ছোট ভাই তামিমের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করার স্মৃতি বড় ভাই নাফিসের

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:১৬ পিএম, ০৬ মে ২০২০

মাঠের পারফরমার তামিম, ব্যাটসম্যান তামিম, ওপেনার তামিম আগে থেকেই আলোচিত-নন্দিত। ভক্ত-শুভানুধ্যায়ী সবার বিশ্বাস ও প্রত্যাশা অধিনায়ক তামিমও হয়তো আগামীতে দক্ষতার ছাপ রাখবেন। কিন্তু এবার করেনার ভেতরে দেখা মিলেছে এক অন্য তামিমের।

ভাবছেন, তার মানবিকতা ও ক্রীড়াবিদদের নানারকম সাহায্য-সহযোগিতার কথা বুঝি বোঝানো হয়েছে। নাহ! সেটা নয়। এবার করোনায় তার নানা সেবামূলক কর্মকান্ড প্রচার মাধ্যমের কল্যাণে সাধারণ মানুষ জেনেছে।

তবে মূল বিষয় হলো, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের কাজীর দেউরির ঐতিহ্যবাজী ক্রীড়া পরিবারের একটা প্রজন্মের কণিষ্ঠ সদস্য তামিমের মন সবসময়ই বড়। মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করা এবং কারও বিপদে-প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো তার অভ্যাস। এটা নতুন কিছু নয়। তবে এবার করেনার কারণে সবার চোখে পড়েছে বেশি।

এখন তামিম হঠাৎ আলোচনায় এসেছেন ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম লাইভে সঞ্চালন করতে এসে। তার সাবলীল, রসবোধের মিশেলের সঞ্চালন অনেকেরই মনে ধরেছে। সঞ্চালক তামিমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই।

তামিমের সঞ্চালনে মুগ্ধ হয়ে দেশের নামকরা টিভি অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া সেদিন তার নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেই ফেলেছেন, ‘আমাদের অনেক পেশাদার উপস্থাপক ও সঞ্চালকের চেয়ে তামিম ইকবাল এগিয়ে।’

এই তো ৪৮ ঘন্টা আগে তামিম ইকবালের সঞ্চালনে মাশরাফি বিন মর্তুজার ইনস্টাগ্রাম লাইভ খুবই সাড়া জাগিয়েছে। দেশের ক্রিকেটের দুই উজ্জ্বল তারকা তামিম আর মাশরাফির কথোপকথন, স্মৃতিচারণে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

সে আলোচিত ও উপভোগ্য লাইভে অনেক কথার ভিড়ে তামিমের বড় ভাই নাফিস ইকবালের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। বন্ধু প্রতিম ক্রিকেটার নাফিস ইকবালের খেলোয়াড়ি জীবনের বেশ কিছু ঘটনা টেনে অনেক স্মৃতিচারণ করেছেন মাশরাফি।

তামিমও বড় ভাইয়ের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে ভোলেননি। তার বড় হওয়ার পেছনে বড় ভাইয়ের ভূমিকা ও অবদানের কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেছেন।

ছোট ভাই তামিমের সঙ্গে বড় ভাই নাফিস ইকবালের বয়সের ফারাক ৪ বছরের কিছু বেশি। সবার জানা, দুই ভাই-ই ওপেনার। দুজনই জাতীয় দলে খেলেছেন। তবে জাতীয় দলের হয়ে একসঙ্গে ইনিংস ওপেন করা হয়নি কখনও। কী করে ওপেন করবেন? দুই ভাই যে একসঙ্গে কখনও জাতীয় দলে খেলেননি।

তবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ এবং জাতীয় লিগে দুই সহোদর একসঙ্গে অনেক খেলায়ই অংশ নিয়েছেন। ব্যাট হাতে ইনিংসের সূচনা করতেও নেমেছেন। হোক তা ঘরোয়া ক্রিকেটের কোন ম্যাচ; বড় ভাই নাফিস আর ছোট ভাই তামিম কবে কখন একসঙ্গে প্রথম ব্যাট হাতে নেমেছিলেন ইনিংসের সূচনা করতে? দুই ভাইয়ের শেষ ম্যাচটিই বা কবে কোথায়, কোন আসরে?

এ কৌতূহলি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে এক দারুণ তথ্য। বড় ভাই নাফিসের সঙ্গে তামিম প্রথমবার ব্যাট হাতে ইনিংসের সূচনা করেছিলেন একদম ছোটবেলায়, হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায়। তখন তার বয়স মাত্র ১০ বছর।

আজ (বুধবার) জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে দুই ভাইয়ের প্রথম একসাথে ওপেন করার গল্প শুনিয়েছেন বড় ভাই নাফিস। ঠিক দিন তারিখ মনে নেই। তবে নাফিসের কথায় মনে হয়েছে অন্তত ২১-২২ বছর আগের কথা।

নাফিস ইকবালের মুখ থেকেই শোনা যাক, দুই ভাইয়ের একসাথে ওপেন করার গল্প, ‘আসলে আমি আর তামিম চট্টগ্রাম ক্লাব ক্রিকেট, ঢাকার প্রিমিয়ার লিগ ও জাতীয় ক্রিকেটে অনেক ম্যাচ একসঙ্গে খেলেছি। মোহামেডানের পক্ষে দুই ভাই ওপেনও করেছি। একসঙ্গে চ্যাম্পিয়ন টিমেও ছিলাম।’

‘এগুলো সব প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে। কিন্তু আমাদের দুই সহোদরের একসঙ্গে ওপেন করার প্রথম ঘটনাটি কোন প্রতিযোগমূলক আসরে নয়। আমরা এক টেপ টেনিস ম্যাচে দুই ভাই একসঙ্গে ওপেন করতে নেমেছিলাম। আমার ধারণা তামিমের বয়স তখন ১০ বছরেরও কম।’

‘সেটা ছিল ঈদের পরদিন। আব্বা আমাদের পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় রাখতে সবসময়ই এটা-ওটা করে একটা পারিবারিক গেট টুগেদারের ব্যবস্থা করতেন। তারই অংশ হিসেবে আগে আমাদের পরিবারের ভেতরে ঈদের পরদিন ক্রিকেট ম্যাচ হতো। সেখানে সিনিয়র আর জুনিয়র খেলা হতো।’

‘আব্বা (প্রয়াত ইকবাল খান, চট্টগ্রাম তথা দেশের ফুটবলে সত্তর দশকের অন্যতম সফল ও নামি স্ট্রাইকার ও ক্রিকেটার, পরবর্তীতে কোচ ও সংগঠক), আকরাম চাচ্চু (জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান বিসিবি পরিচালক আকরাম খান) এবং তাদের বন্ধুরা থাকতেন সিনিয়র দলে। আর আমরা ছোটরা এক দলে খেলতাম। আমার অন্য চাচারাও আমাদের দলে ছিলেন। আমি তখন সবে অনূর্ধ্ব-১৩ খেলছি। বয়স ১৪’র মত, তামিমের বয়স হয়তো সর্বোচ্চ দশ। ঐটুকুন বয়সে আমার সঙ্গে ওপেন করেছিল।’

‘বিশ্বাস করেন, আমি অনেক পরিশ্রম আর সাধনায় ব্যাটিংয়ের টেকনিক ও কৌশল রপ্ত করেছি। আর তামিম এবদম ন্যাচারাল। সেই ঐটুকু বয়সেই বাঁ হাতে ব্যাট চালাত, বেশ জোরে মারতে পারত। একদম ফিয়ারলেস শট খেলে ফেলত। আর ব্যাট চালনায় কোনো জড়তা ছিল না, স্বচ্ছন্দে খেলত। আসলে তখনই বোঝা যেত, ওর ভেতরে বারুদ আছে, একদিন জ্বলবেই।’

আচ্ছা ছোট ভাইয়ের সঙ্গে আপনার জীবনের প্রথম ওপেন করার স্মৃতির কথা শোনা হলো, শেষ ম্যাচ কবে খেলেছিলেন দুই ভাই? একসঙ্গে ওপেন করতে নামা শেষ দিনটির কথা কী মনে আছে?

নাফিস ইকবাল এবার স্মৃতি হাতড়ে বললেন, ‘হ্যাঁ! আমরা প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে বহু ম্যাচে একসঙ্গে ওপেন করেছি। খুব সম্ভবত ২০১৫ না হয় ২০১৬ সালের জাতীয় লিগের একটি ম্যাচে দুই ভাই ওপেন করেছিলাম। তামিম সেঞ্চুরি করেছিল। আর আমার ফিফটি ছিল।’

পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, সেটা ছিল ২০১৫ সালের ১০-১৩ অক্টোবরের ঘটনা। বরিশালের বিপক্ষে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে জাতীয় লিগের এক ম্যাচে নাফিস-তামিম দুই ভাই ওপেন করেছিলেন। উদ্বোধনী জুটিতে ৯৮ রানের বড় পার্টনারশিপও ছিল তাদের। বড় ভাই নাফিস ৫৮ বলে ৯ বাউন্ডারি আর দুই ছক্কায় ৫৬ রানে আউট হয়ে গেলেও তামিম ঠিক সেঞ্চুরি (২২৯ বলে ১৩৭) করেছিলেন।

নাফিসের কাছে সে ম্যাচই তাদের শেষবারের মতো একসঙ্গে ওপেন করার স্মৃতি হলেও, আদতে সেটাই দুই ভাইয়ের একসঙ্গে ওপেন করা শেষ ম্যাচ নয়। ঠিক পরের রাউন্ডের ম্যাচেই রাজশাহীর বিপক্ষে শেষবারের মতো একসঙ্গে উদ্বোধনী জুটি বেঁধেছিলেন নাফিস-তামিম। সেদিন দুই ভাই গড়েন ৭৯ রানের জুটি। তামিমের ব্যাট থেকে আসে ৬২ ও নাফিস করেন ৪৩ রান।

এআরবি/এসএএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।