প্রথম আসরেই ব্লক-বাস্টার বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ
শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ , স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশিত: ১২:১১ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২১

ক্রিস গেইলের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে শুরু আর মিসবাহ উল হকের স্কুপে শ্রিশান্তের ক্যাচ দিয়ে শেষ- মাঝের দুই সপ্তাহে ব্লকবাস্টার এক আসর দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। যা প্রথম আসরেই কেড়ে নিয়েছিলো দর্শকদের মন, উপহার দিয়েছিলো একের পর এক রোমাঞ্চকর ম্যাচ।

২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো খেলা হয়েছিলো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এর আড়াই বছরের মাথায় মাত্র ১৯টি ম্যাচের অভিজ্ঞতা থেকেই বিশ্ব আসর আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। তবে সেটির নাম বিশ্বকাপের বদলে দেয়া হয় আইসিসি বিশ্ব টি-টোয়েন্টি।

২০০৭ সালে ১২ দল নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসে বিশ্ব টি-টোয়েন্টির প্রথম আসর। উদ্বোধনী ম্যাচটি হয় ১১ সেপ্টেম্বর, যেখানে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পাওয়ার হাউজখ্যাত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই প্রথম ম্যাচেই মেলে জমজমাট এক আসরের বার্তা।

কী হয়েছিলো সেই ম্যাচে? প্রথমে ক্রিস গেইলের ৫৭ বলে ১১৭ রানের টর্নেডো ইনিংসে ভর করে ২০৫ রানের পাহাড়ে চড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে ম্যাচ কিন্তু তারা জেতেনি। জবাবে আরেক মারকুটে ব্যাটার হার্শেল গিবসের ৫৫ বলে ৯০ রানে ভর করে মাত্র ১৭.২ ওভারেই ম্যাচ জিতে নেয় প্রোটিয়ারা। সেদিন অতিরিক্ত খাত থেকেই রেকর্ড ২৮ রান পায় তারা।

India

এমন এক উদ্বোধনী ম্যাচের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্ব আসরের জনপ্রিয়তা ও দর্শক চাহিদা নিয়ে আর কারও কোনো সংশয় থাকার সুযোগ ছিলো না। এরপর পুরো আসরজুড়ে একের পর এক চমকে অবাক হয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব, পেয়েছে নাটকীয়তা ও রোমাঞ্চ উপভোগের সুযোগ।

গ্রুপপর্বেই দেখা মেলে দুইটি নাটকীয় ম্যাচের। প্রথমে তখনকার ওয়ানডে বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় জিম্বাবুয়ে। ঠিক পরদিন মোহাম্মদ আশরাফুলের নান্দনিক ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দেয় বাংলাদেশ।

এর চেয়েও রোমাঞ্চকর ছিলো গ্রুপে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচটি। যেখানে মূল ম্যাচে দুই দলই করে সমান ১৪১ রান। ম্যাচ টাই হওয়ায় ফল নির্ধারণের জন্য খালি স্ট্যাম্পে হিট করার 'বোল আউট' নিয়মের দ্বারস্থ হতে হয়। যেখানে পাকিস্তানকে হারিয়ে সুপার এইটের টিকিট পায় ভারত।

এছাড়াও গ্রুপপর্বে দেখা মেলে শ্রীলঙ্কার করা সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ২৬০ রানের। কেনিয়ার বিপক্ষে সেদিন ৩০ চার ও ১১টি ছক্কা হাঁকায় লঙ্কান ব্যাটাররা। পরে কেনিয়া অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৮৮ রানে। ফলে বিশ্বরেকর্ড ১৭২ রানের ব্যবধানে ম্যাচটি জেতে শ্রীলঙ্কা।

সুপার এইটে অনন্য এক রেকর্ডের জন্ম দেন ভারতের অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ১২ বলে করেন ফিফটি। যা কি না এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। সেদিন স্টুয়ার্ট ব্রডের এক ওভারে ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়ে নিজেকে নতুন উচ্চতায় তোলেন যুবরাজ।

Dhoni

তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে সেমিফাইনালেও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৩০ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে ফাইনালে তুলে দেন এ স্পিনিং অলরাউন্ডার। একই দিন প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে পাকিস্তান।

ফলে বিশ্ব টি-টোয়েন্টির প্রথম আসরের ফাইনালে ক্রিকেটপ্রেমীরা পায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ফাইনাল দেখার সুযোগ। যা ছিলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উত্তেজনা ও রোমাঞ্চে ঠাসা। শেষ পর্যন্ত ফাইনাল জিতে বিশ্ব টি-টোয়েন্টির প্রথম আসরের শিরোপা জেতে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন তারুণ্যে ঠাসা ভারতীয় দল।

ম্যাচটিতে আগে ব্যাট করে গৌতম গম্ভীরের ৭৫ রানের ইনিংসের পরও ১৫৭ রানের বেশি করতে পারেনি ভারত। জবাবে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ১৪১ রানেই ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। তবে আশার প্রদীপ হয়ে টিকে ছিলেন গ্রুপের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ফিফটি হাঁকানো মিসবাহ।

শিরোপা জেতার জন্য শেষ ওভারে ১৩ রান প্রয়োজন ছিলো পাকিস্তানের, হাতে উইকেট একটিই। জোগিন্দর শর্মার প্রথম বলটিই ছিলো ওয়াইড, ডট হয় পরের ডেলিভারি। ফুল টস পেয়ে দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকান মিসবাহ। সমীকরণ নেমে আসে ৪ বলে ৬ রানে।

উইকেটে ভালোভাবে সেট হওয়া মিসবাহই তখন ম্যাচ জেতার জন্য ফেবারিট। কিন্তু ফাইন লেগ ফিল্ডারকে ৩০ গজের বৃত্তের ভেতরে দেখে স্কুপ খেলার চিন্তা করেন মিসবাহ। আর সেটিই কাল হয় দলের জন্য। জোগিন্দরের স্লোয়ারে স্কুপ করে ধরা পড়ে যান ফাইন লেগে থাকে শ্রিশান্তের হাতে, অপমৃত্যু ঘটে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ স্বপ্নের আর অবিশ্বাস্য জয়ে প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় ভারত।

একনজরে ২০০৭ বিশ্ব টি-টোয়েন্টি

চ্যাম্পিয়ন: ভারত
রানার্সআপ: পাকিস্তান
সর্বোচ্চ রান: ম্যাথু হেইডেন (২৬৫)
সর্বোচ্চ উইকেট: উমর গুল (১৩)
সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ: শ্রীলঙ্কা (২৬০/৬)
সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ: কেনিয়া (৭৩)
সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ: ক্রিস গেইল (১১৭)
ম্যাচে সেরা বোলিং: মার্ক গিলেস্পি (৭ রানে ৪ উইকেট)
ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়: ইরফান পাঠান (১৬ রানে ৩ উইকেট)
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়: শহিদ আফ্রিদি (৯১ রান ও ১২ উইকেট)

এসএএস/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।