অথচ ট্রিপল সেঞ্চুরির আশায় ছিলেন মুশফিক
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটি তার। আর এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বাধিক তিন ডাবল সেঞ্চুরির মালিকও তিনি। উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো, তার দ্বিতীয় আর তৃতীয় দুটি ডাবল সেঞ্চুরিই এসেছে মিরপুরের শেরে বাংলায়, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
২০১৮ সালের নভেম্বরে হোম অব ক্রিকেটে ২১৯ রানে নট আউট ছিলেন। আর তিন নম্বরটি আজ (সোমবার) সেই হোম অব ক্রিকেটে। এবারও প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। যেখানে মুশফিকের ব্যাট অপরাজিত ২০৩ রানে। তার মানে শেষ দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করার পরও তাকে বধ করতে পারেননি জিম্বাবুয়ান বোলাররা। দুবারই নট আউট মুশফিক। এমন নয় দল অলআউট হয়ে গিয়েছিল।
কাকতালীয় ব্যাপার হলো, দুইবারই জয়ের তাগিদ থেকে ইনিংস ঘোষণা করেছেন মুশফিকের অধিনায়ক। প্রথমবার ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৯ রানে অপরাজিত থাকা অবস্থায় ইনিংস ডিক্লেয়ার করেছিলেন তখনকার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
আর আজ দু’শোতে পা রাখার পরপরই ৪ উইকেট হাতে থাকতেও ইনিংস ঘোষণা করেছেন এ ম্যাচের অধিনায়ক মুমিনুল হক। দিনের ৭ ওভার বাকি থাকতে প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েকে দ্বিতীয় বার ব্যাটিং করানো কেন? কাল (মঙ্গলবার) চতুর্থ দিন প্রথম সেশনে খেললে কী হতো? তাতে স্কোর লাইন বড় হতো আরও। ইনিংস পরাজয় এড়াতে এখন যেমন ২৯৬ রান চাই জিম্বাবুইয়ানদের, তখন হয়ত আরও শ’খানেক রান বেশি করতে হতো।
মোদ্দা কথা, চাপটা বাড়তো আরও। রান করার তাড়া ও তাগিদও থাকতো বেশি। এর পাশাপাশি আরও একটি সম্ভাবনাও থাকতো। তা হলো, কাল ঘন্টা তিনেক ব্যাট করতে পারলে হয়ত ট্রিপল সেঞ্চুরির সুযোগ থাকতো মুশফিকুর রহীমের। দিন শেষে তা নিয়ে কথা হয়েছে।
অনেকেই আজ শেষ বিকেলে ২০-২৫ মিনিট আগে মুমিনুলের ইনিংস ঘোষণায় খানিক অবাক হয়েছেন। দিন শেষে জানা গেল, খোদ মুশফিকুর রহীমও অবাক! তিনিও ভাবেননি আজ একদম শেষ বিকেলে ইনিংস ঘোষণা আসতে পারে। কারণ তার মনেও ছিল ট্রিপল সেঞ্চুরির সুপ্ত বাসনা।
শুধু বাসনা বলা বোধ হয় কম বলা হলো। মুশফিক মনে মনে চেয়েছিলেন তিনশ’টা করে ফেলতে পারে ভালই হবে। নামের পাশে ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান লেখা থাকবে। সময় ও সুযোগ আছে, দেখি চেষ্টা করে। হলেও হয়ে যেতে পারে। এমন ভাবনার সময় হঠাৎ দেখেন ড্রেসিং রুম থেকে ইনিংস ঘোষণার সংকেত অধিনায়ক মুমিনুলের।
সোমবার তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে এসে মুশফিক কথা প্রসঙ্গে বলে ফেলেছেন, ‘হ্যাঁ! ট্রিপল সেঞ্চুরির একটা পরিকল্পনা ছিল। সত্যি বলতে কী, আমি ভাবিনি এই সময়ে ইনিংস ঘোষণা করে দিবে। আমার হাতে এখনও দুই দিন সময় আছে। তার চেয়েও বড় কথা আমরা যত ব্যাটিং করবো, উইকেট তত ভাঙতেও পারত।’
তবে নিজের ব্যক্তিগত লক্ষ্য পূরণ তথা ট্রিপল সেঞ্চুরির চেয়ে দলের দিকটাও বড় করে দেখতে চান মুশফিক। তাই বলেন, ‘আবার একই সঙ্গে, দলই সবসময় আগে আসবে।’
তবে মুশফিক একটি বিষয়ে খানিক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আসলে চা-বিরতির সময় আমাদের এমন কোনো আলোচনা হয়নি যে আজ ডিক্লেয়ার করা হবে। খেলা শেষ হওয়ার আধ ঘণ্টার একটু আগে জানতে পারি আজ ওদের ৬ থেকে ৮ ওভারের মতো আমরা দিবো। এরপর আমরা একটু রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। আর এক আগে পরিকল্পনা ছিল, একপাশে যদি লিটন থাকে আমার জন্য সুবিধা হয়। আমার একটা ভাবনা ছিল, ও (লিটন) যদি একশ করে তাহলে আমারও হয়তো রান তিনশর কাছে চলে যাবে। আজকে হতো না, কাল প্রথম সেশনে হয়ে যেতে পারতো। যদি ভবিষ্যতে এমন সুযোগ আবার আসে চেষ্টা করব সেটা কাজে লাগানোর। এখন পর্যন্ত যেটা হয়েছে, দলের জন্য আমরা খুব ভালো একটা অবস্থানে আছি।’
কেন এমন তড়িঘড়ি করে ইনিংস ঘোষণা? আবহাওয়ার পূর্বাভাষে বৃষ্টির কথা বলা হচ্ছে এবং ধারনা করা হচ্ছে কাল (মঙ্গলবার) সকালে বৃষ্টি এসে হানা দিতে পারে। যদি বৃষ্টিতে একটি সেশন পুরো নষ্ট হয়ে যায়, এমন ভেবেই কি পড়ন্ত বিকেলে হঠাৎ ইনিংস ঘোষণা?
এমন প্রশ্ন করা হলে মুশফিক বলে ওঠেন, ‘হতে পারে আবহাওয়ার জন্য। আমি এখনও জিজ্ঞেস করিনি। আমাদের একটা মানসম্পন্ন একটা বোলিং আক্রমণ আছে। আশা করছি, জেতার জন্য আমাদের এই ইনিংসটাই যথেষ্ঠ হবে।’
এআরবি/এসএএস/জেআইএম