দুই দেশান্তরীর নৈপুণ্যে ফুরোলো ক্রিকেট জনকদের অপেক্ষা

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ
শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ , স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২১

ক্রিকেট খেলাটির আবিষ্কারক কারা? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর পেতে হয়তো আড়াইশ বছর আগে যেতে হবে। তবে সার্বিকভাবে দেড়শ বছর আগে ইংল্যান্ডে খেলাটির পূর্ণাঙ্গ প্রচলন শুরু হওয়ায়, ইংল্যান্ডকেই ধরা হয় ক্রিকেটের জনক হিসেবে। কিন্তু তাদেরই ছিলো না কোনো বৈশ্বিক শিরোপা।

ওয়ানডে ক্রিকেটের বিশ্বকাপ শুরু হয় ১৯৭৫ সাল থেকে আর কুড়ি ওভারের বিশ্ব আসর যাত্রা শুরু করে ২০০৭ সালে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের নয় এবং বিশ্ব টি-টোয়েন্টির দুই আসর কেটে গেলেও, শিরোপার স্বাদ পাওয়া হয়নি ইংলিশদের। এই অপেক্ষার অবসান ঘটে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে।

বিশ্ব টি-টোয়েন্টির তৃতীয় আসরটি বসেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন দ্বীপ গায়ানা, বার্বাডোজ ও সেইন্ট লুসিয়ায়। প্রথম দুই আসরের মতো এবারও অংশ নেয় ১২টি দল। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের আসরে দেখা মেলে আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের। মজার বিষয় হলো, অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিং তখন ১০!

England

সেই অস্ট্রেলিয়াই শেষ পর্যন্ত খেলে ফাইনালে। কিন্তু তাদের শিরোপা স্বপ্ন থমকে যায় ক্রিকেটের জনকদের বিপক্ষে। অসিদের স্বপ্নচূর্ণ করে প্রথমবারের মতো বিশ্ব আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। সেটিও কি না দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভুত দুই ক্রিকেটার কেভিন পিটারসেন ও ক্রেইগ কিয়েসওয়েটারের নৈপুণ্যে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিশ্ব আসর মানেই রোমাঞ্চকর সব ম্যাচ আর অদ্ভুত সব ঘটনা। যার শুরুটা যায় বাংলাদেশ দলকে দিয়েই। এ গ্রুপে টাইগারদের প্রতিপক্ষ ছিলো পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া। এ দুই শক্তিশালী দলের বিপক্ষে গ্রুপের দুই ম্যাচেই জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা জাগিয়েছিলো বাংলাদেশ। শেষপর্যন্ত দুইটি ম্যাচই হেরে যায় হতাশা সঙ্গী করে।

প্রথমে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৭৩ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাটে চড়ে জয়ের পথেই ছিলো টাইগাররা। কিন্তু শেষপর্যন্ত ইনিংস থেমে যায় ১৫১ রানে। আর পরে অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ১৪১ রানে বেঁধে ফেলেও নিজেরা অলআউট হয়ে যায় ১১৪ রানে। ফলে পরপর দুই আসরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায়ঘণ্টা বাজে বাংলাদেশের।

morgan

এই গ্রুপের অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান ম্যাচটিতেও ছিলো দারুণ এক ঘটনা। আগে ব্যাট করা অস্ট্রেলিয়া ১৯ ওভারে যোগ করে ফেলে ১৯১ রান। সেখান থেকে দুইশ ছাড়ানো স্কোরের আশাই ছিলো অসিদের। কিন্তু মোহাম্মদ আমিরের করা শেষ ওভারে একটি রানও নিতে পারেনি তারা, উল্টো হারায় বাকি থাকা পাঁচটি উইকেট। তিন উইকেট নেন আমির, দুইটি হয় রানআউট। ম্যাচটি অবশ্য জেতে অস্ট্রেলিয়াই।

এ দুই দলের সেমিফাইনাল ম্যাচটি ছিলো রোমাঞ্চে ভরপুর। এক গ্রুপ থেকে সুপার এইটে ওঠার পর সেরা চারেও দেখা হয়ে যায় পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার। এবার আগে ব্যাট করে পাকিস্তান পায় ১৯১ রানের বড় সংগ্রহ। জবাবে শেষ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ১৮ রানের।

পাকিস্তানের অধিনায়ক বল তুলে দেন তখনকার সময়ের নামি স্পিনার সাঈদ আজমলের হাতে। শেষ ওভারে স্পিনার পেয়ে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম বল পর্যন্ত যথাক্রমে ৬, ৬, ৪ ও ৬ হাঁকিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন মাইক হাসি, অপরাজিত থাকেন ২৪ বলে ৬০ রান করে অস্ট্রেলিয়া পায় ফাইনালের টিকিট।

england win

এর আগে গ্রুপপর্বেই প্রথমবারের মতো বিশ্ব টি-টোয়েন্টির এক আসরে দেখা মেলে দুই সেঞ্চুরির। প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬০ বলে ১০১ রানের ইনিংস খেলে ভারতের সুরেশ রায়না। ঠিক পরদিন তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেন শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনে, প্রতিপক্ষ ছিলো জিম্বাবুয়ে।

সুপার এইট রাউন্ডে আরও একটি সেঞ্চুরির দেখা মিলতে পারতো জয়াবর্ধনের ব্যাট থেকে। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি অপরাজিত থেকে যান ৫৬ বলে ৯৮ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে। সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাও পায়ে ৫৭ রানের ব্ড় ব্যবধানে জয়।

তবে সেমিফাইনালে গিয়ে আর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে না লঙ্কানরা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের ইনিংস থেমে যায় মাত্র ১২৮ রানে। জবাবে পিটারসেনের ২৬ বলে ৪২ রানের সুবাদে ১৬ ওভারেই ম্যাচ জিতে যায় ইংলিশরা, পেয়ে যায় ফাইনালের টিকিট।

আগের দুই ফাইনালের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবারও প্রথম ইনিংসে রান হয় মাত্র ১৪৭। অস্ট্রেলিয়ার করা এই সংগ্রহকে মামুলি বানিয়েই তিন ওভার হাতে রেখে জেতে ইংল্যান্ড। কিয়েসওয়েটার খেলেন ৪৯ বলে ৬৩ রানের ইনিংস। যার সুবাদে ইংল্যান্ড পায় অধরা বিশ্ব শিরোপার স্বাদ।

একনজরে ২০১০ বিশ্ব টি-টোয়েন্টি

চ্যাম্পিয়ন: ইংল্যান্ড
রানার্সআপ: অস্ট্রেলিয়া
সর্বোচ্চ রান: মাহেলা জয়াবর্ধনে (৩০২)
সর্বোচ্চ উইকেট: ডার্ক ন্যানেস (১৪)
সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ: অস্ট্রেলিয়া (১৯৭/৭)
সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ: আয়ারল্যান্ড (৬৮)
সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ: সুরেশ রায়না (১০১)
ম্যাচে সেরা বোলিং: ডার্ক ন্যানেস (১৮ রানে ৪ উইকেট)
ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়: ক্রেইগ কিয়েসওয়েটার (৬৩ রান)
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়: কেভিন পিটারসেন (২৪৮ রান)

এসএএস/আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।