লিটন-সৌম্য নয় ওপেনিংয়ে নাইম শেখকে চান ইমরুল
এই তো ১৪ মাস আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচে একজোড়া সেঞ্চুরি করেছেন। শুধু শতরান করাই নয়; নান্দনিকতা, সৃজনশীলতা আর শৈল্পিকতাকে মানদণ্ড ধরলে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অনুপম সুন্দর আর মোহনীয় ইনিংসটি তার। গত বছর ৬ মার্চ সিলেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সে ইনিংসটি উপহার দিয়েছিলেন লিটন দাস।
সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগানের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য সেদিন ঢাকা পড়ে গিয়েছিল লিটনের ১৪৩ বলে ৮ ছক্কা আর ১৬ বাউন্ডারিতে সাজানো ১৭৬ রানের ইনিংসটির কাছে।
সৌন্দর্য এবং নিপুণতায় সেই ইনিংসটি অনন্য। আর সংখ্যাতত্ত্বেও সেই শতকটি অন্য যে কোনো সেঞ্চুরির চেয়ে এগিয়ে। কারণ ওয়ানডেতে সেটাই বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস।
কিন্তু হায়! ২০২০ সালের মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে দুই সেঞ্চুরি (১২৬*, ৯ ও ১৭৬) করার পরই কোথায় যেন হারিয়ে গেছেন লিটন। তারপর আর নিজেকে একবারের জন্য ফিরে পাননি। বলতে গেলে রান করাই ভুলে গেছেন। পরের ৭ ইনিংসে (১৪, ২২, ০, ১৯, ০, ২১, ০) তার মোট রান ৭৬।
যার মধ্যে তিনবার আউট হয়েছেন শূন্যতে। এমন খারাপ ফর্মের পর খুব স্বাভাবিকভাবেই লিটন দাসকে নিয়ে নিয়ে কথাবার্তা, সমালোচনা। তাকে খেলানোর যৌক্তিকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন চারিদিকে।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তো কাল (রোববার) ম্যাচ চালকালীন বলেই ফেলেছেন, লিটন দাস ওপেনিং ম্যাটেরিয়ালই নয়। সে আসলে মিডল অর্ডার এবং তাকে টেস্টের মত ওয়ানডেতেও পাঁচ-ছয় নম্বরে খেলানো উচিত।
আসলে লিটন এখন কোথায় মানানসই? ওপেনিংয়ে নাকি মিডলঅর্ডারে? পরিসংখ্যান বলছে, তার সব কৃতিত্ব, অর্জন আর প্রাপ্তি ওপেনার হিসেবেই। তিন ওয়ানডে সেঞ্চুরির সবকটাই ইনিংসের সূচনাকারী ব্যাটসম্যান হিসেবে। তাহলে কয়েক ম্যাচ খারাপ খেলার কারণে তাকে কেনইবা ‘মিডল অর্ডার’ বলা হচ্ছে?
প্রশ্ন উঠেছে- এ সিরিজে লিটন কি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাকি দুই ম্যাচে ওপেন করবেন? তার বর্তমান ফর্ম বিচারে সেটা কি ঠিক বা যুক্তিযুক্ত হবে? নাকি আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারকে আবারও তামিমের সঙ্গী বানানো হবে?
তামিমের অনেকদিনের সঙ্গী, দল থেকে বাদ পড়া ইমরুল কায়েসের চিন্তা অন্যরকম। না, তিনি নিজেকে এই জায়গায় ফেরানোর দাবি তুলছেন না। বরং এ মুহূর্তে তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে সেরা পছন্দ মনে করছেন তরুণ এক ব্যাটসম্যানকে, যার নাম নাইম শেখ। আজ সোমবার পড়ন্ত বিকেলে জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে ইমরুল কায়েস বলেন, ‘আমার মনে হয় এ মুহূর্তে নাইম শেখকে ট্রাই করা উচিত।’
কেন লিটনের বদলে সৌম্যকে রেখে নাইম শেখকে খেলানোর কথা বলছেন? ইমরুল কায়েসের ব্যাখ্যা, ‘লিটন দাস ভাল ব্যাটসম্যান। তার মেধা নিয়ে আমার কোনো সংশয় নেই। তবে এখন সে ফর্মে নেই। তার আত্মবিশ্বাস তলানিতে। বোঝাই যাচ্ছে, সে নিজে নিজে অনেক চাপ নিয়ে ফেলেছে। যে কারণে ভালো খেলতে পারছে না। রান করাও সম্ভব হচ্ছে না।’
ইমরুলের অনুভব, এখন লিটনকে খেলিয়ে কোনো ইতিবাচক ফল আসবে না। আর সৌম্য সরকারকেও খেলানোর পক্ষে নন জাতীয় দলের অন্যতম সফল এই ওপেনার।
সৌম্য সম্পর্কে ইমরুলের কথা, ‘সেও তো খুব ভালো ফর্মে নেই। আর সৌম্য তো মাঝে বেশ সুযোগও পেয়েছে। কিন্তু ভালো খেলে নিজের অপরিহার্যতার প্রমাণ দিতে পারেনি। কাজেই আমার মনে হয় এ মুহূর্তে তরুণ নাইম শেখই হতে পারে বেস্ট পজিবল অপশন, যাকে তামিমের সাথে ওপেনিংয়ে ট্রাই করা যেতে পারে।’
ইমরুল যোগ করেন, ‘লিটনের ভালো রূপটাও আমরা দেখেছি। খারাপটাও দেখা হলো। এখন বিকল্প পথ খোঁজাই যুক্তিযুক্ত। এখন সৌম্যও যেহেতু ভালো খেলছে না। তাই নাইমই আমার প্রথম পছন্দ। আমার মনে হয় নাইম শেখকে সুযোগ দিয়ে দেখা যেতে পারে।’
তামিমের সঙ্গী হিসেবে টেস্ট আর ওয়ানডেতে তার নিজের অনেকগুলো ভালো ওপেনিং জুটি আছে ইমরুলের। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস আর ইংল্যান্ডের সাথে পর পর দুই ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়ার দুর্লভ কৃতিত্বের মালিক এই বাঁহাতি।
অভিজ্ঞ ইমরুলকে এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রাথমিক ক্যাম্পে ডাকা হয়েছিল। শোনা যাচ্ছিল, ওয়ানডে একাদশে ফেরানো হতে পারে। কিন্তু ৭৪ ওয়ানডে খেলা এই ওপেনারকে মূল দলেই রাখেননি নির্বাচকরা। যা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে।
দেশ বরেণ্য প্রশিক্ষক সাকিব-মুশফিক-তামিমদের গুরু ও বিকেএসপির প্রধান কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম জাগো নিউজের সাথে আলাপে এ নিয়ে রীতিমত হতাশা ও বিস্ময় প্রকাশ করেন। তার মতে, ইমরুলের মতো একজন ব্যাটসম্যানকে এভাবে অপমান করা হয়েছে।
তবে ইমরুল নিজে এ বিষয়ে বাড়তি কোনো মন্তব্য করেননি। আজ জাগো নিউজের সাথে তামিমের ওপেনিং পার্টনার নিয়ে অনেক কথা বললেও নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হননি এই ওপেনার।
তার কথা, ‘আমি নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমাকে নেয়া হয়নি, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রাথমিক দলে ডাক পেলেও মূল দলে জায়গা পাইনি, এমনকি স্ট্যান্ডবাইয়ের তালিকায়ও নাম নেই। বাট নো কমেন্টস।’
এমএমআর/এমকেএইচ