‘উইকেটে গিয়ে নিজের মত করেই খেলেছি’
তার ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) খেলার প্রস্তাব ছিল; কিন্তু বিসিবির অনুমতি মেলেনি। কেন তাকে সিপিএল খেলার অনুমতি দেয়া হলো না?
সে প্রশ্নটি মাঝে বেশ বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। তা নিয়ে ছিল দু’রকম ব্যাখ্যা। একপক্ষ বলেছে, এইচপি আর ইমার্জিং দলের অপরিহার্য সদস্য আফিফ হোসেন ধ্রুব। তাই তাকে সিপিএল খেলার অনুমতি দেয়া হয়নি।
আবার অন্য পক্ষের কথা, আসলে নির্বাচকরা কায়মনোবাক্যে চেয়েছিলেন, আফিফকে তিন জাতি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খেলাতে। তাই তাকে সিপিএল খেলার অনুমতি দেয়া হয়নি।
যে কারণেই হোক না কেন, এই ১৯ বছর বয়সী মেধাবি ও সাহসী আফিফের সিপিএল খেলতে না যাওয়াটা তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের জন্যই ভাল হয়েছে।
সিপিএল খেলতে গেলে আজ শুক্রবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো আফিফের দেখা মিলতো কি? মিলতো না। কারণ, তাহলে এখন তার ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে থাকতে হতো। সিপিএল খেলতে না পারা খুলনার এ তরুণ এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক নতুন সম্ভাবনা।
শুক্রবার রাতে দলের সিনিয়র, পরিণত, অভিজ্ঞ আর তারকাদের লজ্জায় ডুবিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দল জিতিয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসলেন আফিফ।
লক্ষ্য মোটেই বড় ছিল না। ১৪৫; কিন্তু সেই সামান্য কটা রান করতেই নাভিঃশ্বাস উঠে গেলো। দুই ওপেনার লিটন দাস-সৌম্য সরকার, অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, অনেক ম্যাচ জয়ের নায়ক মুশফিকুর রহীম, অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ আর নিজের মেধার প্রতি সুবিচার করতে না পারা সাব্বির হোসেন বোর্ডে ৬০ রান জমা পড়তেই ফিরে গেলেন সাজঘরে।
এমন এক কঠিন চাপ ও চরম সংকটের মুহূর্তে উইকেটে নেমেই জিম্বাবুইয়ান ফাস্ট বোলার মাদজিভাকে সোজা ব্যাটে মাথার ওপর দিয়ে বাউন্ডারি কাঁকিয়ে দিলেন। সেই শুরু, এরপর যত সময় গড়িয়েছে, ততই আত্মবিশ্বাস আর আস্থা বেড়ে যাওয়া। নিজেকে খুঁজে পাওয়া।
এরপর দলকে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দিয়ে ২০০.০০ স্ট্রাইকরেটে ৫২ রান করে ফিরলেন সাজ ঘরে। আর ওই ইনিংস খেলেই জয়ের নায়ক এবং ম্যাচ সেরা পারফরমারের পুরস্কার পেয়ে গেলেন তিনি।
মাত্র ১৯ বছর বয়সে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে এমন স্বপ্নিল সাফল্যে উদ্বেলিত হয়ে পড়াই স্বাভাবিক; কিন্তু আফিফ হোসেন ধ্রুবকে দেখে মেটেই পুলকিত মনে হলো না। বিসিবির হেড অফ মিডিয়া রাবিদ ইমামের সাথে খেলা শেষে প্রেস কনফারেন্সে আসলেন ধীর পায়ে। কথা বললেন, মেপে মেপে। ছোট্র কথায় সব প্রশ্নের জবাব দিলেন বৃহত্তর খুলনার এ তরুণ বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান কাম অফ স্পিনার।
শরীরি অভিব্যক্তি দেখে উচ্ছসিত আর উল্লসিত মনে না হলেও মুখে বললেন, এমন এক ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে পেরে ভাল লাগছে। সিপিএল খেলতে না পারা নিয়ে কোনই আক্ষেপ নেই তার।
তাইতো মুখে এমন কথা, ‘আসলে সিপিএল খেলতে যাবার অনুমতি না পাওয়ায় আমার একটুও মন খারাপ হয়নি। কারণ, আমি এইচপি আর ইমার্জিং দলের হয়ে খেলতে পেরেছি। মনোযোগ ও মনোসংযোগ দিতে পেরেছি।’
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঠিক এই শেরে বাংলায় টি-টোয়েন্টি অভিষেকে শূন্য রানে ফেরার ১ বছর ৭ মাস পর আজ দ্বিতীয় ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েই বাজিমাত।
এটা কি করে সম্ভব? এর পিছনের কাহিনী কি? আজ মাঠে নামার আগে কি সেই প্রথম ম্যাচের তিক্ত স্মৃতি জগে উঠেছিল? প্রেস কনফারেন্সে এমন প্রশ্নের জবাবটাও বেশ আত্মবিশ্বাস, আস্থা আর সাহস নিয়ে দিলেন আফিফ। বললেন, আসলে আমার মাথায় সেটা কাজ করেনি। আমি গত এক বছরের বেশি সময় এইচপি ও অন্যান্য দলে যত সুযোগ পেয়েছি, তা কাজে লাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছি এবং নিজেকে তৈরি করার চেষ্টাও ছিল। সেই চেষ্টাটাই কাজে লেগেছে।’
উইকেটে গিয়ে চরম বিপদে ও কঠিন সংকটেও প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকানোর সাহস দেখিয়েছেন। এর পিছনের রহস্য কি? এ প্রশ্ন করা হলে আফিফ বলেন, ‘আমাকে কোচ আগে চিনতেন না। আমার সম্পর্কে জানাও ছিল না তার। এরপরও মাঠে নামার সময় তিনি (হেড কোচ) আর অধিনায়ক সাকিব ভাই বলেছেন, আমার স্বাভাবিক ঢং ও ছন্দে খেলতে। আমিও উইকেটে গিয়ে নিজের মত করেই খেলেছি। তবে ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারিনি। যদি শেষ করে আসতে পারতাম, তাহলে আরও বেশি ভালো লাগতো।’
এআরবি/আইএইচএস/