দুই ছক্কায় ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি শান্তর
ঠিক যেন তামিম ইকবালের কথা মনে করালেন তার উত্তরসূরি বাঁহাতি মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত। টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম ও একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানোর পথে ১৮২ থেকে দুই ছক্কায় পৌঁছে যান ১৯৪ রানে, পরে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক রাখেন নিজের কাছে। পরের ওভারে আরেক ছক্কা হাঁকিয়ে তুলে নেন দ্বিশতক।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না হলেও, আজ (রোববার) বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে ছক্কা হাঁকিয়েই ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতকে পৌঁছে গেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনিও টানা তিন ছক্কা হাঁকিয়েছেন। তবে এর একটি আবার দুইশ হয়ে যাওয়ার পর। তবে ১৯১ রান থেকে দুই ছক্কা হাঁকিয়েই ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন তিনি।
কক্সবাজারে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে আজ সকালে ১২২ রান নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন শান্ত। দ্বিতীয় দিনেই দাঁড় করানো ৩৩০ রানের লিডটাকে দক্ষিণাঞ্চলের ধরাছোঁয়ার বাইরে নেয়ার জন্য শান্তর ব্যাটেই তাকিয়ে ছিলো মধ্যাঞ্চল।
একদমই হতাশ করেননি এ বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে মধ্যাঞ্চলের লিডকে নিয়ে গেছেন প্রায় পাঁচশ ছুঁইছুঁই রানে। দক্ষিণাঞ্চলের বোলারদের ছাতু বানিয়ে ২৯১ বল খেলে ২৩ চার ও ৩ ছক্কার মারে নিজের দ্বিশতক পূরণ করেছেন শান্ত।
শনিবার শেষ বিকেলে ৭ উইকেট হারিয়ে ২০৯ রান করতে পেরেছিল মধ্যাঞ্চল। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরিতে শান্ত অপরাজিত ছিলেন ১২২ রানে। আজ (রোববার) দিনের প্রথম সেশনে উইকেটরক্ষক জাবিদ হোসেনের সঙ্গে ৯১ রানের জুটি গড়েন তিনি। যেখানে জাবিদের অবদান ৩৬ রান।
মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত ১৯১ রানে অপরাজিত থাকেন শান্ত। যা তার প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। জাতীয় ক্রিকেট লিগের ২০১৭-১৮ মৌসুমে ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে রাজশাহীর হয়ে ১৯৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন শান্ত। মধ্যাহ্ন বিরতির পর ডাবল সেঞ্চুরি করার আগপর্যন্ত এটিই ছিল তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।
বিরতি থেকে ফিরে মুখোমুখি প্রথম ওভারেই মেহেদি হাসানের ওভারে ছক্কা মেরে ১৯৭ রানে পৌঁছে যান তিনি। মেহেদির করা পরের ওভারে আরও এক ছক্কায় তুলে নেন প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। তার নামের পাশে তখন জ্বলজ্বল করছিল ২৯১ বলে ২৩ চার ও ৩ ছক্কায় ২০৩ রান।
ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করার পর আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন শান্ত। মাত্র ১৯ বলে করেন পরের ৫০ রান। দুইশ করা পর্যন্ত তিনটি ছক্কা হাঁকানো শান্ত, পরের ১৯ বলে হাঁকান আরও ছয়টি ছক্কা। এর সঙ্গে আসে আরও দুইটি চারের মার। সবমিলিয়ে ৩০৭ বলে ২৫ চার ও ৯ ছক্কার মারে ক্যারিয়ারের প্রথম আড়াইশ রানের মাইলফলকও ছুঁয়ে ফেলেন শান্ত।
তবে শান্তকে আর তিনশ করার সুযোগ দিতে পারেনি মধ্যাঞ্চল। ইনিংসের ১০৭ ওভার শেষে দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ৩৮৫ রান। লিড তখন ৫০৬ রানের। এমতাবস্থায় ইনিংস ঘোষণা করেন অধিনায়ক শুভাগত হোম। যার ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সামনে লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ৫০৭ রানের। ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক করা শান্ত অপরাজিত থেকে ২৫৩ রানে।
এবারের বিসিএলের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে শান্তর মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষেই অনবদ্য ৩৩৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন পূর্বাঞ্চলের তামিম ইকবাল। সময়-সুযোগ পেলে হয়তো ট্রিপল সেঞ্চুরি করতে পারতেন শান্তও। তবে তার এ ইনিংসটিও ক্রিকেটীয় বিচারে খুব একটা পিছিয়ে থাকবে না।
কেননা তামিম ইকবাল ৩৩৪ রান করার দিনে প্রতিপক্ষ দলের বোলাররা ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান, শহীদুল ইসলাম, শুভাগত হোম, সোহরাওয়ার্দি শুভরা। এদের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন মোস্তাফিজ, একদমই ছন্দে ছিলেন না শহীদুল। আর শুভাগত-সোহরাওয়ার্দির বোলিং মানও ঠিক তত বেশি নয়।
অন্যদিকে তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে শান্তকে খেলতে হয়েছে শফিউল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, মেহেদি হাসান ও নাসুম আহমেদদের বিপক্ষে। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে অবিসংবাদিত কিংবদন্তি রাজ্জাক, দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন শফিউলও। এছাড়া সবশেষ বিপিএল থেকেই ছন্দে রয়েছেন মেহেদি-নাসুমরাও। এদের বিপক্ষেই ২৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন শান্ত।
এসএএস/পিআর