আস্থার প্রতিদান দিয়েছে শান্ত : হাবিবুল বাশার
শুরু করেছিলেন চার বছর আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি ক্রাইস্টচার্চে শুরু হয়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তর টেস্ট ক্যারিয়ার। নিউজিল্যান্ডের কনকনে ঠান্ডা, দমকা আর হাড় কাঁপানো বাতাসে ঘাসের উইকেটে ট্রেন্ট বোল্ট আর সাউদির সামনে ১৯ বছরের এক যুবা। রান করতে পারেননি বেশি। আউট হয়ে গির্য়েছিলেন মাত্র ১৮ রানে।
কিন্তু ওই দুই ফাস্ট বোলারের বোলিং তোড়ের মুখে ৮৫ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ৫৬টি বল খেলে শান্ত বুঝিয়ে দিয়েছিলেন উইকেটে থাকার ধৈর্য্যটা তার আছে। বড় সময় ক্রিজে থাকার টেম্পারামেন্টও আছে; কিন্তু এরপর আর সেভাবে নিজেকে মেলে ধরা সম্ভব হয়নি।
পরে গতবছর ফেব্রুয়ারিতে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এক টেস্টের উভয় ইনিংসে সম্ভাবনা জাগিয়েও যথাক্রমে ৪৪ ও ৩৮ রানে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। অবশেষে ২০২০ সালেই ক্যারিয়ারের চার নম্বর টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকায় প্রথম টেস্ট হাফ সেঞ্চুরিতেই (৭১) থেমে যান শান্ত।
অবশেষে আজ নিজের সপ্তম টেস্টে এসে ক্যারিয়ারের প্রথম শতরানের দেখা মিললো। ক্যান্ডি টেস্টের প্রথম দিন শেষে এ বাঁ-হাতি নটআউট ১২৬ রানে।
কেমন খেললেন শান্ত? এ সেঞ্চুরি তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট কি না? তাকে নিয়ে যে সমালোচনা ও তীর্যক কথাবার্তা হয়েছে, তা কী বন্ধ হবে? শান্তকে যে বার বার সুযোগ দেয়া হয়েছে, হচ্ছিল- সেটা যে এমনি এমনি নয়, আজকের ইনিংসটিই কি তার জবাব?
নাজমুল হোসেন শান্তকে খুব কাছ থেকে দেখেন, জানেন এবং চেনেন- নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন জাগো নিউজের সাথে আলাপে দিয়েছেন তার জবাব।
হাবিবুল বাশার সরাসরি বলেছেন, এ প্রজন্মে শান্তই টপ অর্ডারে নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের আশার প্রদীপ হিসেবে পরিগণিত। যে কোন কারণেই হোক তার নিজেকে মেলে ধরতে একটু সময় লেগেছে। তবে সেটা নতুন হিসেবে খুব বেশি সময় নয়।
বরং হাবিবুল বাশারের অনুভব, শান্ত অনেকের চেয়ে কম সময়েই নিজেকে মেলে ধরে বিদেশের মাটিতে টেস্ট সেঞ্চুরির কৃতিত্ব দেখিয়েছে। বাশারের কথার সারমর্ম হলো, নাজমুল হোসেন শান্ত নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান দিয়েছে।
হাবিুল বাশার সুমন বলেন, ‘আমি খুব খুশি ও সন্তুষ্ট যে শান্ত তার মেধার স্ফুরণ ঘটিয়েছে। দারুন আস্থা, আত্মবিশ্বাস আর ধৈর্য্য নিয়ে খেলে ক্যান্ডিতে সেঞ্চুরি করেছে। আসলে আমাদের চোখে শান্ত সব সময়ই সম্ভাবনাময় পারফরমার। আমাদের পরের প্রজন্মের টপ অর্ডারে শান্তকে আমরা সব সময়ই মনে করেছি ট্যালেন্টেড। সম্ভাবনাময়। সত্যি কথা বলতে কী সাধারণ ভক্ত বৃন্দ ও অনুরাগী মহল যেমনই ভাবুক না কেন, আমরা জানি এবং জানতাম যে শান্ত ভাল প্লেয়ার। তার কোয়ালিটি আছে। সামর্থ্যও আছে।’
‘সে ভাল খেলবে এবং নিজেকে মেলেও ধরবে। তবে একটু সময় নিচ্ছিল। তা নিয়ে কিছু হইচইও হয়েছে। তাও জানি। আমি খুবই খুশি যে অবশেষে শান্ত তার নিজের মেধার স্ফুরণ ঘটিয়েছে। এবং খুব বেশি টেস্ট ম্যাচ কিন্তু সে খেলেনি। ক্যারিয়ারের ৭ নম্বর টেস্টেই শতরান। অথচ তাকে নিয়ে এরই মধ্যে অনেক হইচই শুরু হয়ে গিয়েছিল।’
সুমনের আক্ষেপ, ‘ভক্ত, সমর্থক ও অনুরাগীরা নতুনদের সময় দিতে চান না। বড্ড বেশি তাড়াহুড়ো করেন এবং অল্প সময়েই কারো কাছ থেকে খুব বেশি আশা করে বসেন; কিন্তু আমরা একটা বিষয় মাথায় রাখি না যে, নতুন ক্রিকেটারকে একটু সময় দিতে হয়। তার নিজেকে তৈরি করতে এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথে মানিয়ে নিতে কিছু সময় প্রয়োজন। কিন্তু আমরা সেই সময়টা দিতে চাই না। আজকে শান্ত যদি রান না করতো তাহলে হয়ত অনেক কথা হতো। ওর জন্য নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজটিও ডিফিকাল্ট হয়ে যেত। আসলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থিতু হবার জন্যও ক্রিকেটারদের সময় দেয়া দরকার।’
বাশার যোগ করেন, ‘সবাই ক্যারিয়ারের শুরুতেই সেঞ্চুরি করবে না। করে না। কারো কারো কয়েকটি ম্যাচ লাগে নিজেকে মেলে ধরতে। আমি খুশি ও সন্তুষ্ট যে শান্ত সেই কাজটি করে দেখিয়েছে। তার একটা বড় সড় ইনিংস দরকার ছিল একটি বড় ইনিংস। সে খেলেছে।’
এ সেঞ্চুরিই কী তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট? এমন প্রশ্নের জবাবে সুমন বলেন, ‘এমন নয় এক সেঞ্চুরিতেই শান্ত জাতে উঠে গেছে। তার দায়িত্ব-কর্তব্য সব শেষ হয়ে গেছে। তা নয়। তাকে যেতে হবে অনেকদুর। পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ।’
এআরবি/আইএইচএস/