বিপিএল ফাইনালে জনসমুদ্র শেরে বাংলায়
‘পুরো বিপিএলে সবমিলিয়েও তো এত মানুষ দেখিনি এখানে। আজকে সেই সকাল থেকেই মানুষের ভিড়। দোকানের সামনে থেকে সরাতেও পারছি না’- কথাগুলো বলছিলেন মিরপুর একাডেমি মাঠের বাইরে থাকা (স্টেডিয়ামের ১ নম্বর গেটের পাশে) গগন ফাস্টফুডের এক কর্মচারী।
সেই দোকানের সামনের রাস্তায় তখন অন্তত ২০০-৩০০ জন মানুষের জটলা। তারা সবাই চাতক পাখির মতো তাকিয়ে টিকিট কাউন্টারের দিকে। সবার চাওয়া একটি টিকিট, যা রীতিমত পরিণত হয়েছে সোনার হরিণে।
অথচ দুপুর ৩টার আগেই কাউন্টার থেকে বলে দেয়া হয়েছিল, শেষ হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের সব টিকিট। এখন আর কাউন্টারের সামনে ভিড় করে মিলবে না কোনো টিকিট।
কিন্তু এই বলাতে কি আর টিকিটের অপেক্ষায় থাকা মানুষের মন ভরে? তাই সবাই অপেক্ষা করতে থাকেন ইতিবাচক কোনো ঘোষণার, যাতে করে পেতে পারেন খুলনা টাইগার্স ও রাজশাহী রয়্যালসের মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচটি মাঠে বসে দেখার সুযোগ। কিন্তু তাদের বেশিরভাগকেই ফিরতে হয়ে ব্যর্থ মনোরথে।
খেলা শুরুর সময় যত এগিয়েছে স্টেডিয়াম চত্বরে মানুষের ভিড় ততই বেড়েছে। বিশেষ করে স্টেডিয়ামের ২ নং ও ১ নং গেটে মানুষের ভিড় যেন তখন পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। মাঠে ঢোকার লাইনে দাঁড়ানো ছিলো অন্তত ৪০০-৫০০ মানুষ। আর লাগোয়া রাস্তায় টিকিটের অন্বেষণে থাকা মানুষের সংখ্যা যেন কয়েক হাজার। যাদের হাতে টিকিট আছে, তারা সবাই মুখে রাজ্যের হাসি নিয়ে প্রবেশ করছেন মাঠে। আর বাকিরা ইতিউতি করছেন একটি টিকেটের জন্য।
এই সুযোগ বেশ করে লুফে নিয়েছেন কতিপয় অসাধু ব্যক্তি। যারা কালোবাজারির মাধ্যমে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছিল আগে থেকেই সংগ্রহ করা টিকিটগুলো। স্টেডিয়ামের মূল গেট তথা ১ নম্বর গেটের কাছেই একটি জটলায় নজর দিতেই দেখা গেল কালোবাজারি যেন স্বয়ং বিসিবির সঙ্গেই জড়িত। কেননা তার গলায় ঝুলছিলো বিসিবির দেয়া ভলান্টিয়ার আইডি কার্ড আর হাতে ছিলো শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ডের অন্তত ১৫-১৬টি টিকিট।
কথা বলতে চেষ্টা করলে, এ প্রতিবেদকের গলায় ঝুলানো মিডিয়া অ্যাক্রেডিটিশন কার্ড দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে টিকিটগুলো পকেটে পুরে জটলা ভেঙে দিলেন সেই কালোবাজারি। মুখ দিয়ে একটা 'টু' শব্দও না করে হাঁটা ধরলেন উল্টো পথে। ভিড়ের মধ্যে আর অনুসরণ করা যায়নি তাকে। এমন আরও বেশ কিছু জটলা দেখা গেলো ২ নম্বর গেটের কাছেও। যেখানে অজ্ঞাত পরিচয় কতিপয় ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ছিলেন সাদা খাম হাতে নিয়ে। তাদের ঘিরে ছিলেন টিকিটের অপেক্ষায় থাকা দর্শকরা।
তবে কালোবাজারির বিষয়টি বাদ দিলে বিপিএলের ফাইনালকে ঘিরে দর্শকদের আগ্রহ সত্যিই বিস্ময় জাগানিয়া। কেননা পুরো টুর্নামেন্টের বেশিরভাগ ম্যাচেই দেখা গেছে কাউন্টারে বসে মাছি মারছেন টিকিট বিক্রেতারা। স্টেডিয়ামের গ্যালারিও ছিলো ধূ ধূ মরুভূমি। শুক্রবারের ম্যাচগুলোতে শুধু দেখা মিলতো দর্শকের। অন্যান্য দিনগুলোতে একই দৃশ্য, শূন্য গ্যালারি।
সে তুলনায় ফাইনাল ম্যাচে উৎসাহ-আগ্রহ নিয়েই মাঠে এসেছেন দর্শকরা। স্টেডিয়ামে ঢোকার লাইনে দাঁড়িয়েই একদল স্লোগান দিচ্ছিলো ‘খুলনা, খুলনা’, তো আরেকদল প্রতিউত্তরে হর্ষ্বধ্বনি তুলেছে রাজশাহীর নাম মুখে নিয়ে। একইসঙ্গে মুশফিক-রুশো, লিটন-রাসেলদের নিয়েও শোনা গেছে উচ্চস্বরের স্লোগান। খেলা শুরুর ঘণ্টাচারেক আগে থেকেই গেটের বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন এসব দর্শক। পরে মুশফিক-লিটনরা মাঠে নামার আগেই তারা পরিপূর্ণ করেছেন শেরে বাংলার গ্যালারি।
ঠিক যেমনটা দেখা যায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের আন্তর্জাতিক ম্যাচে, তেমনই দর্শকের ঢল শেরে বাংলায়। খেলার শুরুর আগে রাজশাহী ও খুলনার খেলোয়াড়দের অনুশীলনের সময়েও তুমুল স্লোগান ও করতালিতে মাঠ গরম করে রেখেছেন তারা।
এরই মাধ্যমে পুরো আসরের মধ্যে সবচেয়ে জমজমাট ম্যাচেই দেখা মিলেছে প্রাণশক্তিতে ভরপুর শেরে বাংলার। যেন প্রায় এক মাসের অপেক্ষার পর প্রাণ ফিরে এসেছে দেশের হোম অব ক্রিকেটে।
এসএএস/এমএমআর/পিআর