ত্রিশ বছরে প্রথম, টাইগার স্কোয়াডে নেই কোনো বাঁহাতি স্পিনার
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আর বাঁহাতি স্পিনার যেনো একে অপরের পরিপূরক। হোক তা টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি; টাইগাররা খেলছে আর বাঁহাতি স্পিনার দলে নেই বা থাকবেন না- এ যেনো ভাবনারও বাইরে। সেই টেস্ট অভিষেক আর টি-টোয়েন্টি খেলা শুরুর ম্যাচ থেকেই টিম বাংলাদেশে ছিলেন অন্তত একজন বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার।
২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর খুলনায় দেশের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টিম বাংলাদেশের প্রথম একাদশে ছিলেন তিন বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক, আব্দুর রাজ্জাক আর সাকিব আল হাসান। তার আগে ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে টেস্ট অভিষেকেও একাদশের অন্যতম অপরিহার্য সদস্য ছিলেন বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক।
তবে ওয়ানডে দলে অবশ্য শুরু থেকে ছিলেন না কোনো বাঁহাতি স্পিনার। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে প্রথম বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার হলেন এনামুল হক মনি। তিনিও জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ওয়ানডে খেলার সুযোগ পান দেশের ওয়ানডে অভিষেকের প্রায় চার বছর পর।
বলার অপেক্ষা রাখে না, একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ, শ্রীলঙ্কার মোরাতোয়ায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। ঐ ওয়ানডেতে ছিলেন না কোনো বাঁহাতি স্পিনার। টিম বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপে পেসার ছিলেন চারজন জাহাঙ্গীর শাহ বাদশাহ, সামিউর রহমান সামি, গোলাম নওশের প্রিন্স আর গোলাম ফারুক সুরু।
এর দু’বছর পর ১৯৮৮ সালে দেশে এশিয়া কাপেও খেলেননি কোনো বাঁহাতি স্পিনার। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ প্রথম বাঁহাতি স্পিনার খেলায় ১৯৯০ সালের ২৮ এপ্রিল। সেবার শারজায় অস্ট্রেলেশিয়া কাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে খেলেছিলেন বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক মনি। তিনি ১০ ওভারে খরচা করেন ৭২ রান, ছিলেন উইকেটশুন্য। সঙ্গে ছিলেন তিন পেসার জাহাঙ্গীর শাহ বাদশাহ, গোলাম নওশের প্রিন্স ও গোলাম ফারুক সুরু ও জেন্টল মিডিয়াম পেসার ছিলেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু।
ঐ অস্ট্রেলেশিয়া কাপে নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচের পর একই বছর এশিয়া কাপে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। সেখানেও বাঁহাতি স্পিনার ছিলেন এনামুল হক মনি। সেই থেকে পর্যায়ক্রমে এনামুল হক মনি, মোহাম্মদ রফিক, আব্দুর রাজ্জাক, এনামুল হক জুনিয়র, সাকিব আল হাসান, মানজারুল ইসলাম রানা, ইলিয়াস সানি, আরাফাত সানি, তাইজুল ইসলাম, সানজামুল ইসলাম, সাকলাইন সজিব আর নাজমুল অপু- প্রমুখ বাঁহাতি স্পিনার ছিলেন টিম বাংলাদেশের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।
১৯৯০ সালের ২৮ এপ্রিল শারজায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এনামুল হক মনির খেলা দিয়ে শুরু বাংলাদেশের ক্রিকেটে বাঁহাতি স্পিনারদের পথ পরিক্রমা। তারপর থেকে ওয়ানডে, টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি দলে বাঁহাতি স্পিনার থাকাটা একরকম ‘রীতি’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল টিম বাংলাদেশের।
বিশেষ করে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ও ২০০০ সালের টেস্ট অভিষেক এবং ২০০৬ সালে টি-টোয়েন্টি খেলা শুরুর পর থেকে বাংলাদেশের স্কোয়াডে বাঁহাতি স্পিনার ছিলো না- এমন নজির নেই। এবার প্রায় ত্রিশ বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের মধ্য দিয়ে থামলো টাইগার স্কোয়াডে বাঁহাতি স্পিনারদের পথ-পরিক্রমা। কেননা চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে হতে যাওয়া সিরিজের জন্য ঘোষিত স্কোয়াডে নেই কোনো বাঁহাতি স্পিনার।
কেনো যেন মনে হচ্ছে, ধীরে ধীরে ঐ বাঁহাতি স্পিনার খেলানোর চিন্তা থেকে সরে আসতে চাচ্ছে বাংলাদেশ। টেস্ট, ওয়ানডেতে না হলেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাঁহাতি স্পিনার খেলানোর চিন্তা বাদ দিয়ে চেয়ে অফ ও লেগস্পিনার খেলানোকেই যুক্তিযুক্ত ভাবছেন বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকরা।
ইতিহাস জানাচ্ছে, গতবছর নভেম্বরে ভারতের মাটিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের স্কোয়াডে ছিলেন দুজন বাঁহাতি স্পিনার (আরাফাত সানি আর তাইজুল ইসলাম)। তবে তাদের বাইরে রেখেই একাদশ সাজিয়েছিল বাংলাদেশ। দিল্লী (৩ নভেম্বর ২০১৯), রাজকোট (৭ নভেম্বর ২০১৯) আর নাগপুরে (১০ নভেম্বর ২০১৯) তিন ম্যাচের একটিতেও কোন বাঁহাতি স্পিনার খেলানো হয়নি।
আর এবার পাকিস্তান সফরে প্রায় ত্রিশ বছর পর প্রথমবারের মত একজন বাঁহাতি স্পিনারও নেই বাংলাদেশের স্কোয়াডে। তার মানে ১৪ বছর টানা টি-টোয়েন্টি খেলার পর এই প্রথম স্কোয়াডে একজনও বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার নেই বাংলাদেশ দলে। ১৫ জনের বাংলাদেশ দলে নেই তাইজুল, আরাফাত সানি, সানজামুল বা নাজমুল অপুর কেউ।
তাদের বদলে লেগস্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবেই আস্থা নির্বাচকদের। সঙ্গে রাখা হয়েছে অফস্পিনার মেহেদী হাসানকে। কেন হঠাৎ করে বাঁহাতি স্পিনারের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসা? তবে কি এখন আর বাঁহাতি স্পিনার খেলানোর যৌক্তিকতা অনুভব করে না বাংলাদেশ? নাকি কোয়ালিটি বাঁহাতি স্পিনারের অভাব?- এসব কৌতূহলি প্রশ্ন অনেকের মুখেই।
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে এসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন নির্বাচক হাবিবুল বাশার। তার ব্যাখ্যা, বাঁহাতি স্পিনারদের বেশিরভাগই ফর্মহীনতায় ভুগছে। বিপিএলে কেউ ভাল করতে পারেনি। কারো বোলিং আহামরি মানে পৌঁছেনি। এটিই দলে কোনো লেফট আর্ম অর্থোডক্স স্পিনার না নেয়ার মূল কারণ।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘আসলে এ মুহূর্তে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে যারা খেলছে, সেই তাইজুল, আরাফাত সানি, নাজমুল অপু আর সানজামুল ইসলাম- কারোরই তেমন ফর্ম নেই। একজনও বিপিএলে সুবিধা করতে পারেনি। তাদের তুলনায় বরং তরুণ নাসুম আহমেদ অনেক ভাল ও সমীহ জাগানো বোলিং করেছে।’
তবে বাশারের ব্যাখ্যা, বয়সে তরুণ ও অনভিজ্ঞ নাসুম আহমেদকে এখনই পাকিস্তান সফরে পাঠানোটা যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি তাদের কাছে। এটা খুব তাড়াহুড়ো হয়ে যেত তার জন্য। তাই তাকে নেয়া হয়নি। তবে তার দিকে নির্বাচকদের চোখ ঠিকই ছিলো।
পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ দল
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, আফিফ হোসেন ধ্রুব, নাইম শেখ, নাজমুল হাসান শান্ত, মোহাম্মদ মিঠুন, মেহেদী হাসান, আমিনুল বিপ্লব, মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম, রুবেল হোসেন, আল-আমিন হোসেন ও হাসান মাহমুদ (নতুন)
এসএএস/পিআর