দুটি অনন্য কীর্তি সঙ্গে নিয়ে অবসরে যাচ্ছেন শাহরিয়ার নাফীস

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৩৪ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন প্রায় ৮ বছর আগে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে জিম্বাবুয়ে সফরের প্রথম টেস্টে করেছিলেন ২৯ ও ১১ রান। যে কারণে বাদ পড়ে যান দ্বিতীয় টেস্ট থেকে। এরপর আর আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে নামা হয়নি বাঁহাতি টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার নাফীসের। সেটিই হয়ে আছে তার ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

মাঝের ৮ বছরে জাতীয় দলে ফেরার প্রাণপন চেষ্টা করেছেন নাফীস। ঘরোয়া ক্রিকেটেও প্রমাণ দিয়েছেন নিজের সামর্থ্যের। তবে আর কখনই নাফিসের জন্য খোলেনি জাতীয় দলের দরজা। বেশ কয়েকবার সম্ভাবনা দেখা দিলেও জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব আর করা হয়নি তার।

দীর্ঘ ৮ বছর দলের বাইরে থাকার আক্ষেপ নিয়েই আজ (শনিবার) সবধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত জানালেন তিনি। তবে প্রায় দেড় দশক আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুইটি অনন্য কীর্তি করে দেখিয়েছেন নাফীস, যা এখনও পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ দলের অন্য কোনো ক্রিকেটার। নাফীসের ক্যারিয়ারের বিজ্ঞাপনই বলা চলে ২০০৬ সালের সে দুই কীর্তিকে।

প্রথমটি ২০০৬ সালের এপ্রিলে, ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের ঘটনা। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে তখনকার পূর্ণশক্তির অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ফিফটি করেন হাবিবুল বাশার ও রাজিন সালেহ। তাদের ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি ওপেনার শাহরিয়ার নাফীস।

NAFFES-2.jpg

বাংলা নববর্ষের বাতাবরণে শুরু হওয়া ম্যাচটিতে নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ব্যাটিংই করেছিলেন নাফীস। খেলা লাল বলের টেস্ট ক্রিকেট হলেও, রীতিমতো ওভারপ্রতি ছয় রান করে তুলছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের ২৬তম ওভারেই পূরণ করে ফেলেছিল দলীয় ১৫০ রান। এর পূর্ণ কৃতিত্ব নাফীসের। যিনি ব্রেট লি, জেসন গিলেস্পি, শেন ওয়ার্নদের বিপক্ষে খেলেছেন সাবলীল ব্যাটে, রান করেছেন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।

তখন ফর্মের তুঙ্গে ইতিহাসের অন্যতম বোলার শেন ওয়ার্ন। তার বিপক্ষে খেলতে কোনো সমস্যাই হয়নি নাফীসের। কখনও সুইপ, কখনও ড্রাইভ, আবার কখনও আলতো ছোঁয়ায় বল সীমানাছাড়া করার কাজ খুব সহজেই করেন তিনি। ব্যক্তিগত ফিফটি করতে নাফিস খেলেন ৫৯ বল, যেখানে ছিল ৯টি চারের মার। পরে সেঞ্চুরি করতে সবমিলিয়ে নেন ১৩১ বল, চার মারেন আরও সাতটি।

দলীয় সংগ্রহ ২৬৫ রানে নিয়ে আরেক লেগস্পিনার স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান নাফীস। ততক্ষণে তার নামের পাশে ১৮৯ বলে ১৯ চারের মারে ১৩৮ রানের ইনিংস। তার এই ইনিংসের ১০টি চারই ছিল ওয়ার্নের বলে। এছাড়া ব্রেট লি-গিলেস্পির বিপক্ষে মারেন ৩টি করে চার। নিঃসন্দেহে দেশের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা সেঞ্চুরি নাফিসের এই ইনিংস।

নাফিসের এই সেঞ্চুরির দীর্ঘ ১৫ বছর পরেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে আর কেউই টেস্ট ক্রিকেটে তিন অঙ্কের দেখা পাননি। ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের সেঞ্চুরি রয়েছে দুইটি। কিন্তু সাদা পোশাকের টেস্টে নাফীসই হয়ে আছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান। সেই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও ৭৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন বাঁহাতি এই ড্যাশিং ওপেনার।

শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানই নন তিনি, ওয়ানডে ক্রিকেটে এক বছরে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি ও একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ১ হাজার রান করা ব্যাটসম্যানের নামও নাফীস। স্বপ্নের মতো কাটানো ২০০৬ সালে ৩ সেঞ্চুরিতে ১০৩৩ রান করেছিলেন তিনি।

এটা ওয়ানডে তথা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কোনো এক ফরম্যাটে এক বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এক হাজার বা তার বেশি রান করার একমাত্র নজির। টেস্ট ও ওয়ানডেতে ভিন্ন ভিন্ন বছরে ৮০০'র বেশি রান করেছেন ইমরুল কায়েস, তামিম ইকবালরা। কিন্তু কেউই হাজারের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। এ দুটি কীর্তি নিজের নামের পাশে রেখেই আজ (শনিবার) আনুষ্ঠানিক অবসর নিলেন শাহরিয়ার নাফীস।

এসএএস/এমএমআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।