আগের চেয়ে এখন ‘ভয়ডরহীন’ বোলিং করি
সেই ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের পর ২ বছর পুরো জাতীয় দলে থাকা হয়নি। তারপর এসে অনেক বোলারেরই ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি খেলা হয়ে গেছে; কিন্তু কামরুল ইসলাম রাব্বির এখনো সাদা বলে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চড়ানো হয়নি।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে শেষ টেস্ট খেলেছেন। তারপর আর সাদা পোশাকে জাতীয় দলের হয়েও মাঠে নামেননি। সবচেয়ে বড় কথা, তারপর প্রায় প্রতি বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ এবং বিপিএলে ভাল বোলিং করলেও সীমিত ওভারের ফরম্যাটে কখনো সুযোগ পাননি।
জাতীয় দলের বাইরে থেকে কেমন আছেন এ মিডিয়াম পেসার? কী করছেন এখন? আবার জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন দেখেন কি না? জাগো নিউজের সাথে আলাপে সে সব প্রশ্নর উত্তরই দিয়েছেন রাব্বি।
জাগো নিউজ : কেমন আছেন?
রাব্বি : এমনিতে ভালই আছি। আল্লাহর রহমতে শারীরিক দিক থেকে কোন সমস্যা নেই। ভালই আছি। তবে সামগ্রিকভাবে খুব ভাল নেই। ভাল বলতে পারি না।
জাগো নিউজ : কেন?
রাব্বি : এই মাঝে মাঝে হতাশা চলে আসে। মন খারাপ থাকে। নিজের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা চলে আসে। নিজ থেকেই মনে হয় কি জানি ফুরিয়ে গেলাম কি না? আবার জাতীয় দলে সুযোগ আসবে কি না? একটা হতাশা চলে আসে মাঝে মাঝে।
জাগো নিউজ : কিন্তু হতাশা আসে কেন? আপনিতো এখনো ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল পারফরমার। এবারের প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেট শিকারী। তা নিয়ে কিছু বলবেন কী?
রাব্বি : আমি এবারের লিগে দ্বিতীয় সর্বাধীক উইকেটশিকারী। সাইফউদ্দীন আমার চেয়ে একটি উইকেট বেশি পেয়েছে। আমার ইকোনমি, গড় এবং স্ট্রাইকরেট বেশ ভাল ছিল।
জাগো নিউজ : প্রিমিয়ার লিগে এমন পারফর্ম করার পর নিজের ওপর আস্থা ফিরে পেয়েছেন কতটা? এখন কী সে হতাশা কেটেছে খানিকটা?
রাব্বি : আলহামদুল্লিল্লাহ। আমি শুধু এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে না, গত কয়েকটি বিপিএলেও ভাল বোলিং করেছি এবং বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি আসর যেটা হয়েছিল, সেখানেও আমি শীর্ষ ৫ উইকেট শিকারীর একজন। তারপর এখানেও সেকেন্ড হায়েস্ট উইকেট টেকার। সৃষ্টি কর্তার অনেক কৃপা।
জাগো নিউজ : এই যে সীমিত ওভারের ফরম্যাটে ধারাবাহিকভাবে ভাল বোলিং করছেন, এতে করে আপনার নিজের বিশ্বাস ও আস্থা বেড়েছে কতটা?
রাব্বি : আমি এখন অনেক কনফিডেন্ট। অনেক নির্ভার। সাহসী। অনেক বেশি ‘ফিয়ারলেস’ ক্রিকেট খেলি। সত্যি বলতে কি, কেউ কেউ হয়ত ভাবতে পারেন- একটু বেশি সাহস নিয়ে কথা বলছি; কিন্তু আসল সত্য হলো দেশ-বিদেশে এখন কোন ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বল করতে আমার একটুকু ভয় লাগে না। মনে দ্বিধা-সংকোচ কাজ করে না।
আগে অনেক সময় কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলতাম কখনো, কখনো। এখন মনে হয় যে কোন সময় যে কোন পরিস্থিতিতে ভাল করতাম।
জাগো নিউজ : আপনিতো অনেকদিন জাতীয় দলে নেই। তাই সেভাবে প্র্যাকটিস করার এবং দেশি-বিদেশি কোচদের সান্নিধ্যে কোচিংয়ের সুযোগ মেলে না। তাহলে বোলিং নিয়ে কার পরামর্শ নেন? আপনি নিজেকে কিভাবে তৈরি করছেন? বোলিং কোচ হিসেবে আপনি কার পরামর্শ নেন?
রাব্বি : আমি মেইনলি গত এক বছরের ওপরে আমাদের জাতীয় দলের সাবেক বাঁ-হাতি পেসার মঞ্জু ভাই (মঞ্জুরুল ইসলাম) এর অধীনে প্র্যাকটিস করি। গত বছর লকডাউনে যখন সব বন্ধ ছিল। তখন সেটা ঢাকার মহাখালি টেক্সটাইল মাঠে। সেখানে কংক্রিটের উইকেট ও ঘাসের ওপরে স্পট বোলিং অনুশীলন করি। মঞ্জুর ভাই আমার বোলিংয়ের ল্যান্ডিং এবং বোলিংয়ের দুর্বল দিকগুলো নিয়ে কাজ করেছেন এবং তার পরামর্শ মেনে চলছি। তিনিই আমাকে হেল্প করেছেন।
আর এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বাবুল স্যার (কোচ মিজানুর রহমান বাবুল) আমাকে নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তার বাসাও মিরপুরে। তিনি আমাকে এবার প্রচুর সময় দিয়েছেন। যেহেতু আমি বাবুল স্যারের টিম প্রাইম দোলেশ্বরের খেলেছি, তাই তার সান্নিধ্যও পেয়েছি প্রচুর।
কিভাবে কোন আঙ্গিকে বোলিং করলে পেস বোলার হিসেবে উন্নতি করা যায়, মঞ্জু ভাই আর বাবুল স্যার আমাকে তা শিখিয়েছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আর একজনের কথা না বললেই নয়। তিনি হলেন আমাদের জাতীয় দলের ট্রেনার তুষার কান্তি হাওলাদার। তিনি আমাকে প্রচুর হেল্প করেছেন। একদম বিনে পয়সায় আমার সাথে কাজ করেছেন। তিনি করোনার ভিতরেও আমাকে জিম করিয়েছেন। রানিং করিয়েছেন। তারমত দেশসেরা ও সিনিয়র মোস্ট ট্রেনারের নিয়মিত সান্নিধ্য পাওয়া অনেক বড়। আমি তার প্রতিও কৃতজ্ঞ।
জাগো নিউজ : জাতীয় দলে ফিরতে কতটা আশাবাদী আপনি।
রাব্বি : ইনশাল্লাহ। আমি হান্ড্রেডে হান্ড্রেড পারসেন্ট কনফিডেন্ট। কারণ আমি বিপিএলে সব বড়বড় আর নামি-দামি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বোলিং করে সাফল্য পেয়েছি এবং ওই আসর খেলেই আমি আস্থা ফিরে পেয়েছি। ক্রিস গেইল, রাইলি রুশো, অ্যান্দ্রে রাসেল ডেভিড মালান- এদের সবাইর বিপক্ষে আমার সাকসেস রেট ভাল।
আমি বিপিএল চারবার গেইলের উইকেট পেয়েছি। এই সাফল্যগুলো আমাকে অনেক কনফিডেন্স দিয়েছে এবং লোকাল ক্রিকেট আমার কাছে ইজি হয়ে গেছে। ব্যাটসম্যানকে রিড করা, ব্যাটসম্যানের দাঁড়ানো, তার মনোভাব- বোঝা সহজ হয়ে গেছে। আমি এটুকু বলতে পারি কোন সময়ে কী বোলিং করলে আমি নিরাপদ থাকতে পারবো, কখন উইকেটের পতন ঘটাতে পারবো- তাও আগের চেয়ে অনেক ভাল জানা হয়ে গেছে।
এআরবি/আইএইচএস