লঙ্কানদের ৩ উইকেট তুলে দিন শেষ করল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৩৩ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২১

ব্যাটিং সহায়ক পিচে উইকেট যেন সোনার হরিণ। তৃতীয় দিনে সেই সোনার হরিণের দেখা বাংলাদেশ পেয়েছে ৩টি। ৩ উইকেটে ২২৯ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে শ্রীলঙ্কা। স্বাগতিকরা পিছিয়ে আছে ৩১২ রানে।

যদিও লঙ্কানরা ভালোই জবাব দিচ্ছে। তবে তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে একদম খারাপ করেননি তাসকিন-তাইজুলরা। তুলে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট। তার আগে দ্বিতীয় সেশনের শেষ বলে একটি উইকেট। সবমিলিয়ে শেষের সময়টায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে টাইগাররা।

বাংলাদেশের পাহাড়সম ৫৪১ রানের জবাবে একটা সময় বিনা উইকেটেই ১১৪ রান করে ফেলেছিল শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে দুইশর আগেই (১৯০ রানে) স্বাগতিকদের ৩ উইকেট তুলে নেয় মুমিনুল হকের দল। অর্থাৎ ৭৬ রানের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরায় তিন ব্যাটসম্যানকে।

চা পানের বিরতির ঠিক আগের বলে শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী জুটিটি ভাঙে বাংলাদেশ। দুর্দান্ত এক ওভারের শেষ বলে হাফসেঞ্চুরিয়ান লাহিরু থিরিমান্নেকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে সাজঘরের ঠিকানা ধরিয়ে দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। পুরো সেশনে বাংলাদেশের সাফল্য ছিল এই উইকেটটিই।

অবশ্য থিরিমান্নে ফিরতে পারতেন আরও আগে। ইনিংসের ৩৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রিভিউ না নেয়ার ভুলে পুড়তে হয়েছে টাইগারদের। তাইজুল ইসলামের করা টার্নিং ডেলিভারিটি আঘাত হানে বাঁহাতি ওপেনার লাহিরু থিরিমান্নের পায়ে। কিন্তু আম্পায়ার আউট দেননি। রিভিউও নেয়নি বাংলাদেশ।

পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, সেই বলটি আঘাত হানত লেগ স্ট্যাম্পে। রিভিউ না নেয়ার হতাশায় ডুবতে হয় বাংলাদেশকে। তখন ৫৮ রানে খেলছিলেন থিরিমান্নে। পরে সেশন শেষ হওয়া পর্যন্ত আর কোনো রান যোগ করতে পারেননি তিনি।

থিরিমান্নে ফেরার পর ওসাদা ফার্নান্ডোও সেট হয়ে গিয়েছিলেন অনেকটা। তাকে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের দুর্দান্ত এক ক্যাচ বানান তাসকিন আহমেদ। লঙ্কান ব্যাটসম্যান তখন ২০ রানে। এরপর বিশের ঘরে পৌঁছে আরও এক ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরেছে স্বাগতিকদের। ২৫ রান করে অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ বোল্ড হয়েছেন তাইজুল ইসলামের এক ঘূর্ণি ডেলিভারিতে।

তবে অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নের ধৈর্যে বাধ দিতে পারেননি টাইগার বোলাররা। লঙ্কান দলপতি আছেন সেঞ্চুরির কাছাকাছি। ২১১ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৮৫ রানে অপরাজিত তিনি। সঙ্গে ২৬ রান নিয়ে ব্যাট করছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা।

এর আগে বাংলাদেশ দল ইনিংস ঘোষণা করে ৭ উইকেট হারিয়ে ৫৪১ রানে। দিনের পঞ্চম ওভারেই দলীয় ৫০০ রান পূরণ করে বাংলাদেশ। এর সঙ্গেই যেন মেলে না হারার নিশ্চয়তা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কোনো দলের ৫০০ রান করা মানেই, ম্যাচের ফলাফল হয় ড্র নয়তো লঙ্কানদের পরাজয়। চলতি ম্যাচের আগে ৫২ বার প্রতিপক্ষকে ৫০০ রান করতে দেখেছে লঙ্কানরা। যেখানে তারা হেরেছে ২৯ ম্যাচে, ড্র হয়েছে বাকি ২৩ ম্যাচ।

আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫৩তমবারের ৫০০ রান করল কোনো দেশ। ম্যাচের গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় ড্র-ই হতে পারে সম্ভাব্য ফলাফল। তবে দারুণ বোলিং করতে পারলে হয়তো ম্যাচ জিতেও নিতে পারে সফরকারি বাংলাদেশ।

প্রথম সেশনের ৩৫ মিনিট বাকি থাকতে ইনিংস ঘোষণা করেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। পরিকল্পনা ছিল মধ্যাহ্ন বিরতির আগে অন্তত ১-২টি উইকেট তুলে নেয়া। সে লক্ষ্যে বিরতির আগে মাত্র ৮ ওভারেই চারজন বোলার ব্যবহার করেছেন মুমিনুল। কিন্তু মেলেনি সফলতা।

পরে দ্বিতীয় সেশনের ২৮ ওভারে এসেছে ১টি উইকেট। তবে এর আগে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি লাহিরু থিরিমান্নে। চা পানের বিরতির ঠিক আগের বলে তিনি আউট হন ৫৮ রানে।

jagonews24

এদিকে আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে ৫২০ রানের কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ দলের হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। তবে এর চেয়ে আরও ২১ রান বেশি করল টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার বোলার-ফিল্ডারদের কঠিন পরীক্ষা নিয়ে ১৭৩ ওভারে ৭ উইকেটের ৫৪১ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক।

আজ (শুক্রবার) সকালে ৪ উইকেটে ৪৭৪ রান নিয়ে খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দিনের ১৮ ওভার ব্যাটিং করে ৩ উইকেট হারিয়ে আরও ৬৭ রান যোগ করতে পেরেছে সফরকারিরা। আজ ফিফটি করেছেন মুশফিকুর রহীম ও লিটন দাস। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৬৮ রান করে।

প্রায় সোয়া দুই দিন ধরে ব্যাট করে ১৭৩ ওভার করা ৫৪১ রানের ইনিংসের মাধ্যমে পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের রেকর্ডবুকে উঠে গেছে বাংলাদেশের নাম। এই মাঠে টেস্ট সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ এখন টাইগারদের। তারা ভেঙেছে ২০১৮ সালে ভারতের করা ৪৮৭ রানের রেকর্ড।

উল্লেখ্য, নিজেদের ইতিহাসে এর চেয়ে বেশি ওভার মাত্র একবারই খেলতে পেরেছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের শ্রীলঙ্কা সফরে গল টেস্টে ১৯৬ ওভার খেলেছিল মুশফিকুর রহীমের দল। সেই ইনিংসে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ৬৩৮ রানের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ।

এমএমআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।