লড়াকু কনওয়েতে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন কিউইদের
লড়াই চালিয়ে যাও। হাল ছেড়ো না। এই আপ্তবাক্য মেনেই যেন সাজানো ডেবন কনওয়ের পুরো ক্যারিয়ার। নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের এই ওপেনারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারই মাত্র এক বছরের। অথচ এই সমটুকুন যা যা করেছেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার, তাতে শোরগোল পড়ে গেছে গোটা ক্রিকেট দুনিয়ায়। তার ভেঙে না পড়া, লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ক্রিকেট জীবনী যে কাউকে অনুপ্রাণিত করতে বাধ্য।
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে জন্ম কনওয়ের। যেখান থেকে উঠে এসে একসময় প্রোটিয়াদের হয়ে বিশ্ব মাতিয়েছেন ইয়োহান বোথা, নেইল ম্যাকেঞ্জিরা। এখন মাতাচ্ছেন কুইন্টন ডি কক, কাগিসো রাবাদা, তাবরিজ শামসিরা। তবে কনওয়ের ভাগ্য এত সুপ্রসন্ন ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে গটেং, ডলফিনস এবং হাইভেল্ড লায়নসের হয়ে ৮ বছর ক্রিকেট খেলেও কখনো ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি। তাই বোথা কিংবা ডি ককদের পথ নয়, তিনি ধরলেন জোহানেসবার্গে জন্ম নেয়া আরেক তারকা গ্র্যান্ট ইলিয়টের পথ।
ইলিয়ট ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করতে নিউজিল্যান্ড পাড়ি জমান। ওয়েলিংটনের হয়ে ধারাবাহিক পারফরম করে একটা সময় নাগরিকত্ব নিয়ে কিউইদের জার্সিও গায়ে চাপান। কনওয়েও ঠিক একই পথ ধরে, একইভাবে নিউজিল্যান্ড দলের হয়ে খেলা শুরু করেন। কনওয়ে যেমন দক্ষিণ আফ্রিকায় গটেংয়ের হয়ে খেলেছেন, তেমনি দলটার হয়ে খেলেছেন ইলিয়টও। দুজনের মধ্যে মিল আছে আরও। ইলিয়ট জাতীয় দলে ডাক পান ওয়েলিংটনের হয়ে খেলে। কনওয়েও একই দলের হয়ে পারফর্ম করে নেন নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে।
তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখতে রাখতে কনওয়ের বয়সটা একটু বেশিই হয়ে গেছে কি-না! গেল বছর আইসিসি থেকে নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলার অনুমোদন পাওয়ার সময় তার বয়স ততদিনে ২৯ পেরিয়ে ৩০ ছুঁইছুঁই। অনেকের ক্যারিয়ার যখন এই বয়সে এসে থমকে যায়, তখন শুরু কনওয়ের।
বয়সের কারণে শুরুতেই ঝরে পড়বেন এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে লড়াকু, হাল না ছেড়ে দেয়ার মানসিকতায় যিনি এতদূর আসেন, সে কীভাবে ব্যর্থ হন? হলেন না কনওয়ে। উল্টো কিউইদের হয়ে এত ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করতে লাগলেন যে, তাকে দলে রেখেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলত যাচ্ছে তারা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর তিন টেস্ট, তিন ওয়ানডে আর ১৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন কনওয়ে। সম্ভবত বর্তমান সময়ের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে এই তিন ফরম্যাটেই তার ব্যাটিং গড় ৫৫ এর ওপরে। অবিশ্বাস্য ঠেকলেও, এটাই সত্যি।
সবচেয়ে বড় কথা, ফরম্যাট বুঝে সময়োপযোগী ব্যাটিং করা কনওয়ের সেরা গুণের একটি। এই যেমন টেস্টে ৫০ স্ট্রাইকরেটে একটা ডাবল সেঞ্চুরিতে ৬৩ গড়ে তিনি রান করেছেন ৩৭৯। ডাবল সেঞ্চুরিটা আবার অভিষেক টেস্টেই হাঁকিয়েছিলেন তিনি। তাতে রেকর্ড বইয়ের পাতায়ও উঠে যান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে প্রবীণ অভিষিক্ত হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ডও নিজের নামে করে নেন তিনি।
ওয়ানডে ফরম্যাটে তার স্ট্রাইকরেট ৮৮। ৭৫ গড়ে এক সেঞ্চুরিতে রান ২২৫। টেস্ট, ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টিতেও সাবলীল কনওয়ের ব্যাট। তার ১৫০ এর ওপর স্ট্রাইকরেটই বলে দিচ্ছে, এই ফরম্যাটে কতটা বিধ্বংসী তিনি। মারকুটে ব্যাটিং কনওয়ের পারফরম্যান্সেও ফেলেনি কোনো প্রভাব। ৫৯ গড়ে ৪৭৩ রানই তার সপক্ষে প্রমাণ রাখে।
কনওয়ের এমন আহামরি পারফরম্যান্সই নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের নির্বাচকদের মন কেড়েছে। নয়তো তিন টি-টোয়েন্টি খেলা একটা খেলোয়াড়কে বিশ্বকাপ দলে অন্তর্ভুক্ত করে তারা! বিশেষ করে, দলটা সব সময় যখন অভিজ্ঞদের প্রাধান্য দেয়!
ক্যারিয়ারের শুরু থেকে নিজের সঙ্গে লড়াই করে কনওয়ের এখানে উঠে আসা। সেই অর্জনকে রাঙিয়ে নেয়ার বড় সুযোগ এখন তার সামনে। আইসিসি ইভেন্টে এখন নিউজিল্যান্ড মানেই ফাইনাল। যদিও ২০১৫ ও ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরেছিল কিউইরা। তবে দলে কনওয়ের মতো এক রত্ন পেয়ে, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মতো এখন হয়তো বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নেও বিভোর নিউজিল্যান্ড।
এসএস/আইএইচএস/