দেশে ফিরেই বাবার কবর জিয়ারতে সিরাজ
বাবা, মাথার ওপর ছায়া। যার নেই সেই জানে, সেই ছায়া হারানোর বেদনা। মোহাম্মদ সিরাজের সেই বেদনাটা আরও বেশি। যেই বাবা স্বপ্ন দেখতেন, ছেলে বড় ক্রিকেটার হবে। সেই বাবাকেই যে শেষবারের মতো দেখতে পেলেন না!
সিরাজের বাবা ছিলেন গরিব অটোচালক। তার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় ক্রিকেটার হবে, ভারতের হয়ে খেলবে। সেই স্বপ্নের পথ খুঁজে দিতে প্রতিদিন বাবা ৭০ টাকা করে দিতেন সিরাজকে। প্র্যাকটিসে যেতে-আসতে খরচ হতো ৬০ টাকা। কি কষ্টের ছিল সেই দিনগুলো!
অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতের স্কোয়াডে ছিলেন বদলি বোলার হিসেবে। সুযোগ হয়তো নাও মিলতে পারতো। কিন্তু বাবার দোয়া তো সঙ্গেই ছিল, দলের সিনিয়র বোলারদের একের পর এক ইনজুরিতে সিরাজের কপাল খুলল।
এদিকে ঘটে গেল আরেক ঘটনা। যেই বাবার স্বপ্নপূরণ করে টেস্টের সাদা জার্সিটা গায়ে জড়ালেন, সেই বাবার মৃত্যু সংবাদ সিরাজ পেলেন অস্ট্রেলিয়ায় বসেই। নিয়তি বোধহয় একেই বলে! সিরাজ বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে পারলেন না। সিরিজের তৃতীয় টেস্ট শুরুর সময় মাঠে যখন জাতীয় সংগীত বাজছিল, চোখের জল আর বাঁধ মানেনি। বাবা নেই, ভাবতেই বারবার বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠছিল সিরাজের।
কিন্তু সিরাজ সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে নিলেন। দারুণ পারফরম্যান্স দেখালেন। ব্রিসবেনে সিরিজের চতুর্থ ও শেষ টেস্টে তো ৫ উইকেটও নিলেন। যে টেস্ট জিতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অসাধ্য সাধন করল ভারত, সিরিজ জয়ের আনন্দে ভাসল, ভাসাল পুরো জাতিকে।
জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মাদের মতো অভিজ্ঞ পেসারদের অনুপস্থিতিতে পেস আক্রমণের মূল দায়িত্বটা সামলাতে হয়েছে অনভিজ্ঞ সিরাজকেই। ভাঙা মন নিয়েই লড়ে গেছেন ভেতরের সবটুকু উজাড় করে। হতাশ হতে হয়নি, বিজয়ীর বেশেই দেশে ফিরেছেন দু’হাত ভরা সাফল্য নিয়ে।
অস্ট্রেলিয়া জয় করে আজ (বৃহস্পতিবার) সকালেই দিল্লিতে ফিরেছে টিম ভারত। সিরাজের ভাবনায় তো শুধু একটা মানুষই। দিল্লি থেকেই সরাসরি হায়দরাবাদে ছুটে গেলেন, বাবার কবরটা জিয়ারত করলেন সবার আগে।
সাফল্যের এই দিনটা দেখলে বাবা কত খুশি হতেন, দুই হাত উঁচু করে দোয়া ধরতে গিয়েও সিরাজের দুই চোখ ছলছল করে ওঠলো। মনের অজান্তেই হয়তো বলে ওঠলেন- দেখ, আমি পেরেছি বাবা, আমি পেরেছি।
এমএমআর/জিকেএস