ফাইনালের জন্য বড় ‘পার্টি’ জমিয়ে রাখলেন রাসেল
শোয়েব মালিক ও ইরফান শুক্কুরের মন্থর ব্যাটিংয়ে তখন রাজশাহীর জয়ের সম্ভাবনা কমছিলো একটু একটু করে, নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে ফাইনালের পথেই ছুটছিল চট্টগ্রাম। তখনও প্রেসবক্সে শোনা যাচ্ছিলো, ‘এই ম্যাচ শুধুমাত্র আন্দ্রে রাসেলই জেতাতে পারেন। নয়তো ফাইনালে দেখা যাবে দুই ভায়রা ভাইয়ের (মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহীম) লড়াই।’
সেই রাসেল যখন উইকেটে এলেন, তখন ম্যাচ অনেকটাই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের মুঠোয়। রাজশাহী রয়্যালসকে জিততে হলে করতে হতো ৪০ বলে ৮৫ রান। সেই সমীকরণ পরে হয় ৩০ বলে ৭৬ রান। ইরফান-মালিক দুইজনই সাজঘরে ফিরে গেলে নিষঙ্গ যোদ্ধা বনে যান রাজশাহীর অধিনায়ক।
তাই বলে রণে ভঙ্গ দেননি তিনি। রুবেল হোসেনের করা ১৬তম ওভারে ১৯ ও রায়াদ এমরিটের করা ১৭তম ওভারে ২০ রান নিয়ে সমীকরণটা ১৮ বলে ৩৭ রানে নামিয়ে আনেন রাসেল। তবে ১৮তম ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেন রুবেল। প্রথম পাঁচ বল ডট দিয়ে ছক্কা হজম করেন শেষের বলে।
রুবেলের এমন ওভারের ঝালটা যেনো ১৯তম ওভার করতে আসা মেহেদী হাসান রানার ওপরেই তোলেন রাসেল। তখন জয়ের জন্য দরকার ছিলো ১২ বলে ৩১ রান, হাতে উইকেট মাত্র দুইটি। বড় শটের চেষ্টা না করে প্রথম বলেই রাসেলকে সিঙ্গেল দেন আবু জায়েদ রাহী।
পরের তিন বলে টানা ৬, ৪ ও ৬ মেরে সমীকরণটা ৮ বলে ১৪ রানে পরিণত করেন রাসেল। শেষ বলে সৌভাগ্যবশত চার পেয়ে যান রাহী। ফলে শেষ ওভারে বাকি থাকে মাত্র ৮ রান। আসেলা গুনারাত্নের ২ বলেই ৮ রান তুলে জয় নিশ্চিত করেন রাজশাহীর অধিনায়ক।
যেখানে জয়ের জন্য ৩০ বলে করতে হতো ৭৬ রান, সেখানে মাত্র ২৬ বলেই দলকে জিতিয়ে দেন রাসেল। নিজে অপরাজিত থাকেন ২ চার ও ৭ ছয়ের মারে ২২ বলে ৫৪ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে। জেতেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। উৎফুল্ল মেজাজেই আসেন সংবাদ সম্মেলনে।
যেহেতু ক্যারিবিয়ান, তাই এমন জয়ের পর পার্টি মুডেই থাকার কথা রাসেলের। পুরো সংবাদ সম্মেলন জুড়ে চোখে মুখে মিললো তেমনই ছাপ। কিন্তু মিরপুরের শেরে বাংলায় পার্টি করার মতো ক্লাব নেই বিধায়- তা করা হয়নি রাসেলের। অবশ্য এখনই পার্টি সেরে ফেলতে চান না রাজশাহী অধিনায়ক।
অসাধারণ এক জয়ের পর রাসেলের চোখ এবার শুক্রবারের ফাইনাল ম্যাচের দিকে। সে ম্যাচের জন্যই পার্টি জমিয়ে রাখলেন বলে জানান রাসেল, ‘এখন যদি এখানে পার্টি করার মতো একটা ক্লাব থাকতো! তবে এখনই এতো তাড়াহুড়ো করা যাবে না। কারণ দুইদিনের মধ্যেই আরেকটি বড় ম্যাচ আছে। তাই আমি আজকের পার্টিটা ফাইনালের জন্য জমিয়ে রাখলাম... (চোখ টিপে দেয়া হাসি)।’
দলের অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা যেখানে ব্যাটে-বলে সংযোগ ঘটাতেই ব্যর্থ হচ্ছিলেন, সেখানে উইকেটে এসেই বেধড়ক পিটুনি শুরু করেন রাসেল। অথচ একই উইকেটে তার নামার আগে অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক ২২ বলে ১৪ রান করে আউট হন, বাকিরাও পারেননি তেমন কিছু করতে।
কিন্তু রাসেল পারলেন কিভাবে? উত্তরে বললেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি, যেই বোলিংয়ে আসুক, তাকে উড়িয়ে মারবো। এমন পরিস্থিতিতে খেলতে ভালোবাসি আমি, যখন ওভারে ১২-১৩ রান করে প্রয়োজন থাকে। কখনও কখনও ১৫-১৬ করে লাগলেও আমি উপভোগ করি। এসব চ্যালেঞ্জ আমি খুবই পছন্দ করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি যে আমি শক্তিশালী এবং যতক্ষণ টিকে থাকবো, (জেতা) সম্ভব। আমি সবসময় উন্মুক্ত থাকি এবং আগে থেকে কিছু ঠিক করে রাখি না। আমাদের উইকেট পড়ছিল দেখে খানিক হতাশ ছিলাম। বোলাররা তখন চাপের মধ্যে ছিলো। আপনি যখন উইকেটে টিকে যাবেন, তখন যেকোনো কিছু করার সুযোগও পাবেন।’
এসময় উইকেটে আসার পর নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়ে রাসেল বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা ছিলো একদম শেষপর্যন্ত খেলবো। উইকেট পতন নিয়ে আমি চিন্তা করছিলাম না, কিন্তু যখন একের পর এক আউট হচ্ছিলো সবাই- তখন আমার জন্য চাপ বেড়ে যায়। আমি চাচ্ছিলাম অপরপ্রান্তে কেউ যেনো শুধু সঙ্গ দেয় আমাকে। রাহী পেরেছে, তাকে সাধুবাদ। আমি মনে করি প্রতিটা রান গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। কারণ ম্যাচ অনেকসময় অনেক দিকে মোড় নেয়।’
এসএএস/এমএস