তালেবানের কারণে পাকিস্তান যেতে ভয় পাচ্ছে নিউজিল্যান্ড
আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছে তালেবান। অথচ পাকিস্তান সফরে যেতে এখন ভয় পাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। তবে, কিউইরা পুরোপুরি বাতিল করে দেয়নি পাকিস্তান সফর। তারা আগে একটি নিরাপত্ত বিশেষজ্ঞ দলকে পাকিস্তানে পাঠাচ্ছে। সেই দলটি যে রিপোর্ট দেবে, তার ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখবে কিংবা পরিবর্তন করবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড।
২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে দীর্ঘদিন পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ ছিল। গত কয়েকবছর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নিজেদের দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাতে সক্ষম হয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে সফরে নিতে সক্ষম হয়েছে তারা।
এরই ধারাবাহিকতায় আগামী সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ড ও অক্টোবরে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা। দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় পার এই দেশ দুটির পাকিস্তান সফরে যাওয়ার সময়সূচি নির্ধারিত হয়েছে।
কিন্তু বাদ সেধেছে তালেবানদের আফগানিস্তান দখল। আফগানিস্তান যেহেতু পাকিস্তানের প্রতিবেশি দেশ এবং আফগানদের যে কোনো পরিস্থিতির প্রভাব পড়ে পাকিস্তানের ওপর, সে কারণেই হঠাৎ সফর দুটিকে ঘিরে সংশয়ের মেঘ জমেছে। এরই মধ্যে ইসিবি (ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড) জানিয়ে দিয়েছে যে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্মূল্যায়ন করে তারা সফরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। নিউজিল্যান্ডের কয়েকজন খেলোয়াড় তো পাকিস্তান যেতে অনীহাই প্রকাশ করেছেন।
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছে পাকিস্তানে, তার নেতৃত্বে রয়েছেন রেগ ডিকাসন। নিউজিল্যান্ডের কয়েকজন ক্রিকেটার পাকিস্তান যেতে অনীহা প্রকাশের পরই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিউই ক্রিকেট বোর্ড।
১১ সেপ্টেম্বর ইসলামাবাদে পৌঁছার কথা রয়েছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের। সফরে তাদের ৩টি ওয়ানডে এবং ৫টি টি-েটোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে। ম্যাচের ভেন্যুগুলো হচ্ছে ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি এবং লোহোর। ৩ অক্টোবর পর্যন্ত তারা পাকিস্তানে অবস্থান করবে।
নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কারণে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন। তারা এ নিয়ে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং কনাসলট্যান্ট রেগ ডিকাসনের দ্বারস্থ হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে তিনি এবং তার দল সফর করবেন পাকিস্তানে। সেখানে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের জন্য নেয়া নিরাপত্তার পুরো ব্যবস্থা খতিয়ে দেখবেন তারা।
তবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিকাসন নিয়মিত সফরের অংশ হিসেবেই পাকিস্তানে আসবেন। তিনি আইসিসির নির্ধারণ করা নিয়ম অনুসারে এখানকার নিরাপত্তা এবং ক্রিকেট সম্পর্কিত অন্য সব বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবেন। পিসিবি আগের চেয়ে ভালো রিপোর্ট তাকে সরবরাহ করতে পারবে বলে আত্মবিশ্বাসী। এমনকি আফগানিস্তানের চলমান পরিস্থিতি সত্ত্বেও পাকিস্তানে যে নিরাপত্তার কোনো সমস্যা নেই, সেটাই দেখাতে সক্ষম হবো।’
ইংল্যান্ড সফর নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। ইংল্যান্ডের দৈনিক ‘ডেইলি মেইলে’র মতে, আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিয়ে একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই শঙ্কার কারণেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ইসিবির একজন মুখপাত্র বলেন, ‘যে কোনো সফরের জন্য চলমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে হয়। তবে আমাদের পুরুষ ও নারী দলের পাকিস্তান সফর নিয়ে আমরা পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছি।’
আগামী অক্টোবরে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার জন্য ১৬ বছর পর পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা ইংল্যান্ড পুরুষ দলের। ১৩ ও ১৪ অক্টোবর রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচ দুটি হওয়ার কথা। ৯ অক্টোবর পুরুষ দলের সঙ্গেই ইসলামাবাদে নামবে ইংল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলও। একই ভেন্যুতে পাকিস্তান নারী দলের সঙ্গে দুটি টি-টোয়েন্টি ও তিনটি ওয়ানডে খেলবেন ইংলিশ নারীরা। ম্যাচগুলো করাচি ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আয়োজনের কথা ছিল। কিন্তু সেগুলো রাওয়ালপিন্ডিতে সরিয়ে আনা হয়েছে।
আইএইচএস/এমএস