‘দেশের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার হতে পারতাম আমি’
যেকোন ক্রিকেটারের সেরা সময় নাকি শুরু হয় বয়স ত্রিশের আশপাশে পৌঁছালে। কিন্তু ভারতের বাঁহাতি পেস বোলিং অলরাউন্ডার ইরফান পাঠান ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলেছেন ২৮ বছর হওয়ার আগেই। ততদিনে ২৯ টেস্ট, ১২০ ওয়ানডে এবং ২৪ টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি।
২০১২ অক্টোবরে শেষবার ভারতের জার্সি গায়ে জড়ানোর পর আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয়নি ইরফানের। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ইনজুরি একটা বড় বাধা ছিল ইরফানের জন্য। তবে ভারতীয় টিম ম্যানেজম্যান্টের উদাসী মনোভাবও একটা অন্তরায় ছিল তার ক্ষেত্রে।
এ কারণে প্রতিনিয়তই তৎকালীন টিম ম্যানেজম্যান্টের সমালোচনা করতে থাকেন ইরফান। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বুকভরা আক্ষেপ নিয়ে সবধরনের খেলাধুলাকে বিদায় জানিয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী ইরফান। তার মতে, যথাযথ সুযোগ পেলে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজ দেশের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার হতে পারতেন তিনি।
রেডিফ ডট কমে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইরফান বলেছেন, ‘সাফল্যের বিচারে হয়তো আরও অনেক বেশি থাকত (আমার নামের পাশে)। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে ভারতের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার হতে পারতাম আমি। এটা হয়নি কারণ আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী অত ম্যাচ খেলতে পারিনি। যেহেতু মাত্র ২৭ বছরেই আমার ক্যারিয়ার থমকে গেছে।’ ‘‘
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি দেখি ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসনের মতো বিশ্বের আরও অনেক বোলার ৩৫-৩৭ বছরেও খেলে যাচ্ছে। অবশ্যই ইংল্যান্ড আর আমাদের বিষয়টা ভিন্ন। আমি মনে করি, ৩৫ বছর পর্যন্ত খেলতে পারলে সব অন্যরকম হতো। তবে এখন সব শেষ, কিছুই বাকি নেই।’
ওয়ানডে ক্রিকেটে শুরুর দিকে নতুন বলের বোলার হিসেবে ব্যবহার করা হতো ইরফানকে। পরে ভূমিকা বদলে তাকে আনা হতো প্রথম চেঞ্জে। যার ফলে পরিসংখ্যানেও এসেছে বেশ রদবদল। আর এটিকেই তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করে বলে মনে করেন ইরফান।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় দুঃখ পাই যে, মানুষ আমার বিরুদ্ধে সংখ্যাকে (পরিসংখ্যান) দাঁড় করায়। কিন্তু সংখ্যা সবসময় সঠিক তথ্য দেয় না। আপনি দেখুন, প্রথম ৫৯ ওয়ানডেতে আমি নতুন বলে বোলিং করেছি। আপনি যখন নতুন বলের বোলার, তখন আপনার অনেক কিছু করার সুযোগ থাকে। কিন্তু প্রথম চেঞ্জে আক্রমণে আসলে খানিক রক্ষণাত্মক বোলিং করতে হয়। তখন দায়িত্ব থাকে রান আটকানোর। যা সংখ্যার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে।’
২০০৬ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত ভারতের হয়ে নতুন বলে বোলিং করেছেন ইরফান। ততদিন পর্যন্ত খেলা ৬৯ ম্যাচের মধ্যে ৬৭টিতেই নতুন বল পান তিনি। সেই ৬৯ ম্যাচে মাত্র ২৪.৭৮ গড়ে ১১৩ উইকেট শিকার করেছিলেন বাঁহাতি সুইং বোলার ইরফান।
ক্যারিয়ারের প্রথম তিন বছরে সৌরভ গাঙ্গুলি ও রাহুল দ্রাবিড়ের অধীনে ৬৯ ওয়ানডে খেললেও, পরের ছয় বছরে মাত্র ৫১টি ম্যাচে সুযোগ পান তিনি। মহেন্দ্র সিং ধোনি দায়িত্ব পাওয়ার পর মাত্র ১৯ ম্যাচে নতুন বল দেয়া হয় ইরফানের হাতে। যা তার পরিসংখ্যানও বদলে দিয়েছে।
সবমিলিয়ে ১২০ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৯.৭২ গড়ে ১৭৩ উইকেট শিকার করেছেন ইরফান। অর্থাৎ নতুন বলে অনিয়মিত হওয়ার পর খেলা ৫১ ম্যাচে মাত্র ৬০ উইকেট পেয়েছেন তিনি, বেড়ে গেছে বোলিং গড়ও। এছাড়া ২৯ টেস্টে ১০০ এবং ২৪ ওয়ানডেতে ২৮ উইকেট রয়েছে ইরফানের ঝুলিতে।
এসএএস/এমএস