বিদেশ সফরে গেলে ক্লাসের বই সঙ্গে নিয়ে যেতাম : সাকিব

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:২৩ এএম, ২০ জুলাই ২০২১

অডিও শুনুন

আগামী ৬ আগস্ট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেড় দশক পূরণ হবে বাংলাদেশ দলের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। ২০০৬ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ে সফরের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন সাকিব।

অথচ ক্রিকেট খেলা শুরুর দিনগুলোতে কখনও তিনি ভাবেননি, পেশাদার খেলোয়াড় হবেন। খেলাধুলা বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে পড়লেও, সবসময় ক্লাসের পড়ার কথাই ভাবতেন সাকিব। এমনকি বয়সভিত্তিক দলের হয়ে যেকোনো সফরে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন ক্লাসের বই।

এমনকি সাকিবের পরিবার থেকেও জোর দেয়া হতো শিক্ষক, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার দিকে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ২-৩ বছর পর খেলার পরই মূলত এটিকে পেশা হিসেবে নেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন সাকিব। আইপিএলের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের 'আই এম নাইট' অনুষ্ঠানে এসব কথা জানিয়েছেন সাকিব নিজেই।

আই এম নাইট অনুষ্ঠানে দেয়া সাকিবের সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো:

আমি বলছি ২০০১-০২ সালের কথা। তখন বাংলাদেশে ক্রিকেট জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছিল, সবাই খেলাটি পছন্দ করতে থাকে। এর আগেও মানুষ খেলাটা পছন্দ করতো, কিন্তু অত বড় সংখ্যা ছিল না। কিন্তু যখন আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পেলাম, এরপর থেকে ক্রিকেট দিনে দিনে বড় খেলায় পরিণত হলো। অনেকেই ক্রিকেট খেলা শুরু করল।

আমি খেলাটা পছন্দ করতাম তাই খেলতে শুরু করলাম। এতে আমার ভালোবাসা ছিল। এটা আমার জন্য প্যাশন এবং শখের মতো বিষয় ছিল। কিন্তু আমি কখনও ভাবিনি ক্রিকেটকে নিজের পেশা হিসেবে নিবো। আমার মনে হয় না, ২০০০ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের কেউ কোনো খেলাধুলায় ক্যারিয়ার গড়ার কথা চিন্তা করতে পারত।

অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭, ১৯- যেখানেই খেলেছি, আমি ভালো করেছি। তবে আমি কখনও ভাবিনি যে, আমাকে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য ভালো খেলতে হবে। কারণ এটা আমার মাথায়ই ছিল না। কখনও ভাবিইনি যে, আমাকে ক্রিকেটার হতে হবে, বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে।

তাই যখনই আমি বয়সভিত্তিক দলের হয়ে কোনো সফরে যেতাম, সঙ্গে করে আমি ক্লাসের বই নিয়ে যেতাম এবং সেগুলো পড়তাম। কারণ দেশে ফেরার পর আমাকে পরীক্ষা দিতে হবে। আমার বাসা থেকে ফোন করলে শুধু জিজ্ঞেস করত, তুমি আজকে পড়াশোনা করেছ? খাবার খেয়েছ? তারা কখনও জিজ্ঞেস করেনি যে, আমি খেলায় ভালো করেছি কি না।

তো বিষয়টা এমন ছিল যে, আমাকে একজন শিক্ষক, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। এটা ছিল পরিবারের ইচ্ছা। আর আমি শুধু নিজের ক্রিকেট উপভোগ করতাম। এমনকি জাতীয় দলে খেলার পরেও আমি বা আমার পরিবার ভাবতে পারেনি যে, আমি এটাকেই পেশা হিসেবে নিতে পারব। প্রায় ২-৩ বছর খেলার পর আমরা এটি ভাবতে শুরু করি।

আমি এটাও বলব যে, আমাকে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয়নি। ক্রিকেট বলে খেলার চার বছরে আমি কখনও ব্যর্থ হইনি। আই প্রথমবার ক্রিকেট বল হাতে নেই ২০০১ বা ২০০২ সালে। পরে ২০০৬ সালে আমি জাতীয় দলে ডাক পেয়ে যাই। তাই আমার জন্য যাত্রাটা মোটেও বড় ছিল না।

ঐসময় সেরকম আশা-প্রত্যাশাও ছিল না সত্যি বলতে। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের পর একটা প্রত্যাশা শুরু হয় যে, হ্যাঁ এখন বাংলাদেশ দলকে ভালো করতে হবে। আমাকে ভালো খেলতে হবে, দলকে ভালো করতে হবে। তো, তখনই প্রথম আমি প্রত্যাশার বিষয়টা অনুভব করতে শুরু করি।

আমি কখনও এক নম্বর অলরাউন্ডার, ব্যাটসম্যান বা বোলার হওয়ার কথা চিন্তা করিনি। আমি যদি প্রক্রিয়া ঠিক রাখি, তাহলে আমার দলের জন্য ভালো করতে পারব, অবদান রাখতে পারব। র‍্যাংকিংয়ের বিষয়টা নিজেই নিজের খেয়াল রাখবে। আমি কখনও এটা নিয়ে ভাবিনি।

যখন প্রথমবার শুনলাম যে, আমি এক নম্বর অলরাউন্ডার হয়েছি, আমার মনে হচ্ছিল, এটা আবার কী! আমার আসলে ধারণাই ছিল না, এমন কিছু হতে পারে। কিন্তু আমি কখনও ভাবিনি যে, আমাকে সেরা খেলোয়াড় হতে হবে।

তবে সবসময় এটা ভেবেছি যে, আমাকে নিজ দলের সেরা খেলোয়াড় হতে হবে। আমাকে দলের অন্য যে কারও চেয়ে বেশি অবদান রাখতে হবে। যাতে আমরা ম্যাচটা জিততে পারি। তো এখানে ব্যক্তিগত কিছু ছিল না, সবসময় দলের চিন্তাই ছিল।

এসএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।