চ্যাম্পিয়ন গানের সুরে মিশে গেলো ব্রাথওয়েটের নাম

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ
শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ , স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশিত: ১০:৫২ এএম, ১৪ অক্টোবর ২০২১

বিকেলবেলা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নারী ক্রিকেট দল। মাসদেড়েক আগে যুব বিশ্বকাপেও বাজিমাত করেছে অনূর্ধ্ব-১৯ দল। বাকি ছিলো পুরুষ দলের সাফল্য। আর তা হলেই ক্যারিবীয় উন্মাদনায় বুঁদ হবে সারা ক্রিকেট বিশ্ব। হতাশ করেননি ড্যারেন স্যামি, মারলন স্যামুয়েলস, ডোয়াইন ব্রাভো এবং অতি অবশ্যই কার্লোস ব্রাথওয়েট।

কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে নিয়েছিলো স্টেফানি টেলরের দল। একইদিন সন্ধ্যায় পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অসিদের চির প্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের মুখোমুখি ড্যারেন সামির দল।

2016 champion

প্রায় পৌনে চার ঘণ্টার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ধারাভাষ্য কক্ষে বসে স্বদেশি ব্রাথওয়েটের নাম ধরে ইয়ান বিশপের সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘কার্লোস ব্রাথওয়েট! কার্লোস ব্রাথওয়েট!! রিমেম্বার দ্য নেইম। হিস্টোরি ফর ওয়েস্ট ইন্ডিজ!’ ম্যাচের শেষ ওভারে চার বলে চার ছক্কা হাঁকিয়ে নতুন ইতিহাসই লিখেছিলেন ব্রাথওয়েট।

এই ফাইনালের মাসখানেক আগেই মুক্তি পেয়েছিলো ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভোর ‘চ্যাম্পিয়ন’ শীর্ষক গান। ইডেন গার্ডেনসে এই চ্যাম্পিয়নের সুরেই দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উদযাপন সারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিকেলবেলা নারী বিশ্বকাপ জেতা স্টেফানি টেলর, দেয়ান্দ্র ডটিন, আনিসা মোহাম্মদরা।

২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে হওয়া টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসরে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ বাদ দিয়ে ফের ২০১৬ সালে ভারতের মাটিতেও কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে নিজেদের একক শ্রেষ্ঠত্বের জানান দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

Champion

প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ট্রফি সামনে রেখে গ্যাংনাম নাচে মেতেছিলেন গেইল-স্যামি-স্যামুয়েলসরা। পরেরবার অন্যের গানের প্রয়োজন পড়েনি। সতীর্থ ব্রাভোর চ্যাম্পিয়ন গানের সুরে ইডেনের মাঝ পিচেই উদযাপন সারে আমুদে ক্যারিবীয়রা। যেখানে মিশে ছিলো ব্রাথওয়েটের ব্যাটের অবিশ্বাস্য সুর।

বিশ্ব টি-টোয়েন্টির সবশেষ আসরটিতেও ছিলো দুইটি ভাগ। প্রথম রাউন্ডে দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে অংশ নেয় আট দল। সেখান থেকে দুই দল যোগ দেয় আগেই সুপার টেনে শীর্ষ আট দলের সঙ্গে। দুই গ্রুপ থেকে অনুমিতভাবেই সুপার টেনের টিকিট পায় আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ।

Sixes

ধর্মশালায় হওয়া প্রথম রাউন্ডের খেলায় ওমানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকান তামিম ইকবাল। যা এখনও পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরি। আর ওমানের বিপক্ষে পাওয়া সেই জয়টিই টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের পঞ্চম ও শেষ জয়।

এমন নয় যে, সুপার টেনে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিলো বাংলাদেশ। বরং টাইগাররা কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছিলো ভারত ও নিউজিল্যান্ডের। বিশেষ করে ভারতের বিপক্ষে হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ শেষ তিন বলে তিন উইকেট খুইয়ে ১ রানে হেরেছিলো মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। অথচ ম্যাচটি জিততে তিন বল থেকে ২ রান করলেই হতো।

পরে আসরে নিজেদের শেষ ম্যাচে মোস্তাফিজুর রহমানের ৫ উইকেটের সুবাদে কিউইদের মাত্র ১৪৫ রানে আটকে ফেলেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু রান তাড়া করতে নেমে আসরের সর্বনিম্ন ৭০ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। ফলে সুপার টেনে সব ম্যাচ হেরেই বিদায় নিতে হয় ভারত থেকে।

Carlos Brathweight

সেরা দশের লড়াইয়ে চমক অবশ্য ছিলো। স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড থেমেছিলো ১২৬ রানে। ঘরের মাঠে এই লক্ষ্য মামুলিই হওয়ার কথা ছিলো বিরাট কোহলিদের জন্য। কিন্তু মিচেল স্যান্টনারের ঘূর্ণি মায়ায় পড়ে মাত্র ৭৯ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত, হারে ৪৭ রানের ব্যবধানে।

অন্য গ্রুপে সেই আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রীতিমতো চমকে দেয় আফগানিস্তান। প্রথম তিন ম্যাচ জিতে আগেই সেমির টিকিট নিশ্চিত করেছিলো ক্যারিবীয়রা। আফগানদেরকেও তারা বেঁধে ফেলে মাত্র ১২৩ রানে। কিন্তু এই ছোট লক্ষ্যে ১১৭ রানের বেশি করতে পারেননি এভিন লুইস, আন্দ্রে রাসেলরা। ছয় রানের জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করে আফগানিস্তান।

সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ও ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিউজিল্যান্ডকে সহজেই হারায় ইংলিশরা। আগে ব্যাট করা কিউইরা দাঁড় করা ১৫৩ রানের সংগ্রহ। জেসন রয়ের ৪৪ বলে ৭৮ রানের ঝড়ে ১৭ বল আগেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।

Carlos

তবে জমজমাট ছিলো ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেমির লড়াই। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বিরাট কোহলির মাস্টারক্লাস ব্যাটিংয়ে করা ৪৭ বলে ৮৯ রানের সুবাদে ১৯২ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত। তবে এতেও জয় পায়নি তাড়া। লেন্ডল সিমনসের ৫১ বলে ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংসে শেষ ওভারে ম্যাচ জিতে নেয় ক্যারিবীয়রা।

ফাইনালে দেখা হয় এরই মধ্যে একবার করে শিরোপা জিতে রাখা ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ক্যারিবীয়দের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা ছিলো একইদিন বিকেলে নারী দলের ফাইনাল জয়। সেই মাঠেই সন্ধ্যায় শিরোপার লড়াইয়ে আগে ব্যাট করে ইংল্যান্ড পায় ১৫৫ রানের সংগ্রহ।

ক্যারিবীয়দের ফর্ম বিবেচনায় ১৫৬ রানের লক্ষ্য খুব বড় ছিলো না। কিন্তু জো রুট ও ডেভিড উইলির আক্রমণে শুরু থেকেই চাপে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একপর্যায়ে ১৪ ওভারে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৮৬ রান। অর্থাৎ শেষ ছয় ওভারে বাকি থাকে আরও ৭০ রান।

অপরপ্রান্তে আসা যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্ত আগলে খেলতে থাকেন ২০১২ সালের ফাইনালের নায়ক মারলন স্যামুয়েলস। ব্রাভো-ব্রাথওয়েটদের নিয়ে পরের পাঁচ ওভারে তিনি তোলেন ৫১ রান, নিজে তখন অপরাজিত ৬৬ বলে ৮৫ রান নিয়ে।

Gayle

শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন থাকে ১৯ রান। স্ট্রাইকে ব্রাথওয়েট আর বোলিংয়ে আসেন ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। প্রায় অবিশ্বাস্য এ সমীকরণ মেলাতে মাত্র চারটি বল নেন ব্রাথওয়েট। লংঅন আর লংঅফ দিয়ে টানা চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এনে দেন তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ।

একনজরে ২০১৬ বিশ্ব টি-টোয়েন্টি

চ্যাম্পিয়ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
রানার্সআপ: ইংল্যান্ড
সর্বোচ্চ রান: তামিম ইকবাল (২৯৫)
সর্বোচ্চ উইকেট: মোহাম্মদ নবি (১২)
সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ: ইংল্যান্ড (২৩০/৮)
সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ: বাংলাদেশ (৭০)
সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ: তামিম ইকবাল (১০৩*)
ম্যাচে সেরা বোলিং: মোস্তাফিজুর রহমান (২২ রানে ৫ উইকেট)
ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়: মারলন স্যামুয়েলস (৮৫)
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়: বিরাট কোহলি (২৭৩ রান ও ১ উইকেট)

এসএএস/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।