টক অব দ্য কান্ট্রি সাকিব আল হাসান
রাত সাড়ে ৩ টার দিকে জাগো নিউজের প্রধান খবর- ‘ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব গোপন, নিষিদ্ধ হচ্ছেন সাকিব’। মাথাটা চক্কর দিলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ততক্ষণে ভাসতে শুরু করেছে পরের দিনের জন্য সবচেয়ে আলোচিত খবরটি।
সকালে দেখা গেলো একটি দৈনিক পত্রিকাও খবরটি ফলাও করে প্রকাশ করেছে। গুরুত্ব পাওয়ার মতো খবরই যে! ব্যক্তিটি যখন সাকিব আল হাসান। যিনি ক্রিকেট মাঠে ব্যাট-বলের নৈপূণ্য দিয়ে আসন পেতে আছেন কোটি মানুষের হৃদয়ে। তার বিরুদ্ধে ওঠা এমন অভিযোগ মানতে কষ্ট হওয়ারই কথা।
অভিযোগ মানতে না পারাটা সাকিব ভক্তদের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। কারণ, তারা বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডারকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতেন, অন্ধভাবে বিশ্বাসও করতেন। যে কারণে, গভীর রাতে অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই ক্রিকেটামোদীরা নানাভাবে সাকিবের বিষেয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া শুরু হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধারের মধ্যে দিয়ে। কারণ, আইসিসির এই শাস্তির প্রসঙ্গটা এমন এক সময় সামনে এসেছে যার কয়েকদিন আগে থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে টালমাটাল অবস্থা।
যার সব কিছুতেই অগ্রণী ভূমিকা ছিল সাকিবের। ক্রিকেটারদের বিনা নোটিশে ধর্মঘট, বিসিবির অনুমতি ছাড়া একটি ফোন কোম্পানির সাথে সাকিবের চুক্তি- এসব নিয়েই বিসিবির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়ে দেশসেরা এ ক্রিকেটারের। যে কারণে, সাকিবের ভক্তদের ধারণা কৌশলে সাকিববে ফাঁসানো হয়েছে। আর সূতো নাড়ছেন বিসিবি সভাপতি।
সাকিবকে প্রশংসায় ভাসিয়ে আর আইসিসি-বিসিবির মুন্ডুপাত করেই ক্ষান্ত হননি ভক্তরা ভারত সফরের আগে কেন টেনে আনা হলো দুই বছর আগের ঘটনা সে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। সাকিবকে এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দাবায়ে রাখতেই একটি চক্র কাজ করছেন- এমন অভিযোগ করা ক্রিকেটপ্রেমীরও অভাব ছিল না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
শুধুই কি সাকিবের পক্ষ নিয়ে প্রতিক্রিয়া? না। উল্টোটাও ছিল। সাকিব এত কিছু বোঝেন আর আর এটা বুঝলেন না- জুয়াড়িদের প্রস্তাব গোপন রাখলে বিপদে পড়তে হবে। তাও একবার নয়, তিনবার। কেউ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, কেউ আবার হেসেছেন। কেউ বলেছেন ভালোই হয়েছে-বেটা বড্ড বেড়েছিল।
একদিন পর ঐতিহাসিক সফরে ভারত যাবে ক্রিকেট দল। কারা থাকছেন দলে, কারা থাকছেন না- এ নিয়ে কোনো আলোচনাই ছিল না সারাদিন। আলোচনা ওই একটাই- সাকিব আল হাসান। সকালে সচিবালয়ে এ নিয়ে দীর্ঘ সময় কথা বলতে হয়েছে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপিকে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে মিডিয়াকে সাকিবের পক্ষে থাকার আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম।
বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের আসল এজেন্ডা ছাড়িয়ে প্রধান আলোচনায় চলে আসলো সাকিব ইস্যু। প্রধানমন্ত্রী তার আজারবাইজান সফর সম্পর্কে ব্রিফ করার পর তার কাছে প্রথম প্রশ্নটিই ছিল সাকিবকে নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীও বেশ সময় দিয়েছেন সাকিব আর ক্রিকেট ইস্যু নিয়ে।
সাকিব ভক্তদের বদ্ধমূল বিশ্বাস ছিল এটা ভুল অভিযোগ। তাদের ধারণা-সাকিব যে খেলোয়াড়দের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তার ফল ভোগ করছেন, ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে।
কিন্তু সন্ধ্যার আগেই যখন আইসিসি সাকিবের বিরুদ্ধে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা দেয় এবং সাকিবও আইসিসির দেয়া শাস্তি মেনে নিয়ে তরুণদের এ থেকে শিক্ষা নেয়ার উপদেশ দিয়েছেন, নিজের ফেসবুক ওয়ালে তখন ভক্তদের প্রতিক্রিয়াগুলো মোড় নিতে থাকে অন্য দিকে। সাকিবতো আসলেই শাস্তি পাওয়ার মতো কাজ করেছেন। ম্যাচ ফিক্সিং করেননি। কিন্তু জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন রেখেছেন।
এটা কি সকিবের জানা ছিল না? ছিল। হয়তো সাকিব মনে করেছেন কিছু হবে না। গুরুত্ব দেননি। হয়তো ভুল করে, কিংবা গোয়াতুর্মী করে। যেভাবেই হোক সেটা অন্যায়। শাস্তিও পেয়েছে।
তবে সাকিবের মতো ক্রিকেটারের কাছ থেকে এ ধরণের কাজ গ্রহনযোগ্য? মোটেও না। সে তো আর হাবাগোবা পোলা নয়, অনেক চালাক-চতুর। যে সাকিব ছিলেন দেশের ক্রিকেটের অনন্য এক বিজ্ঞাপন, সেই হয়ে গেলো খারাপ দৃষ্টান্ত।
সাকিবকে একজন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হিসেবে যেমন ভক্তরা মনে রাখবেন, তেমন তাদের কস্টের জায়গায়ও। তারা যে চিরদিন বুক চিতিয়ে চলা সাকিবকেই দেখতে চেয়েছিলেন, মাথা নত করা সাকিবকে নয়। কিন্তু আজ সাকিবের মাথা নত।
তবে সব প্রতিকূতা অতিক্রম করে বাংলাদেশের ক্রিকেট মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাক-সেটাই সবার চাওয়া। কারণ, ক্রিকেট কেবল বিসিবি, পাপন বা সাকিবের নয়-এটা দেশের সব মানুষের।
আরআই/আইএইচএস/জেআইএম