স্রেফ কালো হওয়ায় কম বেতন পেতেন প্রোটিয়া পেসার
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে হওয়া বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণের ব্যাপারে মুখ খুলেছেন দেশটির সাবেক পেসার ইথি ভালাতি। সেঞ্চুরিয়নের নর্দার্ন ক্রিকেট ইউনিয়নের (এনসিইউ) বিরুদ্ধে তিনি এনেছেন গুরুতর অভিযোগ। তার মতে, এনসিইউয়ের বর্ণবাদী আচরণের কারণে অনেক প্রতিভাবান কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারেনি।
শুধু তাই নয়, ভালাতি নিজেও শিকার হয়েছেন বর্ণবাদী আচরণের। স্রেফ কালো হওয়ার কারণে ক্লাব ক্রিকেটে তাকে ডাকা হতো বানর বলে। বৈষম্য ছিল পারিশ্রমিকের বেলায়ও। তার চেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড়রা সাদা চামড়ার হওয়ার কারণে পেতেন বেশি পারিশ্রমিক। এর বাইরে কালো বলে খেলতে সুযোগ দেয়া হয়- এমন কথাও শুনতে হতো তাকে।
মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার সংবাদমাধ্যম টাইমস লাইভকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নিজের সব কথা জানিয়েছেন ভালাতি। তার দাবি, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট কাঠামোটাই এমন যে, কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়রা এমনিতেই হতাশ হয়ে পড়েন। এমনকি জাতীয় পর্যায়েও রয়েছে একই অবস্থা, এমনটাই অভিযোগ করেছেন ভালাতি।
দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া পর্যায়ে প্রায় ১৪ বছর খেলেছেন ৩৮ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার। নর্দার্নস, টাইটানস, দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’, দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং দলের হয়ে বিস্তৃত ক্যারিয়ারে ১২৯টি করে খেলেছেন প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ। এর বাইরে ৯২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলেছেন কখনও জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়া ভালাতি। তার ঝুলিতে রয়েছে মোট ৫৯৪টি উইকেট।
২০১৬ সালে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন রাখার অপরাধে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় ভালাতিকে। যার ফলে ৩৪ বছর বয়সেই সবধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেন তিনি। তবে তার আগে ১৪ বছরের ঘরের ক্যারিয়ারে দেখা নানান বর্ণবিদ্বেষী আচরণের ব্যাপারেই মুখ খুলেছেন ভালাতি।
তিনি বলেন, ‘ক্লাব ক্রিকেট সবচেয়ে নিকৃষ্ট। কারণ সেখানে প্রায়ই আমাদের বানর বলে ডাকা হতো। শুধু বানর নয়, আরও অনেক অপমানজনক নামেই ডাকা হতো। আমি দেখেছি, সদ্য স্কুল পেরুনো শ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড়দের জন্য বার্ষিক ৪ লাখ র্যান্ডের চুক্তি প্রস্তুত থাকত। অথচ আমরা কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়রা পেতাম বছরে ২ লাখ র্যান্ড।’
এমনকি ড্রেসিংরুমে সবধরনের অপমানই করা হতো কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়দের। সেই কথা জানিয়ে ভালাতি বলেন, ‘এমনও অনেকবার হয়েছে যে, ড্রেসিংরুম থেকে কিছু চুরি গেলে সবার আগে সন্দেহ করা হতো কালো খেলোয়াড়দের। কিন্তু পরে যখন অন্য কোথাও পাওয়া যেত জিনিসটা, তখন আর কেউ কালো খেলোয়াড়দের কাছে ক্ষমা চাইতে আসতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কখনও কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড় জোরে কথা বললে বা হাসলে সেটাকে বড় ইস্যু বানিয়ে ফেলতো শ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড়রা। কিন্তু তারা যখন মদ্যপ হয়ে হৈহুল্লোড় করতো, নগ্ন শরীরে মাঠে নেমে যেত, সেটাকে কোন বিষয়ই মনে করা হতো না। উল্টো তারা আশা করতো, আমরা যেন এই ঘটনায় হাসি।’
এসএএস/জেআইএম