অনেক দিন পর আবাহনী-মোহামেডান সমানে সমান
অনেক দিন পর দুই পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী আর মোহামেডান সমানে সমান। এবারের প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের তৃতীয় রাউন্ড শেষে পয়েন্ট সংগ্রহে আকাশী-হলুদ আর সাদা কালোরা সমান অবস্থানে।
তিন ম্যাচ শেষে মুশফিকের আবাহনী আর সাকিবের মোহামেডানের পয়েন্ট সমান ৬ করে। পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান পরিষ্কার করতে নেট রানরেট ধরা হয়েছে। তাতে আবাহনী (১.০২১) এগিয়ে। ০.৮৫০ রানরেট নিয়ে মোহামেডান দ্বিতীয়।
এক সময়ের পরিচিত দৃশ্য ছিল এটা। আবাহনী এক নম্বর, মোহামেডান দুই নম্বর। আবার কখনো বা সাদা-কালোরা সবার ওপর। আকাশী-হলুদরা ঠিক তার পেছনে।
শুধু ক্রিকেট নয়। ’৭০, ’৮০ ও ৯০-এর দশকে ঢাকাই ফুটবল, হকি তথা ঢাকার ক্লাব ক্রীড়াঙ্গনে এটাই ছিল খুব পরিচিত দৃশ্য। লিগ আর যে কোনো টুর্নামেন্ট মানেই ছিল মোহামেডান-আবাহনীর প্রায় একচেটিয়া প্রাধান্য।
৭০ দশকে তৃতীয় শক্তি ছিল আজাদ বয়েজ ক্লাব। ক্রিকেটে ৭০ দশকের শেষভাগে বিমানের আবির্ভাবের পর বাকিরা পিছনে পড়ে যায়। ৮০ ও ৯০ দশকে দুই জায়ান্ট ও জনপ্রিয় আবাহনী-মোহামেডানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে বাংলাদেশ বিমান। ব্রাদার্স, কলাবাগান আর ভিক্টোরিয়াও কাছাকাছিই ছিল।
বর্তমান শতাব্দীর শুরুতেও অব্যাহত ছিল সে ধারা; কিন্তু ২০১০-এরপর থেকে যত সময় গড়িয়েছে, ততই নিষ্প্রভ থেকে নিষ্প্রভতর হয়েছে মোহামেডান। ২০০৮-২০০৯ লিগে খালেদ মাসুদ পাইলটের অধিনায়কত্বে চির প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়ে শেষবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহামেডান।
তারপর আবাহনীর ঘরে লিগ শিরোপা উঠলেও আর লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি সাদা-কালোরা। তবে আবাহনীর সাফল্যর রথ ঠিকই সচল ছিল। এখনো আছে। শেষ তিন লিগের দুটিতেই চাম্পিয়ন হয়েছে আবাহনী।
এবার কোন দল হাসবে শেষ হাসি? তা বলে দেবে সময়। তবে এখন পর্যন্ত ম্যাচ জয়ের হিসেবে বাকিদের চেয়ে এগিয়ে আবাহনী এবং মোহামডান দুই দলই।
আবাহনী যাত্রা শুরু করে পারটেক্সকে ৭ উইকেটে হারিয়ে। এরপর মুশফিক, মোসাদ্দেক, সাইফউদ্দিনরা পরপর হারিয়েছে ওল্ডডিওএইচএস (ডিএল মেথডে ২২ রানে) ও ব্রাদার্স ইউনিয়নকে (৯ উইকেটে) ।
অন্যদিকে মোহামেডান লিগ শুরু করেছিল শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে ৩ উইকেটে হারিয়ে। এরপর সাকিব বাহিনীর কাছে ৬ উইকেটে হারে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব।
সর্বশেষ ৫ মে শনিবার রাতে মোহামেডান ২৭ রানে জিতেছে তামিম-এনামুল হক বিজয় আর মোস্তাফিজের প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে। নাইম শেখ, নাজমুল হাসান শান্ত , মুশফিকুর রহীম, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আফিফ হোসেন ধ্রুব, সাইফউদ্দিন, আরাফাত সানি, তাইজুল, শহিদুল আর মেহেদি হাসান রানাদের গড়া আবাহনী কাগজে কলমে মোহামেডানের চেয়ে সমৃদ্ধ দল।
এছাড়া অধিনায়ক মুশফিকের চওড়া ব্যাট আবাহনীর বড় সম্পদ। শক্তি এবং প্রধান নির্ভরতা। তিন ম্যাচের দুটিতে আবাহনীর জয়ের নায়ক ও রূপকার মুশফিক।
অন্যদিকে টিম পারফরমেন্সই মোহামেডানের মূল শক্তি। মুশফিক যেভাবে একা দল টেনে নিতে পারছেন, সাকিব তা পারেননি। বল হাতে উৎরে গেলেও ব্যাটসম্যান সাকিব এক ম্যাচেও দলকে সেভাবে সার্ভিস দিতে পারেননি। মোহামেডান অধিনায়কের ব্যাট এখনো কথা বলেনি। তবে তরুণ পারভেজ ইমন, বদলি ওপেনার মাহমুদুল হাসান লিমন, ইরফান শুক্কুর আর পেসার তাসকিন, আবু জায়েদ রাহিরা ভাল পারফরম করছেন প্রায় নিয়মিত।
এদিকে আবাহনী আর মোহামেডানের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে প্রাইম দোলেশ্বর। ফরহাদ রেজার দলও কিন্তু তিন ম্যাচেই অপরাজিত। ৩১ মে বিকেএসপিতে ব্রাদার্স ইউনিয়নের সাথে প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টিতে পন্ড হওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়েছে। কিন্তু পরের দুই খেলায় যথাক্রমে খেলাঘর সমাজ কল্যাণকে ১৯ আর গাজী গ্রুপকে ৩৭ রানে হারিয়েছে ফরহাদ রেজা, ইমরানুজ্জামান, সাইফ হাসান, ফজলে মাহমুদ ও মার্শাল আইয়ুবরা।
এদিকে বৃষ্টি সেই শুরুর দিন থেকে মাঝে এসে প্রায় নিয়মিত বাগড়া দিচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। খেলায় বিঘ্নও ঘটছে। এরমধ্যে ১ জুন বিকেএসপিতে ধুয়েমুছে গেছে দুটি ম্যাচ। সেই ম্যাচ দুটির পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে গেছে। এর পরে টানা ৪ দিন শেরে বাংলায় প্রতিদিন তিনটি খেলা হয়েছে এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাউন্ড পুরোই হয়েছে হোম অব ক্রিকেটে।
কাল (সোমবার) থেকে আবার প্রিমিয়ার লিগ ফিরছে বিকেএসপিতে। ৭ জুন সোমবার আবার আগের মত দৈনিক ৬টি করে খেলা। যার ৪টি বিকেএসপির ৩ ও ৪ নম্বর মাঠে। আর দুটি শেরে বাংলায়।
সোমবার সকালে বিকেএসপির দুই মাঠ আর শেরে বাংলায় একসঙ্গে তিন ম্যাচ। বিকেএসপি ৩ নম্বর মাঠে সকাল ৯ টায় আবাহনী খেলবে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির বিপক্ষে।
আর শেরে বাংলায় একই সময়ে মুখোমুখি হবে প্রাইম দোলেশ্বর এবং শাইনপুকুর। বিকেএসপি ৪ নম্বর মাঠে হবে পারটেক্স ও প্রাইম ব্যাংক।
৭ জুন দুপুরে (দেড়টায়) শেরে বাংলায় মোহামেডান খেলবে শেখ জামালের সাথে। একই সময়ে গাজী গ্রুপ আর লিজেন্ডস অফ রুপগঞ্জ ম্যাচ হবে বিকেএসপি ৪ নম্বর মাঠে।
অন্যদিকে বিকেএসপি ৩ নম্বর মাঠে ব্রাদার্স ইউনিয়ন-ওল্ডডিওএইচএস মোকাবিলাও শুরু বেলা দেড়টায়।
এআরবি/আইএইচএস/জিকেএস