ছেলেরা দেখিয়েছে আমরাও পারি: জালাল
জালাল ইউনুস নিজেকে সৌভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। দীর্ঘদিন ক্রিকেটের সঙ্গে নিবিঢ়ভাবে যুক্ত এ সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান বোর্ড পরিচালক, ক্রিকেট অপারেশন্সের নতুন প্রধান হতে না হতেই অর্জিত হলো অভাবনীয় সাফল্য। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কিউইদের টেস্ট হারলো মুমিনুলের দল।
ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল অবশ্য এ গৌরবোজ্জ্বল সাফল্যর ভাগিদার হতে চাননি। তার কথা, ‘আরে না না, আমি তো সবে দায়িত্ব নিয়েছি। সব কৃতিত্ব ক্রিকেটার ও টিম ম্যানেজমেন্টের। তাদেরকে অভিনন্দন। সত্যিই তারা দারুণ খেলে দেশকে এক সোনালী সাফল্য উপহার দিয়েছে।’
দলের বেশিরভাগ সদস্য বয়সে নবীন ও অনভিজ্ঞ। এমন এক দল নিয়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ব্ল্যাক ক্যাপ্সদের বিপক্ষে জেতা, তাও প্রতিদিন প্রতিটি সেশনে ডমিনেট করে- চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। সেজন্যই জালাল তরুণদের কৃতিত্ব দিতে চান বেশি।
টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর দেশের মাটিতে পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ পরাজয়। কয়েকজন সিনিয়র ও অপরিহার্য্য প্লেয়ার দলে নেই। সব মিলিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা ও মাইনাস পয়েন্ট; কিন্তু তরুণরা সে সব প্রতিবন্ধকতা ও মাইনাস পয়েন্ট নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে নিজেদের করণীয় নিয়ে ভেবেছেন।
যার যার কাজটি কত ভালভাবে করা যায়- সে চিন্তাই ছিল। আর তারা সবাই টিম রুলস মেনে এবং টিম ম্যানেজমেন্টের বেঁধে দেয়া লক্ষ্য-পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছিলেন তৎপর। সেটাই ক্রিকেট অপসের নতুন প্রধানের সবচেয়ে ভাল লাগা।
তার কথা, ‘আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে যে, বেশিরভাগ ক্রিকেটারই বয়সে নবীন ও অনভিজ্ঞ। তারপরও তারা পেছন তাকায়নি। নিকট অতীত ও সাম্প্রতিক ব্যর্থতার কথা মাথায় আনেনি। মোটকথা, তাদের চোখ ছিল সামনে। মন ও মাথায় অন্য কিছু ছিল না। শুধু তারা মাঠের কর্মকান্ড নিয়েই মাথা ঘামিয়েছে। নিজের করণীয় কাজগুলো ঠিকমত করার দিকেই মনোযোগী ছিল।’
জালাল টিম ম্যানেজমেন্ট ও ক্রিকেটারদের সমান প্রশংসা করে আরও বলেন, ‘আমার সঙ্গে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের প্রতিদিনই কথা হয়েছে। আমি তার কাছ থেকেই জেনেছি, ব্যাটসম্যানদের বলা হয়েছে উইকেটে পড়ে থাকতে। রান আসুক না আসুক উইকেটে বেশি সময় কাটাও। কী হলো না হলো ১০০ বলে কত রান আসলো, ওসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজের খেলাটা খেলে যাও। রান এক সময় আসবেই। উইকেটে থাকলেই রান আসবে। এই যে ইন্সস্ট্রাকশন ছিল, তারা সবাই সাধ্যমত চেষ্টা করেছে তা মানতে। অনুস্মরণ করতে। দেখেন কেউ তুলে মারেনি। আকাশে বা বাতাসে ভাসিয়ে শটস খেলেনি। তার মানে বোঝা যায় ম্যানেজমেন্টের নির্দেশ ও গেম প্ল্যান তারা ফলো করেছে। উইকেট আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেছে বলেই রেজাল্ট এসেছে। তার মানে বোঝা যাচ্ছে, ছেলেরা যদি চায়, মনে ডিটারমিনেশন থাকে, তাহলে তারা ক্যারি করতে পারে।’
জালাল মনে করেন, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে একটি নতুন সত্যের দেখা মিলেছে। তাহলো, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টেস্টেও ভাল করার সামর্থ্য আছে। সাদমান ইসলাম, নাজমুল শান্ত, মাহমুদুল জয়, মুমিনুল, মুশফিক, লিটন, মিরাজ, ইয়াসির রাব্বি, তাসকিন, এবাদত আর শরিফুলরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ‘আমরাও পারি। আমাদেরও টেস্টে ভালো খেলার সামর্থ্য আছে। আমরাও নিউজিল্যান্ডের মত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে তাদের মাটিতেই শ্রেয়তর দল হিসেবে পূর্ণ প্রাধান্য বজায় রেখে এবং কর্তৃত্ব ফলিয়ে জিততে পারি।’
জালালের শেষ কথা, ‘আসলে লক্ষ্য ও পরিকল্পনা আর টিম ম্যানেজমেন্টের ইন্সস্ট্রাকশন ঠিকমত ফলো করলে এমন সাফল্য ধরা দেয়, দিয়েছে।’
মুমিনুল আর লিটন দাসের উপমা টেনে বিসিবি ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যানের ব্যাখ্যা, ‘আমি জয়ের কথা বলি না। ইয়াং ছেলে হয়তো ৭৮-এ আউট হয়ে গেছে। মুমিনুল আর লিটনের শতরানের হাতছানি ছিল। সুযোগ ছিল। একজন ১২ আর অন্যজন ১৪ রানের জন্য পারেনি। যা হয়ত ওরা আরামেই করতে পারতো। তা হয়নি। তা না হোক। তারা উইকেটে থাকার চেষ্টা করেছে এবং দীর্ঘ সময় ক্রিজে ছিলোও। তার মানে, তারা পারে। আরও যারা ইয়াং ক্রিকেটার আছে তাদেরও অ্যাবিলিটি আছে। এটাই আমাদের প্রাপ্তি।’
এআরবি/আইএইচএস