তামিমের অজানা গল্প : রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেঁদেছেন একদিন
গত এক যুগ ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওপেনিং পজিশনের এক নম্বর ভরসা তামিম ইকবাল খান। যেকোন দল সাজানোর সময় তামিমকে এক নম্বরে রেখে ঠিক করা পরের দশটি জায়গা। নিজেকে ঠিক এতটাই মূল্যবান হিসেবে প্রমাণ করেছেন দেশসেরা এ ওপেনার।
চট্টগ্রামের বিখ্যাত ক্রীড়া পরিবার কাজীর দেউড়ির খান পরিবারের থেকে উঠে আসায় তামিমের পথচলাটা খুব সহজ ছিল বলে মনে করেন অনেকে। বাবা ইকবাল খান একাধারে খেলতে ক্রিকেট ও ফুটবল, চাচা আকরাম খান ছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়ক, বড় ভাই নাফিস ইকবালও খেলেছেন জাতীয় দলে।
এমন পরিবারের ছোট ছেলে তামিমের ক্রিকেট ক্যারিয়ার যে দীর্ঘ ও সাফল্যমণ্ডিত হবে, তা ধরে নেয়াই স্বাভাবিক। তবে এই সাফল্যটা এমনি এমনিই ধরা দেয়নি। এর পেছনে রয়েছে অনেক অজানা হতাশার গল্প। যার বেশিরভাগই হয়তো জানেন না সাধারণ ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকরা।
শনিবার রাতে তেমনই একটি গল্প সবাইকে জানিয়েছেন তামিম। ক্যারিয়ার শুরুর আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কোনো দলের সঙ্গে চুক্তি না করতে পারার হতাশায় রাজধানীর ইস্টার্ন প্লাজার সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেঁদেছিলেন দেশসেরা এ ওপেনার। যদিও পরে তখনকার সময়ের নামি ক্লাব ওল্ড ডিওএইচএসের হয়ে সুযোগ পেয়ে যান তিনি।
ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে এক লাইভ সেশনে তামিম বলেছেন, ‘তখন প্রিমিয়ার লিগে দল পেতে হলে সাইনিং করতে হতো। সাইনিং করতে না পারলে ঐ ক্রিকেটার আর সে বছর খেলতে পারত না। তো প্রিমিয়ার লিগের আগে মাত্র একদিন সময় পেয়েছিলাম আমরা। কেননা আমাদের স্কটল্যান্ড থেকে আসা একটি দলের সঙ্গে ম্যাচ ছিল চট্টগ্রামে। আমার ভাই (নাফিস ইকবাল) একটি দলে সাইনিং করে চলে গেছে। আমাকে বলল তুইও যোগাযোগ কর।’
তিনি বলতে থাকেন, ‘আমরা ৫-৬ জন একটা মাইক্রোতে উঠলাম, সাইনিং করতে যাওয়ার জন্য। ইস্টার্ন প্লাজার সামনে ওরা আমাকে মাইক্রো থেকে নামিয়ে দেয়। আমি জিগ্যেস করলাম, কেন নামিয়ে দিচ্ছেন? ওরা বলল বিসিবির কোনও এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আমি ভাইকে ফোন দেই তখন। নাফিস ভাইয়া বলে, ওরা তোকে দলে নেবে না হয়তো। আমি তখন রাস্তায় ঐ জায়গায় দাঁড়িয়ে কান্না করি। পুরোপুরি কান্না চলে আসে আমার।’
পরে তখনকার তারকা ক্রিকেটার খালেদ মাহমুদ সুজনের মাধ্যমে ওল্ড ডিওএইচএসে খেলার সুযোগ পান তামিম। আর সেখানেই বাজিমাত করে ঢুকে যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এরপরের বাকি গল্প তো সবারই জানা।
ওল্ড ডিওএইচএসে সুযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে তামিম বলেন, ‘ঐ সময়ে যে আমি ওল্ড ডিওএইচএসে খেলতে পারব সেটা কল্পনাই করতে পারিনি। সুজন ভাই আমাকে নিয়ে যায়। ডিওএইচএস তখন চ্যাম্পিয়ন দল। ঐ দলে তখনকার জাতীয় দলের ওপেনাররা খেলে। তারপরেও আমি অনুশীলন চালিয়ে যাই। এরপর কীভাবে যেন জায়গা পাই। ওই টুর্নামেন্টের পর জাতীয় দলেও খেলি।’
ক্যারিয়ার শুরুর দিককার সেই আবেগপূর্ণ ঘটনাটি ভোলেননি তামিম। কয়েক বছর আগেও ইস্টার্ন প্লাজার কাছে গিয়ে মনে করেছেন সেই দিনের কথা, ‘কয়েক বছর আগে আমি আবার ইস্টার্ন প্লাজার সামনে যাই। তখন ওই জায়গাটায় আমি একটু দাঁড়াই। চিন্তা করি ওইদিনের কথা।’
এসএএস/পিআর