অনেক চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতায় শুরু হচ্ছে এবারের বিপিএল

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:১৭ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০২২

ভারতের আইপিএলের মতো বিশাল আকার, বৃহৎ অবয়বে না হোক; অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশের মতো আকর্ষণীয়, জমজমাট ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি আসরের আয়োজক হতে পারে বাংলাদেশও। সেই চিন্তা থেকে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রায় ১০ বছর আগে (২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি) শুরু হয়েছিল বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি আসরের যাত্রা ।

সময়ের প্রবাহতায় সেই বিপিএলের অষ্টম আসরের পর্দা উঠবে শুক্রবার (২১ জানুয়ারি)। দুপুর দেড়টায় সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশাল আর মেহেদি হাসান মিরাজের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ম্যাচ দিয়ে যাত্রা শুরু হবে এবারের বিপিএলের। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্স ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মিনিস্টার ঢাকা।

ছয় দলের এ আসরের প্লেয়িং কন্ডিশন আগের মতোই। রাউন্ড রবিন লিগে প্রতি দল সবার সঙ্গে দুইবার করে খেলবে। সেখানে হবে ৩০ ম্যাচ। আর ঐ রবিন লিগের শীর্ষ ৪ দল খেলবে প্লে অফ পর্বে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দল মুখোমুখি হবে কোয়ালিফায়ার-১’এ। সেই ম্যাচের জয়ী সোজা চলে যাবে ফাইনালে। তৃতীয় ও চতুর্থ হয়ে প্লে অফে ওঠা দল খেলবে এলিমিনেটর ম্যাচ। কোয়ালিফায়ার-১’র বিজিত দল ও এলিমিনেটরের জয়ী মুখোমুখি হবে কোয়ালিফায়ার-২’এ। ঐ ম্যাচের জয়ী দল হবে দ্বিতীয় ফাইনালিস্ট।

আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় হোম অব ক্রিকেটে হবে ফাইনাল। গাজী টিভি ও টি স্পোর্টস এই আসরের সব কয়টি খেলা সরাসরি দেখাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এবারের বিপিএলের নামকরণও করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু বিপিএল।

তাই টাইটেল স্পন্সর বিবিএস ক্যাবলস ও ওয়াল্টন বিপিএল নামকরণ হয়নি। টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর মানে ক্রিকেট, বাণিজ্য, বিপণন ও বিনোদনের অপরুপ সমাহার। কিন্তু অনেক কারণেই বিপিএল এখনও সেই পরিপূর্ণ প্যাকেজ হয়ে উঠতে পারেনি।

শুরু থেকেই ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে চরম অনিয়ম, অব্যস্থাপনায় দুষ্ট বিপিএল। প্রথম দুই আসরে ভিনদেশি ক্রিকেটাররা মোটামুটি পাওনা পেয়ে গেলেও স্থানীয় ক্রিকেটারদের বড় অংশের পাওনা পেতে উঠেছে নাভিশ্বাস। পরে বিসিবি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধে তৎপর হওয়ায় সে অনিয়ম রোধ হয়েছে।

তারপর সেমিফাইনালিস্ট নির্ধারণে বাইলজ ভঙ্গ, নকআউট পর্বের ৪ দল নির্ধারণে বড় ধরনের ত্রুটিবিচ্যুতি এবং অভিনব সব কাণ্ডকারখানাও ঘটেছে। তবু আগের সাত আসরের অন্তত গোটা তিন আসরে মাঠের ক্রিকেটটা মোটামুটি জমজমাট ছিল।

বেক্সিমকো, বসুন্ধরা ও জেমকন গ্রুপের মতো বড় কর্পোরেট হাউজগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি হওয়ার পর পারিশ্রমিক নিয়ে অনিয়ম ও ক্রিকেটারদের দুর্ভোগ কমেছে অনেক। পাশাপাশি বিসিবিও ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফদের পারিশ্রমিক আদায়ে হয়েছে সোচ্চার। এখন পারিশ্রমিকের টাকাটা বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল তথা বিসিবির হাতে দিতে হয়। তাই ঐ বিড়ম্বনা দূর হয়েছে ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফদের।

পারিশ্রমিক নিয়ে অব্যস্থাপনার অবসান ঘটার পর বিশ্ববরেণ্য তারকা ক্রিকেটারের উপস্থিতিও বাড়ে। এবি ডি ভিলিয়ার্স, স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, রাইলি রুশো, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, কাইরন পোলার্ড, মারলন স্যামুয়েলস, শহিদ আফ্রিদি, শোয়েব মালিক প্রমুখ বিশ্বনন্দিত ক্রিকেটার খেলে গেছেন কয়েকবার।

কিন্তু এবার তারা কেউই নেই। যে কারণে এবারের বিপিএল এর জৌলুস কম। পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধিও বড় প্রতিবন্ধক। দেশে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে। ক্রিকেটারদের কেউ কেউও এরই মধ্যে হয়েছেন আক্রান্ত। খুব স্বাভাবিকভাবেই সময়টা ঠিক এমন বড় ক্রিকেট যজ্ঞের উপযোগী নয়।

আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকও অকপটে স্বীকার করেছেন, করোনার কারণে এবারের বিপিএল আয়োজন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে করোনার চ্যালেঞ্জই শেষ কথা নয়। আরও কিছু নেতিবাচক দিক আছে।

যেমন এবারের বিপিএলে ডিআরএস নেই। মানে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তাদের ভুল-সঠিক নিরুপণের এবং চ্যালেঞ্জ জানানোর কোনো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার থাকছে না এবার। পাশাপাশি বিদেশি আম্পায়ারও নেই। সব খেলা পরিচালনা করবেন দেশি আম্পায়াররা।

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে খেলা পরিচালনার মান নিয়ে আছে রাজ্যের অসন্তুষ্টি। গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের এক ম্যাচে সাকিব আল হাসানের মত বিশ্বমানের ক্রিকেটার আম্পায়ারের দেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে উইকেটে লাথি দিয়ে শিরোনাম হয়েছেন।

এমনিতেই ডিআরএস নেই, তার ওপর দেশি আম্পায়ারদের খেলা পরিচালনা- মাঠের ক্রিকেট কতটা সাজানো-গোছানো ও পরিপাটি হয়? তা নিয়ে সংশয় আছে অনেকেরই।

এর বাইরে শেরে বাংলার উইকেট বরাবরই একটি বাঁধা। হোম অব ক্রিকেটের ধীরগতির, নিচু বাউন্সি ও নির্জীব মরা পিচ রানখরায় ভোগে বেশিরভাগ সময়। অভিযোগ আছে, সিলেটের উইকেটের অবস্থাও নাকি তেমন ভালো নয়। যদি সেটা হয়, সিলেটের উইকেটও যদি রানখরায় ভোগে, তাহলে তো পুরো আয়োজনের আকর্ষণই যাবে কমে।

এতো কাল জানা ছিল, শেরে বাংলায় কম রান উঠলেও চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে তা পুষিয়ে যায়। সেখানে বল ব্যাটে আসে। বাউন্সটাও থাকে মোটামুটি ভাল। ব্যাটসম্যানরা ফ্রি শট খেলতে পারেন। রানও ওঠে।

এবার যদি ঢাকার পাশাপাশি সিলেটেও অমন রান কম হয়, তাহলে কী হবে? করোনার কঠিন বাঁধা, আনুষঙ্গিক ও অত্যাবশকীয় সুযোগ সুবিধায় ঘাটতি, ক্রিকেটারদের করোনা আক্রান্ত হওয়া এবং উইকেটের রহস্যময় আচরণ নিয়েই মাঠে গড়াতে যাচ্ছে এবারের বিপিএল। দেখা যাক শেষটা কেমন হয়?

এআরবি/এসএএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।