থিসারার স্লোয়ার জাদুতে মাঝারি সংগ্রহে আটকা চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম বরাবরই রানপ্রসবা। এখানে রান থামাতে প্রয়োজন বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং। যা দুর্দান্তভাবে করে দেখালেন শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা। বলের পেস কমিয়ে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ব্যাটারদের আটকে রাখার পরিকল্পনায় সফল থিসারা, সফল খুলনা টাইগার্সও।
বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচে বেশি দূর যেতে পারেনি স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান করতে পেরেছে তারা। শেষ দিকে নাইম ইসলাম ও শরিফুল ইসলামের দৃঢ়তায় এ মাঝারি সংগ্রহে যেতে পেরেছে তারা। বল হাতে মাত্র ১৮ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়েছেন থিসারা।
মিরপুরের মতো সাগরিকায়ও চট্টগ্রামকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করতে একদমই সময় নেননি এই ম্যাচেই প্রথম সুযোগ পাওয়া নাবিল সামাদ। ইনিংসের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই চট্টগ্রামের ক্যারিবীয় ওপেনার কেনার লুইসকে ফিরিয়ে দেন এ বাঁহাতি স্পিনার।
ফুল লেন্থের ডেলিভারি মারবো না ঠেকাবো করতে করতে সোজা কভারে দাঁড়ানো ফরহাদ রেজার হাতে তুলে দেন ১ রান করা কেনার। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে শুরুর ধাক্কাটা ভালোভাবেই সামাল দেন আরেক ওপেনার উইল জ্যাকস ও তিন নম্বরে নামা আফিফ হোসেন ধ্রুব। এ দুজনের কল্যাণে পাওয়ার প্লে'তে ৪৬ রান তুলে নেয় চট্টগ্রাম।
ইনিংসের নবম ওভারে আক্রমণে এসেই খেলার ধারার বিপরীতে জুটি ভাঙেন থিসারা পেরেরা। তার স্লোয়ার ডেলিভারে অফসাইডে খেলতে গিয়ে প্লেইড অন হন ২৩ বলে ২৮ রান করা উইল জ্যাকস। পরের ওভারেই সেকুগে প্রসন্নকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ৪ রানে সাজঘরে ফেরেন সাব্বির রহমান।
মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় চট্টগ্রাম। তাদের বিপদ আরও বাড়ে অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজও অল্পেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরলে। শেখ মেহেদি হাসানের পরা করা ১৩তম ওভারে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে প্রসন্নার হাতে ক্যাচ দেন ১০ বল থেকে ৬ রান করা মিরাজ।
চট্টগ্রাম অধিনায়ককে আউট করে পকেট থেকে স্টিকজাতীয় একটি জিনিস বের করে ভিন্নরকম এক উদযাপন করেন শেখ মেহেদি। অপরপ্রান্তে ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে চট্টগ্রামের স্কোরবোর্ডটা ভদ্রস্থ রাখছিলেন আফিফ। প্রসন্নকে কাউ কর্নার দিয়ে কিংবা কামরুল রাব্বিকে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে দমে না যাওয়ার আভাসই দিয়েছিলেন আফিফ।
মনে হচ্ছিল, এবারের আসরে প্রথম ফিফটি করেই ফেলবেন তিনি। কিন্তু তা করতে পারেননি। থিসারা পেরেরার স্লোয়ার কার্যকরী ভূমিকা রাখায় আরেক মিডিয়াম পেসার ফরহাদ রেজাকে ১৫তম ওভারে প্রথমবার আক্রমণে আনেন মুশফিক। সাফল্য পেতে মাত্র তিন বল লাগে তার। স্লটে পাওয়া ডেলিভারি সোজা চালিয়েছিলেন আফিফ। কিন্তু লং অন বাউন্ডারিতে বেশ খানিকটা দৌড়ে দুর্দান্ত ক্যাচে ৪৪ রান করা আফিফের বিদায়ঘণ্টা বাজান মেহেদি।
আফিফ আউট হওয়ার আগের ওভারে চট্টগ্রাম ইনিংসে বড় ধাক্কা লাগে আগের তিন ম্যাচে ঝড় তোলা বেনি হাওয়েলের উইকেটে। থিসারার স্লোয়ারে পরাস্ত হয়ে ফিরত ক্যাচ দেন হাওয়েল। সাজঘরে ফেরার আগে ৫ রান করতে সক্ষম হন তিনি। এরপর আরও একবার হতাশ করেন শামীম পাটোয়ারী। থিসারার তৃতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে মাত্র ২ রান করেন শামীম।
দলীয় ১০২ রানে সপ্তম উইকেট পতনের পর ইনিংসের বাকি দায়িত্ব নেন অভিজ্ঞ নাইম ইসলাম। তার সঙ্গে দারুণ ব্যাট করেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামও। এ দুজন মিলে নবম উইকেট জুটিতে মাত্র ১৪ বলে ২৭ রান যোগ করেন। একটি করে চার-ছয়ের মারে ৬ বলে ১২ রান করেন শরিফুল। নাইমের ব্যাট থেকে আসে দুই চার ও এক ছয়ের মারে ১৯ বলে ২৫ রান।
খুলনার পক্ষে বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন থিসারা। এছাড়া একটি করে উইকেট গেছে বাকি পাঁচ বোলার নাবিল, মেহেদি, ফরহাদ, প্রসন্না ও কামরুল রাব্বির ঝুলিতে।
এসএএস/এমএস