বিদায় বেলায় পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের স্যালুট পেলেন ধোনি
ক্রিকেটকে বিদায় বলার আগেই কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই সমীহ করার মত এক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, চরম শত্রুও স্বীকার করতে বাধ্য, ধোনির ব্যক্তিত্ব এবং শ্রেষ্ঠত্বের কথা। যেমন তার বিদায় বেলায় পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা স্যালুট জানালেন ভারতের সবচেয়ে সফল এই অধিনায়ককে।
পাকিস্তানের ক্রিকেট কম্যুনিটি একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছে, ভারত সর্বকালের সেরা অধিনায়ককে জন্ম দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, নিজস্ব ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-ভাবনা দিয়ে আধুনিক ক্রিকেটে সুদুর প্রসারী প্রভাব রেখে গেছেন ধোনি।
গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ২৯ মিনিটে এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান ধোনি। তবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউচিল্যান্ডের বিপক্ষে।
অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন আইসিসির সবগুলো ট্রফি। একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে আইসিসি বিশ্বকাপ, আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন তিনি। এছাড়া ভারতকে প্রথমবারের মত আইসিসি টেস্ট র্যাংকিংয়ে শীর্ষে তুলে এনেছেন তিনি।
পাকিস্তানের সাবেক এবং বর্তমান তারকা ক্রিকেটাররা যেমন - ইনজামাম-উল হক, বাসিত আলি, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, মুদাস্সার নাজর, শহিদ আফ্রিদিসহ আরও অনেক ক্রিকেটার অপরিসীম শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন।
পাকিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা এবং সাবেক অধিনায়ক ইনজামাম-উল হক বলেন, ‘আমার দেখা কিংবা আমার স্মৃতিতে থাকা অধিনায়কদের মধ্যে সবচেয়ে সেরা অধিনায়ক হলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, যাকে ভারত জন্ম দিয়েছে। তিনি ছিলেন সত্যিকারের ম্যাচ উইনার। এ ধরনের ক্রিকেটারের বিপক্ষে খেলতেও অনেক বেশি ভালো লাগতো আমার।’
পাকিস্তানের আরেক সাবেক অধিনায়ক এবং উইকেটরক্ষক রশিদ লতিফ স্মরণ করলেন ধোনির শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে। তিনি মনে করেন, অধিনায়ক ধোনির অবদান চির জীবন স্মরণ করবে ভারত। তবে একইভাবে এই অবসরের কারণে ভারতীয় ক্রিকেটে নিজের উত্তরাধিকার তৈরি করে নিচ্ছেন বিরাট কোহলি।
রশিদ লতিফ বলেন, ‘অসাধারণ খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক তিনি। ম্যাচ রিড করার অসাধারণ দক্ষতা ছিল তার। যে কারণে যে কোনো পরিস্থিতিতে তিনি নিজের খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারতেন। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন পারফেক্ট ম্যাচ ফিনিশার। ম্যাচের অবস্থা বুঝে সেভাবেই সেটাকে ফিনিশ করে দিতেন। গতবছর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারের পর তাকে নিয়ে যে সমালোচনা হয়েছে, আমার মতে সেটা অবিচার করা হয়েছে তার প্রতি। কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি নিজের সেরাটা দিয়েই চেষ্টা করেছিলেন।’
পাকিস্তানের সাবেক টেস্ট ওপেনার মুদাসসার নজর মনে করেন, শুধু ভারত নয় ক্রিকেটের ইতিহাসে একজন গ্রেট ফিনিশার ছিলেন ধোনি। মুদাস্সার বলেন, ‘আমি তাকে প্রথম দেখি, যখন আমি কেনিয়ার কোচ ছিলাম। নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল একটি ত্রি-দেশীয় টুর্নামেন্ট। পরপর দুটি সেঞ্চুরি করেছিলেন ধোনি। কিন্তু তখনও বুঝতে পারিনি, ভারত এবং সারা বিশ্বের ক্রিকেটের জন্য কি অসাধারণ অবদান নিয়ে হাজির হচ্ছেন তিনি।’
পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ ইউসুফ মনে করেন, অধিনায়ক হিসেবে ধোনির রান তোলার ক্ষমতা এবং উইকেটরক্ষক হিসেবে ছিলেন অসাধারণ। ইউসুফ বলেন, ‘তিনি ব্যাট করতেন ভিন্ন ভিন্ন পজিশনে এবং খেলতেনও দারুণ। ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে তার ইনিংসটি আমার খুব স্মরণে রয়েছে। নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে তুলে এনে মাস্টার স্ট্রোক খেলেছেন। দুর্দান্ত ইনিংসের সঙ্গে ম্যাচটা শেষ করেছিলেন অসাধারণ এক ছক্কায়।’
এছাড়া বাসিত আলি, সাবেক টেস্ট ওপেনার এবং প্রধান নির্বাচক মহসিন খান, উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মঈন খানরাও প্রশংসায় ভাসিয়ে দিলেন ধোনিকে। বুমবুম খ্যাত শহিদ আফ্রিদি লেখেন, ‘ক্রিকেটে সত্যিকারের সেরা কিংবদন্তি এবং সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক হচ্ছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।’
আইএইচএস/এমকেএইচ