দুই ওপেনারকেই পরে নামানোর বুদ্ধি করেছিলেন সাকিব, কিন্তু...
লক্ষ্য ৩৯৮ রানের। প্রায় দেড়শ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড মাত্র ৪টি। আর বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ডটি মাত্র ২১৫ রানের। ২০০৯ সালের গ্রেনাডা টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রান তাড়া করতে নেমে ২১৭ রান করেছিল সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশ।
এবারও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সে ম্যাচে যেমন ৯৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছিলেন সাকিব, এ ম্যাচেও শেষদিনে তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। বাঁহাতি সৌম্য সরকার কিংবা পরের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে নিয়ে করতে হবে আরও ২৬২ রান। যা একপ্রকার অসম্ভবই বলা চলে।
তবে বাংলাদেশ দলের কাছে এ কাজটিকে খুবই সম্ভব মনে হচ্ছিলো ইনিংসের শুরুতে। বিশেষ করে দিনের প্রথম সেশনে বিনা উইকেটে ৩০ রান করার পর বিশ্বাসটা দৃঢ় হয়েছিল অধিনায়ক সাকিবের, দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে এ কথাই জানিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ এক সংবাদ সম্মেলনে অনেক কথার ভিড়ে সাকিব বলেন, ‘আমার কাছে ৩০ রান পর্যন্ত মনে হয়েছিল সম্ভব। কারণ উইকেটটা এখনো খারাপ হয়নি। যথেষ্ট ভাল আছে। রিস্ট স্পিনাররা ওদের বাড়তি সুবিধা পাবেই যেটা যে কোন ফ্লাট উইকেটেই পায় চার নম্বর বা পাঁচ নম্বর দিনে। কিন্তু উইকেটটা আনপ্লেয়েবল না।’
উইকেটটা ওত কঠিন না। কিন্তু দিন শেষে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১৩৬। ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা বেটার এপ্লিকেশন কিংবা বড় মন নিয়ে যদি খেলতে পারতাম। আরও ভালো কিছু করা সম্ভব হত। আমি যেমন শুরুতে বলেছিলাম ব্যাটসম্যানরা পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। উইকেট হয়তো আমরা যেমন চেয়েছিলাম তেমন পাইনি। তার মানে এই না যে আমরা ভেঙে পড়ব। এখানে আমাদের কোয়ালিটি শো করার জায়গা ছিল যেটা আমরা খুব ভালভাবে ব্যর্থ হয়েছি।’
চারশ রান তাড়ার বিশ্বাস যে শুধু মুখে মুখেই ছিল না, বরং দলের পরিকল্পনাতেও ছিল- তাও জানালেন সাকিব। আর এ কারণেই ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করে ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন করা হয়েছে শুরুর দিকে। ফলে সৌম্য সরকারের বদলে ওপেনে দেয়া হয় লিটন দাসকে এবং লোয়ার মিডল অর্ডার থেকে তিন নম্বরে উঠিয়ে আনা হয়েছিল মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। যাতে করে আফগান অফস্পিনার মোহাম্মদ নবীকে অকার্যকর করে রাখা যায়।
তবে অধিনায়ক সাকিবের ইচ্ছে ছিলো, লিটন দাসের সঙ্গে মোসাদ্দেককেই ওপেনে পাঠানোর। এ কথা জানিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমি তো কালকে এই আলোচনাও করেছি যে দুই ডানহাতি আমি পাঠাব কিনা। আমি মোসাদ্দেককে ওপেন করতে পাঠাতে চেয়েছিলাম। সত্যি কথা, এটা আমি এখন বললাম। সবাই মিলে এই আলোচনার পরে এই প্ল্যান করা হয়েছে যে, এভাবে যাই তাহলে আমাদের কাছে একটা সুযোগ আছে। সকাল বেলা টিম মিটিংয়ে ওটা সেট করে আমরা মাঠে এসেছি। ওই বিশ্বাসটা সবার ছিল। এমন না আমি বিশ্বাস করেছি বা কোচ বিশ্বাস করেছে। পুরো পনেরো জন এই বিশ্বাস করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু যদি আমার সিদ্ধান্ত হতো, মোসাদ্দেক আর লিটন ওপেন করত। যেহেতু আমার সিদ্ধান্ত পুরো ছিল না, সেহেতু সাদমান গিয়েছে। এবং সাদমান খুব ভাল ব্যাট করেছে। ও যদি বড় খেলতে পারত ওইখানে আমাদের একটা জুটি হওয়ার চান্স থাকত। আরেকটি জিনিস, নবী যখন আবার এসেছে আমরা যখন দুজন বাঁহাতি, তখন কিন্তু সাদমানের উইকেট নিয়ে নিয়েছে। আমরা ওই প্ল্যান করেছি যে ওই প্রভাবটা তার না থাকে। তাহলেও একটা দিক আমরা বাঁচলাম।’
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠলো, টেস্ট ক্রিকেটে এভাবে ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন ঝুঁকিপূর্ণ কি-না? সাকিবের জবাব, ‘না। চারশো চেজ করতে গেলে আপনাকে অন্য কিছু করতে হবে। আমরা তো কখনো চারশো চেজ করিনি। যদি দুইশো চেজ করতাম, আমাদের ব্যাটিং অর্ডার ওরকমই থাকত। যেহেতু চারশো চেজ করছিলাম, আমাদের কিছু প্রস্তুতির দরকার ছিল। আমরা প্রথম ইনিংসে তো খেলেছি দুইশোই করেছি। এখান এর থেকে আর কতই-বা খারাপ হতে পারে। ভালো করার ইচ্ছাতেই পরিকল্পনাগুলো করা হয়। যখন পরিকল্পনা কাজে আসে তখন বলা হয়, ওয়াও কি প্ল্যান ছিল। যখন কাজে আসে না তখন মনে হয় প্ল্যানিং ভুল ছিল।’
যে পরিকল্পনায় মোসাদ্দেককে নামানো হয়েছিল, তা একদমই পূরণ করতে পারেননি এ ব্যাটিং অলরাউন্ডার। উল্টো নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে। আউট হওয়ার আগে ১৭ বল খেলে ১২ রান করেছিলেন মোসাদ্দেক।
তার ব্যাপারে সাকিবের মূল্যায়ন, ‘সত্যি কথা বলতে ফার্স্ট ইনিংসে আমরা যতজন ব্যাটিং করেছি সবচেয়ে বেশি কমফর্টেবল ওকে (মোসাদ্দেক) মনে হয়েছে, স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে। আমরা যেহেতু স্পিন বেশি স্পিন ফেস করছিলাম, কাল রাত থেকেই প্ল্যান করা হচ্ছিল যে ও ওপরের দিকে ব্যাট করলে, ফার্স্ট ইনিংসে যেভাবে ব্যাট করেছে ওভাবে করতে পারলে..।’
‘আমাদের চারশ চেজ করতে হলে এরকম কিছু প্লেয়ারকে দরকার হতো যাদের বড় ইনিংস খেলার অভ্যাস আছে বা খেলে অভ্যস্ত। সে কারণেই এই প্ল্যান। একইসঙ্গে নবী যেহেতু বাঁহাতিদের বিপক্ষে অনেক বেশি কার্যকর হবে, সে কারণে আমাদের ডানহাতি বাঁহাতি কম্বিনেশন করার প্ল্যান ছিল। সে কারণে ওকে প্রমোট করা হয়েছিল। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাট করছিল ততক্ষণ খুব ভালো ব্যাটিং করেছে সত্যি কথা। বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এটা ওর ব্যর্থতা। মেনেই নিতে হবে। তবে আমি বলব যে ওপরে না মেরে নিচে মারলে চারটা রান হতো, ও আউটও হতো না। ঐ সময় ও থাকলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো। ফার্স্ট বা সেকেন্ড ইনিংসে যতক্ষণ খেলছে, কখনো মনে হয়নি স্পিনের বিপক্ষে ও আউট হবে’ - যোগ করেন সাকিব।
এসএএস/এমএমআর/জেআইএম