আফগানদের সঙ্গে লড়াইটাও করতে পারল না টাইগাররা
ঘরের মাঠে টেস্ট হারের ক্ষত এখনও শুকায়নি। মিরপুরে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম দেখাতেই আফগানিস্তানের কাছে আরও একটি হারের লজ্জায় পড়লো বাংলাদেশ। সেই হারটা আবার লড়াই করে নয়, একদম হেসেখেলেই টাইগারদের উড়িয়ে দিয়েছে রশিদ খানের দল। বাংলাদেশ হেরেছে ২৫ রানে।
লক্ষ্য ছিল ১৬৫ রানের। শুরুতেই চমক বাংলাদেশের। ওপেনিংয়ে লিটন দাসের সঙ্গে দেখা গেল মুশফিকুর রহীমকে। তবে মুশফিক স্ট্রাইকিং এন্ড পর্যন্ত যেতে পারলেন না, তার আগেই ধাক্কা টাইগার শিবিরে।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই মুজিব উর রহমানকে তুলে মারতে গিয়ে কভারে ক্যাচ হন লিটন (০)। মুশফিকও নতুন ব্যাটিং অর্ডারে মানিয়ে নিতে পারেননি। ৩ বলে ৫ রান করেই পেসার ফারিন আহমেদকে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
চাপ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে ১৩ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৫ রান করে তিনিও ধরেন সেই পথ। মুজিব উর রহমানের ওই ওভারেই গোল্ডেন ডাকে ফেরেন সৌম্য সরকার, এলবিডব্লিউ হয়ে। ৩২ রানে ৪ উইকেট হারায় টাইগাররা।
দল তখন মহাবিপদে। সেখান থেকে বাংলাদেশকে টেনে নেয়ার চেষ্টা করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর সাব্বির রহমান। পঞ্চম উইকেটে ৫০ বলে ৫৮ রানের জুটি গড়েন তারা।
অবশেষে এই জুটিটি ভেঙে দেন গুলবাদিন নাইব। ১৪তম ওভারে তার স্লোয়ার এক ডেলিভারি বুঝতে না পেরে ব্যাট চালিয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ, বাউন্ডারিতে সহজ ক্যাচ ধরেন নাজিব তারাকাই। ৩৯ বলে ৪ বাউন্ডারিতে মাহমুদউল্লাহ তখন ৪৪ রানে। পরের ওভারে আউট সাব্বিরও, ২৭ বলে করেন ২৪।
ম্যাচটা আসলে তখন পুরোপুরিই হাত থেকে ফসকে গেছে। পরের ব্যাটসম্যানরা অতিলৌকিক কিছু করতে পারেননি। আগের ম্যাচের নায়ক আফিফ হোসেন ধ্রুব ১৪ বলে ২ বাউন্ডারিতে করেন ১৬ রান। মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাট থেকে আসে ১০ বলে ১২। আর শেষদিকে ৭ বলে ১৫ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলেন মোস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের ২ বল বাকি থাকতেই বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ১৩৯ রানে।
আফগানদের পক্ষে বল হাতে ছড়ি ঘুরিয়েছেন মুজিব উর রহমান। ১৫ রানে তিনি নেন ৪টি উইকেট। এছাড়া গুলবাদিন নাইব আর রশিদ খান নেন ২টি করে উইকেট।
এর আগে মোহাম্মদ নবীর ৫৪ বলে ৮৪ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংসে ৬ উইকেটে ১৬৪ রান তুলে আফগানিস্তান। অথচ টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই চাপে পড়েছিল দলটি।
ইনিংসের প্রথম ডেলিভারি, আফগানিস্তানের ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ বলটা ডিফেন্সই করেছিলেন। কিন্তু মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন এমনই আনপ্লেয়বল এক ডেলিভারি দিলেন, ডিফেন্ড করেও উইকেটটা ধরে রাখতে পারলেন না আফগান ওপেনার।
সাইফউদ্দীনের আউটসুইং ডেলিভারিটি উইকেটে লেগে স্ট্যাম্প কয়েক চক্কর ঘুরতে ঘুরতে বাতাসে ভাসতে থাকে। আসলেই চোখ ধাঁধিয়ে দেয়ার মতো এক ডেলিভারি, বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন সবাই।
শুরুতে উইকেট হারিয়েও অবশ্য থেমে থাকেনি আফগানিস্তান। দ্বিতীয় ওভার চলছিল তখন। সাকিবের চতুর্থ বলটি তুলে মারতে গিয়েছিলেন আরেক ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই। কিন্তু বল অনেক ওপরে ওঠলেও সীমানা দড়ি পর্যন্ত যায়নি, ১ রানেই লিটন দাসের ক্যাচ হন জাজাই।
তৃতীয় ওভারে এসে আরও এক উইকেট তুলে নেন সাইফউদ্দীন। ১৩ বলে ১১ রান করে নাজিব তারাকাই লেগ সাইডের বাউন্ডারিতে হন সাব্বির রহমানের ক্যাচ।
তৃতীয় উইকেটে একটু প্রতিরোধ নাজিবুল্লাহ জাদরান আর আসগর আফগানের। তাদের ১৭ বলে ২১ রানের জুটিটি ভাঙেন সাকিব, নাজিবুল্লাহকে (৫) মিডঅফে সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানিয়ে। ৪০ রানে ৪ উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
সেখান থেকে বড় এক জুটি মোহাম্মদ নবী আর আসগরের। ৫৩ রানেই এই জুটিটি আটকে যেতে পারতো। তাইজুল ইসলামকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ হয়েছিলেন আসগর। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওভারস্টেপিংয়ের কারণে সেই বলটি 'নো' হয়ে যায়।
নবী-আফগানের এই জুটিটিই ঘাম ঝরিয়েছে টাইগারদের। ৬২ বলে ৭৮ রান যোগ করেন তারা। কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। ১৭তম ওভারে আবারও সাইফউদ্দীনের হাতে বল তুলে দেন সাকিব।
আর বল হাতে নিয়েই আরেকবার ঝলক দেখান এই অলরাউন্ডার। ৩৫ বলে ৪০ রান করা আসগরকে সাব্বিরের ক্যাচ বানান দ্বিতীয় বলে, পঞ্চম বলে দুর্দান্ত এক ইনসুইংগারে বোল্ড করেন গুলবাদিন নাইবকে (০)।
তবে নবী ঠিকই হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন, ৪১ বলে। পরের সময়টায় তো আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেন। আফগানিস্তানের বড় সংগ্রহ গড়ার কারিগর ছিলেন আসলে এই অলরাউন্ডারই। ৫৪ বলে ৮৪ রানে অপরাজিত থাকেন নবী, যে ইনিংসে ৩টি চারের সঙ্গে তিনি হাঁকান ৭টি ছক্কা!
বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন সাইফউদ্দীন। তবে প্রথম তিন ওভারে ১৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিলেও শেষ ওভারের ১৭ রান খরচায় মোট দিয়েছেন ৩৩। ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন সাকিব।
এমএমআর/এমএস