সাকিব ভালো খেললেই শেষ ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ
ভক্তরা ভালবেসে তাকে ডাকেন, 'সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশের প্রাণ।' সেটা কি শুধুই ভালবাসা আর আবেগতাড়িৎ সংলাপ? নাহ! মোটেই তা নয়। এটা কোন বাড়াবাড়িও না। ইতিহাস-পরিসংখ্যান পরিষ্কার সাক্ষী দিচ্ছে, সত্যিই টিম বাংলাদেশের প্রাণ, প্রধান চালিকাশক্তি সাকিব।
সাকিব ভালো খেলেননি, ব্যাট-বলে আলো ছড়াতে পারেননি, এমন ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে খুব কম। সবশেষ উদাহরণ শনিবারের ম্যাচ। যেদিন শেরে বাংলায় চিরচেনা সাকিবের দেখা মেলেনি। ব্যাট হাতে ২৬ বলে ১৫ করা সাকিব, বল হাতে ৪ ওভারে ৫০ রান দিয়ে উইকেট পাননি। আর সে ম্যাচেই বাংলাদেশ হেরেছে অস্ট্রেলিয়ার কাছে।
সমালোচকরা হয়তো বলবেন, আগের তিন ম্যাচের একটিতেও ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হননি সাকিব- কিন্তু তারপরও সব ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। হ্যাঁ এটা সত্য, এ সিরিজে একবারও ম্যাচ সেরার পুরস্কার হাতে ওঠেনি। সোজাসাপটা বললে বলতে হবে, এখনও কোন খেলায় ম্যান অন দ্যা ম্যাচ হননি সাকিব আল হাসান।
কিন্তু তাতে কী! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে এখন পর্যন্ত যে তিন ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ, তার সবকটায় সাকিবের অবদান ছিল প্রচুর। চতুর্থ ম্যাচটি ছাড়া বাকি তিন খেলায়ই সাকিব আলো ছড়িয়েছেন, অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে দলের সাফল্যে কার্যকর অবদান রেখেছেন।
প্রথম ম্যাচে দলের টপ স্কোরার (৩৩ বলে ৩৬ ও ১/২৪) পাশাপাশি একদম নিয়ন্ত্রিত বোলিং। পরের ম্যাচেও আবার একদম মাপা বোলিং (৪ ওভারে ১/২২ ) করে অসিদের ফ্রি স্ট্রোক খেলা থেকে বিরত রাখা এবং ১৭ বলে ২৬ রান করে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে দেয়া।
তৃতীয় ম্যাচেও ১৭ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলে শুরুর ধাক্কা সামলে দেয়া এবং বল হাতে ২২ রানে এক উইকেট শিকার করে অসিদের ১১৭ রানে বেঁধে ফেলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা। অতি সংক্ষেপে, প্রথম তিন খেলায় সাকিবের পরিসংখ্যান ৮৮ রান আর ৩ উইকেট।
ব্যাটিংয়ের সময় সাকিবকে উইকেটে গিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজ করতে হয়েছে। বল হাতে কম রান দিয়ে দরকারের সময় ব্রেকথ্রু এনে প্রতিপক্ষ ব্যাটিং লাইনআপে ভাঙন ধরানোর কাজটিও করে দিতে হয়েছে। মোদ্দা কথা, সাকিব প্রথম তিন ম্যাচে ব্যাট-বল হাতে দলের সেরা অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স করেছেন এবং অসি বধে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
যেখানে বাংলাদেশ দল প্রথম ও তৃতীয় খেলায় যথাক্রমে ১৩১ আর ১২৭ রান করে জিতেছে, সেখানে সাকিবের ঐ ৩৬ আর ২৬ রানই অনেক। আগের তিন ম্যাচে সাকিবের স্ট্রাইকরেট ছিল দুর্দান্ত; প্রথমটিতে ১০৯.০৯ এবং পরের দুইটিতে সমান ১৫২.৯৪ করে।
পরপর দুই ম্যাচে দেড়শর ওপরে স্ট্রাইকরেটে খেলা সাকিব চার নম্বরে ম্যাচে গিয়ে ৫৭.৬৯ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ২৬ বলে ১৫ রান। শুধু ব্যাটিংয়ের কথা বলা কেন, শনিবার চতুর্থ ম্যাচে সাকিব ৪ ওভারে দিয়েছেন ৫০ রান। অথচ আগের তিন ম্যাচে ১২ ওভারে দিয়েছিলেন ৬৮ রান।
ম্যাচের চালচিত্র বলে দেয় সাকিব তার নিজের দ্বিতীয় ও ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ৫ ছক্কা হজমসহ ৩০ রান দিয়ে ফেলায় ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। বাকি তিন ওভারে ২০ রান দিয়ে সাকিব যদি একটি বা দুটি উইকেটের পতন ঘটাতে পারতেন, তাহলেও হয়ত বাংলাদেশের সম্ভাবনা থাকত।
কিন্তু সবার সব দিন সমান যায় না। সাকিবেরও দিনটি ভাল কাটেনি। সাকিব জীবনে কখনও জাতীয় দলের হয়ে ৪ ওভারে ৫০ রান দেননি, শনিবার তা-ই দিয়েছেন। সেই ম্যাচে সাকিব যে ৫৭.৬৯ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন, সেটাও তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কম স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিংয়ের ম্যাচ।
কমপক্ষে ১০ বল খেলা ম্যাচে সাকিবের সবচেয়ে কম স্ট্রাইকরেটের ম্যাচটি পাকিস্তানের বিপক্ষে। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর শেরে বাংলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪ বলে ৭ (৫০.০০ স্ট্রাইকরেট) করেছিলেন সাকিব। আর ১০ বলের বেশি খেলা ম্যাচে শনিবারই সবচেয়ে কম স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন সাকিব।
অর্থাৎ পারফরম্যান্সকে মানদণ্ড ধরলে জাতীয় দলের হয়ে ৭ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি সাকিবের সবচেয়ে অনুজ্জ্বল ম্যাচ। মানে সবচেয়ে খারাপ দিন। আর সাকিবের সবচেয়ে খারাপ দিনে কি বাংলাদেশ জিততে পারে? পারে না, ৭ আগস্টও পারেনি।
এখন জিততে হলে সাকিবের উজ্জ্বল পারফরম্যান্স দরকার বাংলাদেশের। ‘চ্যাম্পিয়ন’ অলরাউন্ডার ব্যাট-বল হাতে জ্বলে উঠলেই হয়তো আবার জয়ের পথ খুঁজে পাবে বাংলাদেশ। আজ (সোমবার) শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আবার ব্যাট-বল হাতে দ্যুতি ছড়িয়ে সাকিব কি পারবেন রিয়াদ বাহিনীকে শেষ ম্যাচ জেতাতে?
এআরবি/এসএএস/এমকেএইচ