শুধু হিন্দু হওয়ার কারণেই সুযোগ পেতেন না কানেরিয়া!
ফিক্সিংয়ের দায়ে আজীবন তিনি নিষিদ্ধ। তার আগে পাকিস্তানের হয়ে খেলেছিলেন ৬১টি টেস্ট এবং ১৮টি ওয়ানডে। নিষিদ্ধ না হলে হয়তো আরো কিছু ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেতেন। কিন্তু সেই দানিশ কানেরিয়ার পক্ষ নিয়েই এবার যেন বোমা ফাটালেন তারই সাবেক সতীর্থ পেস তারকা শোয়েব আখতার। তিনি দাবি করেছেন, পাকিস্তান দলে শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার কারণেই বাদ দেয়া হতো কানেরিয়াকে।
টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানের হয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। একাধিকবার তার বিষাক্ত স্পিনে প্রতিপক্ষকে মাটিতে নামিয়েছেন লেগ-স্পিনার কানেরিয়া। অথচ তাকে কি না শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার কারণেই ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স সত্ত্বেও কখনো সতীর্থদের বাড়তি প্রশংসা পাননি তিনি। পাকিস্তানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন শোয়েব আখতার।
এখানেই শেষ নয়। হিন্দু হওয়ার কারণে দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে খাবার টেবিলে একসঙ্গে খাবার খাওয়ার বিষয়েও কানেরিয়ার উপর ছিল নিষেধাজ্ঞা। দলের কিছু কিছু ক্রিকেটার কানেরিয়ার সঙ্গে একই টেবিলে খাবার খাওয়ার ব্যাপারেও তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস।
পাশাপাশি তখনকার সময়ে পাকিস্তান ড্রেসিংরুমে ছিল প্রাদেশিকতার (করাচি, পঞ্জাব, পেশয়ার) বিভাজন। কানেরিয়ার পাশে দাঁড়ানো ছাড়াও শোয়েব আখতারকে নাকি লড়াই করতে হয়েছে এই বিভাজনের বিরুদ্ধেও।
দ্বিতীয় হিন্দু ক্রিকেটার হিসেবে পাকিস্তানের হয়ে ৬১ টেস্টে ২৬১টি উইকেট নেওয়া কানেরিয়ার সমর্থনে টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শোয়েব জানিয়েছেন, ‘২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই হিন্দু ক্রিকেটারই আমাদের ম্যাচ জিততে সাহায্য করেছিল। কানেরিয়াকে ছাড়া আমাদের ওই সিরিজ জয় সম্ভব হতো না; কিন্তু কেউ সেভাবে কানেরিয়াকে তার পারফরম্যান্সের জন্য বাহবা পর্যন্ত দেয়নি।’
শোয়েব আখতারের এই বিস্ফোরক অভিযোগকে সমর্থন করেছেন কানেরিয়াও। পিটিআই’কে ফোনে দেয়া সাক্ষাকারে কানেরিয়া বলেন, ‘শোয়েব একজন কিংবদন্তি। বোলিংয়ের মত তার মন্তব্যগুলোও একইরকম ধারালো। আমি যখন জাতীয় দলের হয়ে খেলতাম তখন এ বিষয়ে আমার মুখ খোলা নিষেধ ছিল; কিন্তু শোয়েব ভাই সবসময় আমার পাশে থেকেছে। এছাড়া ইনজি ভাই (ইনজামাম-উল-হক), মোহাম্মদ ইউসুফ, ইউনিস ভাই (ইউনিস খান) সবসময় আমায় সমর্থন জুগিয়েছে।’
একইসঙ্গে জাতীয় দলের যে সকল সতীর্থ তার বিপক্ষে ছিল, খুব শিগগিরই তাদের নাম প্রকাশ্যে আনবেন বলে জানিয়েছেন কানেরিয়া। পাশাপাশি পাকিস্তানের হয়ে খেলার কারণে তিনি ভাগ্যবান এবং সম্মানিত বলেও জানালেন তিনি। অনিল দলপতের পর পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক সার্কিটে খেলা দ্বিতীয় হিন্দু ক্রিকেটার ছিলেন কানেরিয়া।
প্রসঙ্গতঃ ২০০৯ ডারহামে এসেক্সের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেটে স্পট ফিক্সিংয়ে অভিযুক্ত হন কানেরিয়া। এরপর দোষী সাব্যস্ত কানেরিয়াকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা দেয় ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আবেদন করলেও ২০১৩ সালে কানেরিয়ার সেই আবেদন নাকচ হয়ে যায়। অবশেষে টানা কয়েকবছর অস্বীকার করার পর ২০১৮ স্পট ফিক্সিংয়ের কথা স্বীকার করে নেন তিনি।
আইএইচএস/এমএস