স্টার্কে ভর করে ‘প্রথম জয়ে’র স্বপ্নে বিভোর অস্ট্রেলিয়া
টি-টোয়েন্টি নাকি শুধুই ব্যাটসম্যানদের খেলা। উইকেট থেকে বোলাররা যদি সাহায্য না পান, তবে প্রতিপক্ষ ব্যাটারের যাঁতাকল থেকে বাঁচা বড্ড দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায় বোলারদের জন্য। তবে হাতের পাঁচ আঙুল যেমন সমান নয়, তেমনি এই ফরম্যাটও সবার জন্য এক না।
কেউ কেউ দুর্ভাগাদের দলে থাকতে চান না। বেরিয়ে আসেন সে দল থেকে। সেটা নিজের যোগ্যতা, মেধা, বুদ্ধি আর প্রজ্ঞার মাধ্যমে। তাদেরই একজন মিচেল স্টার্ক। উইকেট যেমনই হোক, বল হাতে গতির ঝড় তুলে ব্যাটসম্যানদের নাভিঃশ্বাস তুলে ফেলাই যেন তার কাজ।
অস্ট্রেলিয়ার ২০১৫ বিশ্বকাপ জেতার পথে বল হতে বড় অবদান রেখেছিলেন স্টার্ক। হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। বিশ্বমঞ্চে সেবার প্রথম আলোড়ন তুললেও, স্টার্কের নাম-খ্যাতি-যশ তো ছড়িয়ে পড়ে আরও আগেই।
লিকলিকে শরীর, তবে বাঁ-বাহুর জোর যেন পাথর ভাঙার সমান। নয়ত ওই হাত থেকে গোলাগুলো বের হয় কিভাবে। বর্তমান বিশ্বে প্রতিনিয়ত ঘণ্টায় যে গুটিকয়েক বোলার ১৪০ প্লাস কিলোমিটার গতিবেগে বল করে যেতে পারেন তাদেরই একজন স্টার্ক। কখনো কখনো তো অনবরত ১৫০ প্লাম গতিতেও ছুড়তে থাকেন বল। তাতে ব্যাটসম্যানরা নাজেহাল না হয়ে যাবে কই!
খেলা নিয়ে ব্রিটিশ সাহিত্যিক জর্জ অরওয়েলের অমর একটা বাণী আছে, ‘খেলা হলো গোলাবারুদহীন যুদ্ধ’। তার সে কথা সত্যি। তবে স্টার্ক খেলায় যুদ্ধ করেন, সেটা গোলাবারুদ নিয়ে। আর তার গোলাবারুদ হলো একেকটি ইয়র্কার, বাউন্সার অথবা গোলারবেগে ছোঁড়া বল। তাতে কখনো ব্যাটসম্যানের স্ট্যাম্প উড়ে যায়। কখনো লেগ বিফোরের ফাঁদে পা দেন কেউ কেউ। কেউ আবার চোখেমুখে না খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন মাঠের কোনো কোণে।
সুচনালগ্ন থেকে ক্রিকেটকে শাসন করে আসা অস্ট্রেলিয়ারও একটা আক্ষেপের জায়গা আছে। আছে ক্ষত। সেটা এই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। পাঁচটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের মালিকরা যে, ছয়টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে জিততে পারেনি একটিতেও। ২০১০ সালে খুব কাছাকাছি পৌঁছেও গিয়েছিল অসিরা। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় দলটির।
সেই বিশ্বকাপে দলের সঙ্গে ছিলেন না স্টার্ক। না থাকলেও বা কি? দেশের হার অনলে পুড়িয়েছে তো তাকেও। ওই ফাইনাল হারের পর অস্ট্রেলিয়া খেলেছে আরও তিনটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যার মধ্যে দুটিতে দলে ছিলেন তিনি। তবে কখনোই সেই আক্ষেপ থেকে অস্ট্রেলিয়াকে উদ্ধারের ত্রাতা হতে পারেননি তিনি।
এবারের বিশ্বকাপ শুরুর আগে আইপিএল খেলেননি স্টার্ক। নিজের সেরাটা জমিয়ে রাখতেই কি-না, তার এ কৌশল। যদি তাই হয়, তবে জমিয়ে রাখা শক্তি দিয়ে অসিদের হয়ে বিশ্বকপের মঞ্চে রাঙাতে চাইবেন এই বাঁ-হাতি পেসার। তাতে স্টার্ক আরও একবার যেমন বিশ্বমঞ্চে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারবেন, অস্ট্রেলিয়াও পারবে পাঁচ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বিশ্ব রাজাও বনতে।
এসএস/আইএইচএস/