখাতে চাই বাংলাদেশের কোন দল আগে যা কখনও করে দেখাতে পারেনি।’
‘আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ওয়ানডে সিরিজে হারাতে চাই’- সরাসরি এমন কথা না বলে টাইগার হেড কোচ নিজ দলকে আন্ডারডগ বলে অভিহিত করেই অমন কথা বলেছিলেন। শুক্রবার সেঞ্চুরিয়নে তামিম ইকবালের দল ৩৮ রানে জেতায় ডোমিঙ্গোর আশা পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
তিন ম্যাচের সিরিজে প্রথম ম্যাচ জিতে ১-০’তে এগিয়ে যাওয়া তামিম ইকবাল বাহিনীর সামনে এখন এক ম্যাচ বাকি রেখে সিরিজ জয়ের হাতছানি। রোববার জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্সে জিতলেই সিরিজ হাতের মুঠোয় আসবে টাইগারদের। দলের অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজের কণ্ঠেও সিরিজ বিজয়ের আশা।
কোটি ভক্তের চোখ এখন ওয়ান্ডরার্সে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আগের বিশ বছরে খেলা ৯ ওয়ানডেতে জয়ের স্বাদ না পাওয়া টাইগাররা এবার প্রথম জয়ের পর সিরিজ বিজয়ের কৃতিত্বও দেখাবে- এমন আশায় সমর্থকরা।
টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন জাগো নিউজের সঙ্গে মুঠোফোন আলাপে জানিয়েছেন, আমরা তৈরি, যেকোনো কন্ডিশনে নিজেদের মেলে ধরতে মুখিয়ে ছেলেরা। আমার মনে হয় সবার ভেতরে একটা বিশ্বাস জন্মেছে যে আমরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে জিতবো। প্রক্রিয়া ঠিক রেখে খেলতে পারলে সাফল্যের দেখা মিলবে। এ বোধ-উপলব্ধি জন্মেছে সবার।
সেঞ্চুরিয়নে খেলা হয়েছে দিবারাত্রির। আর ওয়ান্ডরার্সে হবে পুরোটাই দিনে। বাংলাদেশ সময় রোববার দুপুর ২টায় শুরু হবে দ্বিতীয় ম্যাচ। আগের মতোই টি স্পোর্টস ও জি টিভি (গাজী টিভি) সরাসরি ম্যাচটি টিভিতে দেখাবে।
প্রথম ম্যাচ দিবারাত্রির, পরের ম্যাচ অন্য ভেন্যুতে দিনের আলোয়। কোনো পার্থক্য কিংবা সমস্যা পোহাতে হবে কি? টাইগার থিংক ট্যাংক সুজনের আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণ, ‘মনে হয় না তেমন কোনো সমস্যা হবে। আমরা ঐ মাঠে প্রথম দুদিন অনুশীলন করেছি।’
উইকেট কেমন? সুজনের জবাব, ‘উইকেট ভালো, গতিময়। বল দ্রুত ব্যাটে আসবে।’ এটুকু বলেই নিজ দলের বোলারদের প্রসঙ্গ টানেন, ‘গতিময় পিচে আমাদের সমস্যা নেই। আমাদের তিন পেসারই প্রথম ম্যাচে ১৪০-এ বল করেছে। সেখানে প্রোটিয়াদের একজন মাত্র ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন। তাই উইকেটে বাড়তি গতি থাকায় কোনো সমস্যা দেখছি না।
সেঞ্চুরিয়নের চেয়ে ওয়ান্ডারার্স যে আরও ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি, তার প্রমাণ হয়ে আছে ২০০৬ সালের ১২ মার্চ এই মাঠে হওয়া স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচ। যাতে ৪ উইকেটে ৪৩৪ রানের পাহাড় গড়েও পারেনি অস্টেলিয়া। এক বল আগে ১ উইকেট হাতে রেখে সেই হিমালয়সম স্কোর টপকে ইতিহাস গড়ে গ্রায়েম স্মিথের দক্ষিণ আফ্রিকা।
সেই থেকে ওয়ান্ডারার্স সত্যিই বিস্ময় হয়ে আছে। দেখা যাক সেই মাঠে টাইগারদের সাফল্যের নতুন ইতিহাস রচিত হয় কি না?
প্রথম ম্যাচে তামিম ইকবালের দল শুধু ম্যাচই জিতেনি, সামর্থ্যেরও প্রমাণ দিয়েছে। ব্যাটিং-বোলিংয়ের করণীয়গুলো ভালোভাবেই করে দেখিয়েছেন টাইগাররা। দুই ওপেনার তামিম-লিটন দেখিয়েছেন বাউন্সি পিচে রাবাদা-লুঙ্গি-জানসেনদের মোকাবিলা করে প্রথম উইকেটে দলকে একটা মজবুত ভিত গড়ে দিতে সক্ষম তারা।
তারপর সাকিব-ইয়াসির ১৫ রানের জুটি গড়ে দলকে আরও এগিয়ে দিয়েছেন। শেষ দিকে মিরাজ হাত খুলে খেলে দলকে ৩০০ ছাড়ানো অবস্থানে নিয়ে গেছেন। পরে দুই পেসার শরিফুল-তাসকিন এবং অফস্পিনার মিরাজ সেই স্কোরকে জয়ের জন্য যথেষ্ট বলে প্রমাণ করে ছেড়েছেন।
আহামরি ও বাড়তি কিছু করার দরকার নেই। টাইগারদের সিরিজ নিশ্চিতে দরকার সেঞ্চুরিয়নের উজ্জ্বল ও দ্যুতিময় পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি। তামিমের দল কি তা পারবে? ওয়ান্ডরার্সে তামিমের দল কী সাফল্যের নতুন ইতিহাস গড়বে?
এআরবি/এসএএস/জেআইএম