টেস্ট দলে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত, বাদ পড়তে পারেন একাধিক সিনিয়র
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। মাঠে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছেন আকবর আলী, পারভেজ হোসেন ইমন, শাহাদাত হোসেন, শরীফুল ইসলাম, রাকিবুল হাসানরা।
তাদের নৈপুণ্যের দ্যুতিতে শুধু মাঠই আলোকিত হয়নি, ক্রিকেট বিশ্বে সৃষ্টি হয়েছে আলোড়ন। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মর প্রশংসায় পঞ্চমুখ গোটা ক্রিকেট দুনিয়া।
কিন্তু বিপরীত অবস্থা জাতীয় দলের। ভারতের পর পাকিস্তান সফরে গিয়েও খাবি খাচ্ছে টাইগাররা। লাহোরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর এখন টেস্ট সিরিজেও নাস্তানাবুদ হওয়ার পথে সফরকারিরা। রাওয়ালপিন্ডির নির্জীব ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে শ্রীহীন ব্যাটিং আর নির্বিষ বোলিংয়ে মুমিনুল বাহিনী হেরেছে ইনিংস ও ৪৪ রানে।
ক্রিকেটের অভিজাত ও কুলীন ফরমেট টেস্টে বারবার এমন অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্স ও করুণ পরিণতি প্রশ্নবিদ্ধ করছে সত্যিকার টেস্ট খেলার সামর্থ্যকে। সমালোচকরা নড়েচড়ে বসেছেন। ‘বাংলাদেশ টেস্ট খেলতে পারে না, পারলেও হঠাৎ ভালো খেলে’-এই পুরোনো অপবাদ নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে।
সেটা শুধুই অপবাদ-তা প্রমাণের দায়িত্ব যাদের; সেই তামিম ইকবাল, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহরা রিয়াদরা ম্যাচের পর ম্যাচ ব্যর্থ হয়ে বরং সমালোচকদের মুখ খোলার সুযোগ করে দিচ্ছেন।
এদিকে জাতীয় দলের করুণ পারফরম্যান্সে যারপরনাই হতাশ গোটা দেশ। হতাশ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তিনিও এবার ‘হার্ডলাইন’-এ যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে বিসিবিতে সাংবাদিকদের সাথে আলাপে নাজমুুল হাসান পাপন টেস্ট দলের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা নিয়ে অবশ্যই বসে থাকব না। কাজ তো করতেই হবে। শ্রীলঙ্কা সফর দেখেন, ত্রিদেশীয় সিরিজ, আফগানিস্তান টেস্ট, ভারতে টেস্ট সিরিজ, পাকিস্তান একই কথা। যত দিন যাচ্ছে, উন্নতির কোনো আভাস দেখছি না। এটা আমাদের ভাবনায় আছে।’
পাপন যোগ করেন, ‘আমি এগুলো থেকে একটু সরে আসতে চেয়েছিলাম, আপনাদের বারবার বলেছি। গত দুই বছর ধরে বলছি, আমি আগের মতো সম্পৃক্ত না। ওদের এতো দিনে শিখে যাওয়ার কথা। এখন মনে হচ্ছে না, এখন সব কিছুতেই সম্পৃক্ত হতে হবে এবং কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।’
একই কথা উচ্চারিত হলো প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর মুখেও। আজ (মঙ্গলবার) সকালে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে নান্নু জানান, টেস্ট দল নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন তারা।
প্রধান নির্বাচক জানান, ‘আগামী বৃহস্পতিবার আমরা বসবো। সেখানেই জিম্বাবুয়ের সাথে হোম সিরিজের দল নিয়ে কথা বলব।’
নান্নুর কথায় পরিষ্কার ইঙ্গিত, টেস্ট দলে কিছু পরিবর্তন আসবে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের একাধিক বাদ পড়তে পারেন। সরাসরি কারও নাম না বললেও প্রধান নির্বাচকের কণ্ঠে রীতিমত বিরক্তি। তবে আভাস ইঙ্গিতে বোঝা গেছে, সেই বিরক্তির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
দলের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার হয়েও দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং করেছেন রাওয়ালপিন্ডি। প্রথম ইনিংসে ২৫ রানে সেট হয়ে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে নাসিম শাহর হ্যাটট্রিক বলটি না ঠেকিয়ে শট খেলতে যান, ক্যাচ দেন স্লিপে। তার এই দৃষ্টিকটু আউট নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে ভীষণ।
কাজেই ধরে নেয়া যায়, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ম্যাচের হোম টেস্টে রিয়াদের থাকার সম্ভাবনা খুব কম। রিয়াদ একা নন, দলে একাধিক নবীন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারের অন্তর্ভূক্তির চিন্তাভাবনা চলছে।
এদিকে, ১২ ফেব্রুয়ারি বিকালে রাজধানীতে পৌঁছেও বিশ্রাম পাবেন না জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। প্রধান নির্বাচকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচদিনের অনুশীলন ক্যাম্প শুরু হবে। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শেরে বাংলায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট শুরু।
এমএমআর/জেআইএম