ব্যাটে ‘জয়বাংলা’ স্টিকার লাগিয়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন রকিবুল
তিনি যোদ্ধা। সত্যিকার মুক্তি সৈনিক। পাক হানাদারদের বিপক্ষে রনাঙ্গনে যুদ্ধ শুরুর আগে ব্যাট হাতে যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন রকিবুল হাসান।
১৯৭১ সালের সেই উত্তাল দিনগুলোয় যখন স্পষ্ট বিভাজন, যখন পিন্ডি না ঢাকা? ঢাকা.. ঢাকা... স্লোগানে মুখরিত বাংলাদেশ। ৬৯’র গণআন্দোলনের পর থেকে ৭০’র শুরু থেকেই যখন উত্তাল চারপাশ, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা..., তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব- যখন এমন ঝাঁঝালো স্লোগানে মুখরিত বাংলাদেশ- ঠিক তখন পাকিস্তানের হয়ে এক বেসরকারি টেস্ট ম্যাচে ‘জয় বাংলা’ স্টিকার লাগিয়ে মাঠে নেমে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনকে বিশ্বে জানান দিয়েছিলেন এবং এর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন রকিবুল হাসান।
বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনে রকিবুল হাসানের ব্যাটে ‘জয়বাংলা’ স্টিকার লাগিয়ে মাঠে নামা বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনে ফেলেছিল অন্যরকম সাড়া। ক্রীড়াবিদদের মাঝে তৈরি হয়েছিল এক অন্যরম প্রাণ চাঞ্চল্য।
সেই রকিবুল হাসান পরবর্তীতে ব্যাট হাতেও ছিলেন অগ্রণী ভূমিকায়। এদেশের ক্রিকেটের দু’ দুটি অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে তার নাম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। থাকবে চিরকাল।
তাই রকিবুল হাসান নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। তার ভেতরে একটা অন্যরকম ভাললাগা আর গর্ব অনুভূত হতেই পারে। খেলোয়াড়ী জীবনে ছিলেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। সে সঙ্গে রকিবুল হাসান হচ্ছেন একমাত্র ব্যাটসম্যান, যিনি বাংলাদেশের হয়ে দেশ ও বিদেশের মাটিতে দু’দুটি বিশেষ কীর্তিরও সাক্ষী। দেশের মাটিতে কোন ভিনদেশি দলের বিপক্ষে প্রথম কোনো ম্যাচে ওপেনার ভূমিকায় ছিলেন রকিবুল।
সময়কাল ১৯৭৬। এমসিসির বিপক্ষে রাজশাহীতে একটি তিনদিনের ম্যাচ খেলেছিল উত্তরাঞ্চল। সেটাই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে কোন বিদেশি দলের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ এবং সেখানে ব্যাট হাতে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নেমেছিলেন রকিবুল হাসান।
তার ঠিক ১০ বছর পর শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশ যেদিন (১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ) প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামে, সে ম্যাচেও নুরুল আবেদিন নোবেলের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে নেমেছিলেন রকিবুল।
এখনো সে স্মৃতি জ্বলজ্বলে তার মনে। জাগো নিউজের সাথে আলাপে সে ম্যাচে ব্যাটিংয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ প্রবণ হয়ে পড়লেন রকিবুল। মানলেন, আমি তখন সেরা ও সোনালী সময়কে পিছনে ফেলে এসেছি। সেই ১৯৬৬-১৯৬৭ মৌসুমে ক্লাস নাইনে পড়া অবস্থায় ঢাকা লিগ খেলতে নেমেছিলাম, তার ২০ বছরের মাথায় যখন এশিয়া কাপ খেলতে শ্রীলঙ্কা যাই, তখন আমার ক্যারিয়ারের সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে।
তারপরও মনে আছে, আমি ইনিংস ওপেন করতে নেমেছিলাম। ইমরান খান তখন দুর্দান্ত ফর্মে। গতি, সুইং, দুই’ই দারুণ। সঙ্গে সুলতান অফ সুইং ওয়াসিম আকরাম, দ্রুত গতির বোলার জাকির খান।
মনে আছে ইমরান আর ওয়াসিম আকরামের কয়েক ওভার কাটিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ফার্স্ট চেঞ্জ বোলার জাকির খানের এক লেট আউটসুইংয়ে আউট হয়ে যাই। বলটি মিডল অফ স্ট্যাম্পের ঠিক এমন এক জায়গায় পিচ করে বেরিয়ে যায়, যে আমার না খেলে উপায় ছিল না। আমি ওয়েল লিফ্ট করার সুযোগ আর সময় পাইনি। বল ব্যাটের ঠিক বাইরের ওপরের অংশ আর গ্লাভস ছুঁয়ে চলে গেল উইকেটরক্ষকের (জুলাকারনাইন) গ্লাভসে। আউট হয়ে যাই মাত্র ৫ রান করে।
রান করতে পারিনি; কিন্তু দেশের হয়ে প্রথম ওয়ানডেতে ওপেন করতে নেমেছিলাম, সে সময়ের অন্যতম বিশ্বসেরা ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে, সেটা অনেক বড় স্মৃতি। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামার স্মৃতি ভোলার নয়। মনের আয়নায় জ্বলজ্বল করছে।
তারও ১০ বছর আগে এমসিসিরি বিপক্ষে উত্তরাঞ্চলের অধিনায়ক ও ওপেনার হিসেবে প্রথম কোন বিদেশি দলের বিপক্ষে ইনিংসে সূচনা করার স্মৃতিও ভাল লাগার এবং গর্বের প্রতীক হয়ে আছে। দেশের হয়ে প্রথম বিদেশী দলের বিপক্ষে আর ওয়ানডে ক্রিকেট দুই ক্ষেত্রে ওপেন করার সৌভাগ্য হয়ত খুব কম ক্রিকেটারের ভাগ্যেই হয়েছে। আমি তাই মনে মনে খুব গর্ব বোধ করি।
রকিবুল হাসান গর্ব অনুভব করতেই পারেন। তার ওয়ানডে ক্যারিয়ার (২ ম্যাচে ১৭ রান, সর্বোচ্চ ১২) মোটেই সমৃদ্ধ নয়। তবে শুধু ওয়ানডে পরিসংখ্যান দিয়ে রকিবুল হাসানকে বিচার করলে তার ব্যাটিং প্রতিভার প্রকৃত মূল্যায়ন হবে না। এখনকার প্রজন্মের হয়তো জানাই নেই, সত্তরের দশকে রকিবুল হাসানকে ধরা হতো দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে।
ষাটের দশকের একদম শেষ ভাগ থেকে সত্তরের পুরো সময় এবং আশির দশকের প্রথমভাগ পর্যন্ত যারা ঢাকা তথা দেশের ক্রিকেট নিয়মিতভাবে অনুস্মরণ করতেন তাদের প্রায় সবাই একমত, রকিবুল হাসান তখনকার সময়ের অন্যতম সেরা, দক্ষ উইলোবাজ।
তার খেলা দেখা সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন, টেকনিকের দিক দিয়ে দেশের সব সময়ের অন্যতম পরিপাটি ব্যাটিং শৈলির অধিকারী ছিলেন রকিবুল। গাণিতিক ব্যাটিং বা ব্যাকরণ মেনে খেলায় তার ছিল বিশেষ দক্ষতা। ডিফেন্স ছিল নিখুঁত। ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক ছিল সামান্যই। আর কভার ড্রাইভ, স্কোয়ার ড্রাইভ, স্কোয়ার কাট, পুল-হুক খেলতেন অবলীলায়। তার কোমর বাঁকিয়ে স্কোয়ার ড্রাইভ আর স্কোয়ার কাট ছিল দৃষ্টি নন্দন।
১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ যখন প্রথম এশিয়া খেলতে যায়, রকিবুল হাসান তখন ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় ঢাকা মোহামেডানের অধিনায়ক। মোহামেডান তখন ঢাকাই ক্রিকেটের অন্যতম শীর্ষ শক্তিও বটে। সত্তরের শেষভাগ থেকে আশির দশকের মাঝামাঝি সময় রকিবুল ছিলেন সাদা কালোদের ক্যাপ্টেন।
মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, আজহার হোসেন শান্টু, জাহিদ রাজ্জাক মাসুম, শহিদুর রহমান প্রমুখ ক্রিকেটার তার অধীনেই মোহামেডানে খেলেছেন। শামিম কবিরের পর রকিবুল হাসানই বাংলাদেশ জাতীয় দলের (দ্বিতীয়) অধিনায়ক। ১৯৭৮-৭৯’তে শ্রীলঙ্কার বাংলাদেশ সফরে রকিবুল ছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। আশির দশকের শেষভাগে তার নেতৃত্বেই পশ্চিমবঙ্গ সফরে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
তারও আগে ঢাকাই ক্রিকেটে তার যাত্রা শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী ও অভিজাত ক্রিকেট ক্লাব আজাদ বয়েজে। রকিবুল তখন ১৬ বছরের কিশোর। পড়তেন দেশের অন্যতম সেরা ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে নবম শ্রেণীতে। সে অবস্থায় আজাদ বয়েজের হয়ে ঢাকা লিগ খেলতে শুরু করেন রকিবুল।
সেটা ১৯৬৬-১৯৬৭’র কথা। স্বাধীনতার পর রকিবুল আজাদ বয়েজে এক বছর খেলে চলে আসেন ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিংয়ে। ১৯৭৫ সালে ভিক্টোরিয়ার প্রথম ঢাকা লিগ বিজয়ী দলের অধিনায়কও ছিলেন রকিবুল। ভিক্টোরিয়ার হয়ে ওই বছর তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ও স্মরণীয় ইনিংস খেলেন।
সেটা ছিল তিন দিনের ম্যাচ। আবাহনীর এক দ্রুত গতির বোলারের বল মুখে লেগে চার-পাঁচটি সেলাই দিতে হয়। সেই সেলাই না কেটেই অসহনীয় যন্ত্রনা নিয়ে খেলতে নেমে ফাইনালে মোহামেডানের বিপক্ষে ১৪৩ রানের দারুণ এক ইনিংস উপহার দেন রকিবুল। তার চোখে সেটাই তার স্মরণীয় ইনিংস।
ওই ইনিংসের মূল্যায়ন করতে গিয়ে রকিবুল বলেন, ‘এখন তো কত সফটি মেজার্স বেরিয়ে গেছে। অ্যান্টিবায়োটিক আর ব্যাথানাশক ট্যাবলেটও বেরিয়েছে; কিন্তু ৭৪ সালে এসবের কিছুই ছিল না। হেলমেট ছিল না। তার মধ্যে ঠিক ৩৮ ঘন্টা আগে বল লেগে মুখে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছিলাম। মুখে চার পাঁচটি সেলাই লেগেছিল। তা নিয়ে দু’দিনের মধ্যে মাঠে নামা এবং সাহস নিয়ে খেলে সেঞ্চুরি করা সহজ ছিল না। নিজের গর্ব করছি না, আমি ওই ইনজুরি নিয়ে খেলেও দারুণ ব্যাটিং করে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলাম। আমার মনে এখনো তা দাগ কেটে আছে। জীবনে অনেক সেঞ্চুরি আছে। গুনে বলা কঠিন। তবে সব দিক বিবেচনায় ওই ইনিংসটাই সেরা।’
প্রথম ওয়ানডে আর কোন ভিনদেশি দলের বিপক্ষে শুধু ওপেন করার দূর্লভ কৃতিত্বের অধিকারী হওয়াই শুধু নয়, ভাগ্য ভাল থাকলে রকিবুল হাসান কোন ভিনদেশি দলের বিপক্ষে দেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ানও হয়ে যেতে পারতেন।
সেটা সম্ভবত ১৯৭৯-৮০ সালের ঘটনা। এমসিসির বিপক্ষে চট্টগ্রামে তিনদিনের ম্যাচে দারুণ আস্থা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলে শতরানের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন রকিবুল; কিন্তু বৃষ্টি এসে বাদ সাধে। ৭৮ রানে অপরাজিত রকিবুলের আক্ষেপ, তখন তো ভাল মানের পিচ কভার, সুপার সপার ও বৃষ্টি ভেজা মাঠ, পিচ পরিচর্য্যার আধুনিক সরঞ্জাম ছিল না।
তাই একটু বৃষ্টিতেই খেলা পণ্ড হয়ে যেত। আমার এখনো আফসোস হয়, চট্টগ্রামে খুব ভাল খেলছিলাম আমি। শতভাগ আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। যে বল যেখানে খেলতে চেয়েছি, সেখানেই খেলতে পারছিলাম। শতরানের গন্ধ নাকে এসে লাগছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ২২ রানের আফসোস অনুশোচনা থেকেই যায়। আছে এখনো।
ক্লাব ক্রিকেটে আজাদ বয়েজ, ভিক্টোরিয়া হয়ে ১৯৭৭ সালে চলে আসেন মোহামেডানে। খেলেন প্রায় একটানা একযুগ। প্রসঙ্গতঃ ১৯৭৯, ১৯৮২ আর ১৯৮৬ সালে দেশের হয়ে তিন তিনটি আইসিসি ট্রফি খেলেছেন রকিবুল। তখন তিনি মোহামেডানে। ১৯৮৬ সালে আইসিসি ট্রফি আর ভারতের পশ্চিম বাংলা দলের সাথে খেলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন।
স্বাধীনতার পর থেকে আশির দশকের শুরু পর্যন্ত- টানা ১০টি মৌসুম ঢাকা লিগ, দামাল সামার, দামাল স্মৃতি, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস ক্রিকেট আর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ মিলে গড়ে এক থেকে দুটি সেঞ্চুরি আছে তার। তবে এর মধ্যে দুটি শতরানের কথা এখনো খুব বেশি মনে পড়ে রকিবুলের।
এর একটি ক্লাব ক্রিকেটে। অন্যটি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে (তখন জাতীয় লিগ ছিল না। জেলা দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ হতো)। প্রথম শতকটির সাথে জড়িয়ে আছে প্রয়াত পিতা সালাউদ্দীন সাহেবের স্মৃতি। পিতা ছিলেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ডিএসপি।
১৯৭৭-৭৮’র ঘটনা। রকিবুল তখন সবে ভিক্টোরিয়া থেকে মোহামেডানে নাম লিখেছেন। খেলা ছিল তখনকার আউটার স্টেডিয়ামে (২ নম্বর মাঠে)। প্রতিপক্ষ ছিল উদিতি। বাবা অসুস্থ। দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত। দিনটি ছিল পবিত্র হজ্বের দিন। তার মা পারিবারিক কারণে গ্রামের বাড়িতে। প্রথম সন্তান সাজিদ হাসান ছোট।
হঠাৎ তার বাবার জ্বর চলে আসে। রকিবুল খেলবেন কি খেলবেন না দোটানায় ছিলেন। তার বাবাই এক সময় ডেকে বললেন, নাহ তুমি যাও, খেলো এবং দেখো ভাল খেলবা। রকিবুল দুরু দুরু বুকে মাঠে গেলেন। খেললেন এবং দারুণ শতরান হাঁকালেন। তার ভাষায়, সত্যি বাবার দোয়া নিয়ে খেলেছি বলেই কি না জানি না, আমি দারুণ খেললাম এবং শতরান করলাম। শেষ পর্যন্ত ১৩৮ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়লাম। আমাকে ক্লাব থেকে সেঞ্চুরির জন্য ৫০০ টাকা পুরস্কার দেয়া হলো।
১৯৭৭ সালে ৫০০ টাকা অনেক বেশি। ওই রাতে খেলা শেষে আমি আর মোহামেডান ক্লাবে যাইনি। মাঠ থেকে সোজা জয়ীর বেশে শ্যামবাজারস্থ বাসায় চলে যাই। এখনো মনে আছে, আমি সেই শতরান করার কথা আব্বাকে বলতে পেরেছিলাম। তিনি সে শতরানের কথা শুনে সেই রাতেই চলে যান পরপারে।
এখনো মনে আছে সেই সেঞ্চুরি করে মোহামেডান ক্লাব থেকে পাওয়া ৫০০ টাকা দিয়েই জুরাইন কবরস্তানে জায়গা কিনে আব্বার কবর দিয়েছিলাম। এ স্মৃতি ভোলার নয়। ভুলবো না কোনদিন।
আরেকটি বড় ইনিংসের কথা না বললেই নয়। সেটাও আশির দশকের শুরুতে। আমি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের হয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে বগুড়া জেলার বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি (২১৪) করেছিলাম। সেটা ছিল ধানমন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
১৯৯০ সালে ছেলে সাজিদ হাসানকে সঙ্গে নিয়ে ভিক্টোরিয়ার হয়ে ওপেন করতে নেমে আবার শিরোনামে উঠে আসেন। ঢাকা লিগে তো নয়ই, বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসের প্রতিযোগিতামূলক আসরে পিতা-পুত্রের একসাথে ইনিংস ওপেন করার রেকর্ড খুব বিরল। ১৯৯০ সালে প্রথম বিভাগ লিগে ভিক্টোরিয়ার হয়ে পিতা রকিবুল আর পুত্র সাজিদ হাসানের ব্যাট হাতে ইনিংসের ওপেন করার দুর্লভ ঘটনা ক্রিকেট অঙ্গনে রীতিমত সাড়া পড়ে গিয়েছিল। সে বছরই ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেন রকিবুল।
ক্রিকেট ছেড়ে জড়িয়ে পড়েন ব্যবস্থাপনায়। দেশে ও বিদেশে জাতীয় দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন বেশ কয়েকবার। ১৯৯৫ সালে শারজায় এশিয়া কাপে রকিবুল হাসান ছিলেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার। জাতীয় দলের নির্বাচক হিসেবে কাজ করেছেন। প্রধান নির্বাচকের গুরু দায়িত্বও পালন করেছেন।
এছাড়া বিভিন্ন সময় বিসিবির গেম ডেভোলপমেন্ট ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির উচ্চ পদেও কাজ করেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্রিকেটের নিয়ম, আইন-কানুন ও খুঁটি-নাটি সুক্ষ্ম বিষয়ে রকিবুল হাসানের জানাশোনা প্রচুর। বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার, কোচ ও সংগঠকদের মধ্যে ক্রিকেটের আইন, কানুন এবং ক্রিকেটীয় আচার-আচরণ জানার ক্ষেত্রে রকিবুল বরাবরই অগ্রগণ্য।
মনে করা তিনি বাংলাদেশে এখনও ওসব বিষয়ে সবার চেয়ে ভাল জানেন, খুব ভাল বোঝেনও। এ কারণেই তিনি বাংলাদেশের ম্যাচ রেফারিদেরও অগ্রদূত। দেশে প্রথম ম্যাচ রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেনর এ বরেণ্য ক্রিকেটার। এখন তিনি বিসিবির প্রধান ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করছেন। সাথে ক্রিকেট এক্সপার্ট হিসেবে কলাম লিখার কাজও করছেন।
সফল ক্রিকেটার, দক্ষ ও মেধাবি ওপেনার এবং তীক্ষ্ন ক্রিকেট বুদ্ধির অধিকারী রকিবুল ব্যক্তি জীবনেও সফল। দুই পুত্র সাজিদ হাসান ও রাজিব হাসান ডন।
ডন দেশেই সু-প্রতিষ্ঠিত। ডিএইচএলের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ। বড় ছেলে ও সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার সাজিদ হাসান যুক্তরাষ্ট্রে চাকুররী ক্ষেত্রে সু প্রতিষ্ঠিত হয়ে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন। পিতার মত অত পরিপাটি ব্যাটিং শৈলির অধিকারী আর দেশ বরেণ্য উইলোবাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারলেও বড় ছেলে সাজিদও খুব পিছিয়ে ছিলেন না।
বিকেএসপির ছাত্র সাজিদের ব্যাটিং স্টাইল, টেকনিক ও টেম্পরামেন্টেও ছিল অমিত সম্ভাবনা। কিন্তু অতি অল্প বয়সে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর আর সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি সাজিদ। মাত্র ১৯ বছর বয়সে ১৯৯৪ সালে কেনিয়ায় আইসিসি ট্রফি স্কোয়াডে ছিলেন তিনি। তবে অনেকেরই ধারনা সাজিদের সত্যিকার প্রতিভার সত্যিকার স্ফুরণ ঘটেনি।
এআরবি/আইএইচএস/এমকেএইচ