যে কারণে বিশ্বকাপের মাঝেই বরখাস্ত করা হয় গর্ডন গ্রিনিজকে
বিষয়টি আসলে যতটা সাড়া জাগানোর কথা ছিল, ততটা হয়নি। তাকে বরখাস্ত করা নিয়ে যতটা হইচই হওয়ার কথা ছিল, তার কিছুই হয়নি। ইতিহাস জানাচ্ছে, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ চলাকালীন তখনকার বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ গর্ডন গ্রিনিজকে যেদিন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল, ঠিক সেদিন পাকিস্তানের মত পরাক্রমশালী দলকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ।
সে কারণেই গর্ডন গ্রিনিজের কোচ পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার ঘটনা ঢাকা পড়ে যায় আর টাইগারদের সাফল্য বড় হয়ে দেখা দেয়। সবাই আমিনুল ইসলাম বুলবুল বাহিনীর বন্দনা গাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে জাতীয় দলের অমন উদ্ভাসিত ও অবিস্মরণীয় সাফল্যে মোড়ানো দিনে হেড কোচ গর্ডন গ্রিনিজের পদচ্যুতির প্রসঙ্গটি খুব স্বাভাবিকভাবেই ঢাকা পড়ে যায়। তা নিয়ে লেখালেখি ও আলোচনা হয় অনেক কম।
তবু থেকে যায় প্রশ্ন, আসলে সেদিন কী ঘটেছিল নর্দাম্পটনে? কেন বিশ্বকাপ চলাকালীন গর্ডন গ্রিনিজকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছিল? সত্যিকার কাহিনী কী? তা জানার আকাঙ্খা অনেকেরই। এ নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হয়েছে বিস্তর, পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিও উপস্থাপিত হয়েছে। তারপরও কিছু প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেছে।
ঐ সময়ের বোর্ড কর্তাদের ভেতরে যিনি ছিলেন এমন সিদ্ধান্তের মুল ক্রীড়নক, সে সময়ের বিসিবি প্রধান সাবের হোসেন চৌধুরী ঐ ইস্যু নিয়ে মুখ খুলেছেন। কদিন আগে ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের ইউটিউব লাইভে কথা বলতে এসে সাবের হোসেন চৌধুরী বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, পরিবেশ-প্রেক্ষাপটের আলোকে ঐ সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
কারণ গর্ডন গ্রিনিজ বিশ্বকাপ চলাকালীন প্রকারন্তরে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির বিরোধিতা করেছিলেন। যেহেতু বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির বিষয়টি তখনও আইসিসির বিবেচনাধীন ছিল। আর ঐ সময় বাংলাদেশের কোচ টেস্ট মর্যাদা লাভের বিরোধিতা করাটা ছিল রীতিমতো কুঠারাঘাত।
পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিসিবির সাবেক সভাপতিও স্বীকার করেছেন, গর্ডন গ্রিনিজের মতো বিশ্বনন্দিত ক্রিকেট ব্যক্তিত্বকে অব্যাহতি দেয়াটা খুব সুখের ছিল না। আর তাই তো মুখে এমন কথা, ‘বিশ্বকাপ চলাকালীন আমিও আনন্দিত হয়ে তাকে পদচ্যুত করিনি।’
সাবের হোসেন চৌধুরী যোগ করেন, ‘৯৭ এর আইসিসি ট্রফি জয়ের পর আমাদের মূল ও একমাত্র লক্ষ্যই ছিল টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া। আমরা আগে টেস্ট মর্যাদার জন্য আবেদনও করেছিলাম। আমরা বিশ্বকাপে গিয়েছিলাম একটা ভাল পারফরম্যান্সের আশায়। টেস্টের আবেদনটা যাতে আরও জোরালো হয়। এখন সেই বিশ্বকাপের সময় যদি আমাদের কোচ টেস্ট স্ট্যাটাসের বিরোধিতা করেন, তাহলে ব্যাপারটি কেমন দাড়ায়?’
‘আর প্রথম দিকে যেটা ঘটেছিল, সেটা হলো স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে নান্নুকে (মিনহাজুল আবেদিন নান্নু) খেলাতে চাননি গর্ডন গ্রিনিজ। অথচ ঐ ম্যাচে আমাদের চরম বিপদে (২৪ রানে ৫ উইকেট) নান্নুই হাল ধরেছিলেন। নান্নুর দৃঢ়তায় আমরা বিপর্যয় কাটিয়ে মোটামুটি লড়াকু স্কোর গড়ে স্কটিশদের হারিয়ে কাঙ্খিত জয় পেয়েছিলাম।’
‘সেই প্রথমবার আমি দল নির্বাচন ও একাদশ সাজানোয় হস্তক্ষেপ করি। সেখানে আমরা বললাম, নাহ নান্নুকে এ ম্যাচ খেলানো দরকার। কারণ এটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। যা জেতাটা খুব জরুরি। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নান্নুর মত অভিজ্ঞ পারফরমারের প্রয়োজন আছে। নান্নুকে রাখলাম এবং নান্নুই ফিফটি করে ম্যাচ জেতায়।’
‘তারপরে যেটা হলো যে, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে গর্ডন গ্রিনিজ এক বিবৃতি দিয়ে বসলো যে বাংলাদেশ এ মুহুর্তে টেস্ট খেলার জন্য তৈরি নয়। তখন আমি গর্ডনকে বললাম আমাদের লক্ষ্যই হলো টেস্ট মর্যাদা লাভ। শেষ ৩-৪ বছর ধরে সেই দাবিই জানিয়ে আসছি। এখন তুমি যদি কোচ হয়ে এমন কথা বলো, তাহলে তো আমার আমাদের আর কোন অবস্থান থাকে না। আমরা এরপরে কোন মুখে গিয়ে বলব যে আমাদের টেস্ট স্ট্যাটাস দরকার আছে? ওরা তো প্রথমেই বলবে যে তোমাদের কোচই টেস্ট স্ট্যাটাস চায় না, তাহলে তুমি কী করে চাও?’
‘আসলে সেটাই ছিল মূল কারণ এবং এটাকে আমি যথার্থই মনে করি। তবে এখনও তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে। আমরা পাকিস্তানের কাছে হেরে গেলে দায়দায়িত্ব আমার ওপর আসত। আমি বিশ্বাস করি গর্ডন ইস্যুর শেষটা ভাল ছিল। আর যে কোন ঘটনার শেষ ভাল হওয়া মানে সব ভাল হওয়া।’
এআরবি/এসএএস/জেআইএম