ঘাসের পিচে ৯ ব্যাটসম্যান ২ পেসার, কম্বিনেশন কি ভোগাবে টাইগারদের?
পুরোনো ঢাকায় একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘দেখাইলো মুরগি, খাওয়াইলো ডাইল।’ যার অর্থ-দেখানো হলো মুরগি আর খাবার সময় পরিবেশন করা হলো ডাল।
হারারে স্পোর্টস ক্লাবের পিচ দেখে ঠিক এ কথাই মনে হচ্ছিল।
ক’দিন আগে এই হারারের তাকাসিংহা স্পোর্টস ক্লাব মাঠে প্র্যাকটিস ম্যাচে ছিল একদম ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেট। যেখানে সাদমান ইসলাম ছাড়া বাংলাদেশের প্রায় সব প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান রান করেছেন। সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, অধিনায়ক মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সবার ব্যাটে ছিল রানের ফলগুধারা।
তা দেখে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো ধরেই নিয়েছিলেন, হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠের পিচও বুঝি অমন ব্যাটিংবান্ধবই হবে। সেই ভাবনা থেকেই বোধ হয় মেহেদি হাসান মিরাজসহ নয়-নয়জন ব্যাটসম্যান নিয়ে টেস্ট খেলতে নামা।
ব্যাটসম্যান বেশি থাকলেই স্কোরবোর্ড মোটাতাজা হবে, বোর্ডে বড়সড় রান যোগ হবে। হারের সম্ভাবনা অনেক কম থাকবে, হয়তো সে ভাবনা থেকেই একাদশে এতগুলো ব্যাটসম্যান নেয়া।
অথচ ইতিহাস জানাচ্ছে, ‘ ব্যাটসম্যানের সংখ্যা-টংখ্যা’ কোনো ব্যাপার না। আসল কথা হলো পারফরমেন্স। ব্যাটসম্যানরা যদি জায়গামত নিজ নিজ কাজ ঠিকমত করতে পারেন, দায়িত্ব নিয়ে ধৈর্য ধরে দীর্ঘ সময় উইকেটে কাটিয়ে লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন, তাহলেই চলে। খুব বেশি সময় পেছনে তাকাতে হবে না।
এই তো সেদিন শ্রীলঙ্কায় প্রথম টেস্টে নির্জীব ও শতভাগ ব্যাটিং উপযোগী কন্ডিশনে মাত্র ৬ জন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতে নেমে ৫৪১ রানের হিমালয় সমান স্কোর গড়েছিল মুমিনুলের দল। নাজমুল হোসেন শান্ত আর অধিনায়ক মুমিনুল হক সেঞ্চুরি করেছিলেন।
অথচ জিম্বাবুয়ে গিয়ে হারারের ঘাসযুক্ত সজীব-তরতাজা পিচে বাংলাদেশ মাঠে নেমে পড়লো ৮ জন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান সাদমান ইসলাম, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে।
ওপরে যে আটজনের নাম বলা হলো, তার প্রথম দুজন ছাড়া বাকি ৬ জনের টেস্ট সেঞ্চুরি আছে। তাদের সাথে থাকা মেহেদি হাসান মিরাজ পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান না হলেও ব্যাট করতে পারেন। তারও আছে টেস্ট শতক।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হারারের সতেজ ও সজীব পিচে তিন জিম্বাবুইয়ান ফাস্টবোলার মুজারাবানি, এনগারাভা আর তিরিপানোর দ্রুতগতি, বাউন্স আর সুইংয়ের মুখে অতগুলো ব্যাটসম্যান নিয়েও কি শেষ রক্ষা হবে? মুমিনুল হকের দল একগাদা ব্যাটসম্যান নিয়ে কী করবে? তার উত্তর দেবে সময়।
তবে এখন পর্যন্ত খবর খুব একটা ভালো না। দুই সেশনে ৩টি করে ৬টি উইকেট হারিয়ে বসেছে বাংলাদেশ। রান উঠেছে ১৭১। অর্থাৎ এখনও দুইশর ঘর ছাড়াতে পারেনি টাইগাররা।
দারুণ বোলিং করছেন জিম্বাবুইয়ান পেসার ব্লেসিং মুজারবানি। এখন পর্যন্ত সাজঘরে পাঠিয়েছেন ৩ টাইগার ব্যাটসম্যানকে। মাত্র ৬ টেস্টেই তার নামের পাশে এর আগেই দু’বার করে ৪ উইকেট আছে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে আবুধাবিতে দ্বিতীয় টেস্টেই ৪৮ রানে ৪টি উইকেট নিয়েছিলেন এ ডানহাতি দ্রুতগতির বোলার। আর পাকিস্তানের বিপক্ষে হারারেতে শেষ দুই টেস্টে ৯ উইকেট পেয়েছেন। বাবর আজমের দলের সাথে একবার ৪ উইকেট (৭৩ রানে) পেয়েছেন। বাকি দুই ইনিংসেও ৩ ও ২ উইকেট শিকার এ ফাস্টবোলার।
সঙ্গে রিচার্ড এনগারাভা, ডোনাল্ড তিরিপানো আর ভিক্টর নিয়াচির পেস আক্রমণ তো আছেই। অর্থাৎ বাংলাদেশকে পেস দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে জিম্বাবুয়ে। এই কৌশলে তারা এখন পর্যন্ত বেশ সফলও। তিন পেসার মিলেই নিয়েছেন ৬ উইকেট।
জিম্বাবুয়ে তাদের কৌশল অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কি তাদের ৯ ব্যাটসম্যান খেলানোর কৌশলকে সঠিক বলে প্রমাণ করতে পারবে? সেটা নির্ভর করছে মাহমুদউল্লাহ-লিটন দাসদের প্রতিরোধ কতদূর এগোয়, তার ওপর।
ওদিকে শুধু ৯ ব্যাটসম্যান দিয়ে দল সাজানোই নয়। যে পিচে জিম্বাবুয়ান ফাস্টবোলাররা দ্রুতগতির সাথে মাঝে মধ্যেই সুইং ও বাড়তি বাউন্স আদায় করে টাইগারদের কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলে দিচ্ছেন, সেখানে বাংলাদেশ দলে দুজন মাত্র পেসার-তাসকিন আহমেদ আর এবাদত হোসেন।
আর স্পেশালিস্ট স্পিনার দুজন-সাকিব আল হাসান আর মেহেদি হাসান মিরাজ। এ উইকেটে দল সাজানোইবা কতটা ঠিক হয়েছে, ম্যাচ যত গড়াবে, ততই বোঝা যাবে তা।
এআরবি/এমএমআর/জেআইএম