টেস্ট দলে সুযোগ মিলতে পারে ‘প্রায় হারাতে বসা’ এই ওপেনারের
গত এপ্রিলে শেষ হয়েছে প্রিমিয়ার লিগ। তারপর আসলে বাংলাদেশ আর কোন টেস্ট খেলেনি। বিশ্বকাপের ‘দামামা’ বেজে গিয়েছিল। তাই সবাই ওয়ানডে নিয়ে আর সীমিত ওভারের ফরম্যাটের স্পেশালিস্টদের নিয়েই মেতে ছিলেন। টেস্ট স্পেশালিস্টদের নিয়ে কেউ আসলে মাথা ঘামাননি। তবে সেই প্রিমিয়ার লিগের শেষ ম্যাচে বিকেএসপিতে ধারণা মিলেছিল, আবারো টেস্ট দলে ডাক পেতে পারেন জহুরুল ইসলাম অমি।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ঘটনা। আবাহনী আর লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের লিগ নির্ধারণী ম্যাচ চলছিল বিকেএসপিতে। সেই ম্যাচ চলাকালীন তখনকার কোচ আর এখন ‘সাবেক কোচের’ তকমা গাঁয়ে মাখা স্টিভ রোডস এবং প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কথোপকথনটি এখনো কানে বাজে। দৃশ্যটাও মনের আয়নায় জ্বল জ্বল করছে। ব্যাট করছিলেন আবাহনীর দুই টপ অর্ডার জহুরুল ইসলাম অমি আর সৌম্য সরকার।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠের ভিআইপিতে বসে পাশাপাশি খেলা দেখছিলেন স্টিভ রোডস আর নান্নু। আবাহনীর হয়ে সৌম্য সরকারের সাথে ওপেন করতে নামা জহুরুল ইসলাম অমিকে দেখিয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলে উঠলেন, ‘ওর ব্যাটিংটা একটু মন দিয়ে লক্ষ্য করুন। আমরা আগামীতে তাকে টেস্ট দলে নেয়ার কথা ভাবছি। ওর মধ্যে টেস্ট ভাবটা আছে। ব্যাটিং টেকনিকটা বেশ পরিপাটি। ক্রস খেলে কম। সোজা ব্যাটে ঠান্ডা মাথায় বলের মেধা গুণ বিচার করে খেলে।’
স্টিভ রোডস কোনরকম মন্তব্যে না গিয়ে নান্নুকে দুটি প্রশ্ন করলেন। প্রথম প্রশ্ন- আচ্ছা, এই কালো লম্বা সুঠামদেহী আবাহনী ওপেনারের (জহুরুল ইসলাম অমির) বয়স কত? আর দ্বিতীয় প্রশ্ন- সে শর্ট বল কেমন খেলে? বাউন্সারে ভড়কে যায়না তো?
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন উত্তরে বলেছিলেন, ‘নাহ, বয়স বেশি না। ৩০-৩১ হবে। আর ও বাউন্সারে ভয় পায় না। আবার তেড়েফুড়ে পুল-হুকও খেলেনা। না খেলে ছেড়ে দেয় বেশি।’
তখনকার কোচের সাথে প্রধান নির্বাচক নান্নুর সেদিনের কথোপকথনটি যে একদম ভিত্তিহীন ছিল না, তার প্রমাণ দিয়ে দীর্ঘ দিন পর আবার জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছেন জহুরুল ইসলাম অমি।
সেই ২০১৩ সালে শেষবার তিন ফরম্যাটেই খেলেছেন জাতীয় দলের হয়ে। ঐ বছর মার্চে শ্রীলঙ্কার সাথে শ্রীলঙ্কায় শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন জহুরুল। একমাস পর এপ্রিলে হারারাতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট আর ৮ মে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ বার ওয়ানডে খেলেন। এবার তার দিকে চোখ আছে নির্বাচকদের।
দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল ছুটিতে। ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, সৌম্য সরকার এবং সাইফ হাসান-জন চারেক ফ্রন্টলাইন ব্যাটসম্যানের সাথে আছেন জহুরুল অমিও। তবে যেহেতু তামিম নেই। তাই অভিজ্ঞ জহুরুলকে বিশেষ বিবেচনায় রাখার সম্ভাবনা প্রচুর। আর এর মধ্যে ভারতে এক প্রতিযোগিতামূলক দীর্ঘ পরিসরের খেলায় জহুরুল রানও করে এসেছেন।
জহুরুল অমিও আশাবাদি। তাইতো মুখে এমন কথা, ‘প্রতিটি খেলোয়াড়েরই স্বপ্ন জাতীয় দলে খেলার। এই উদ্দেশ্যে প্রত্যেক বছর শুরু করি। আল্লাহর রহমতে এবার প্রিমিয়ার লিগে ভালো পারফর্ম করার পর আমাকে 'এ' দলে ডাকলো। 'এ' দলে মোটামুটি ভালো হয়েছে ব্যাঙ্গালুরুতে। এরপর প্রাথমিক স্কোয়াডে। এখন সবকিছু আমার চেষ্টা এবং আল্লাহর সহায়তার ওপরে। দেখা যাক ইনআশাল্লাহ......।’
এখন মূল স্কোয়াডে জায়গা পেতে কতটা আত্মবিশ্বাসী? জহুরুল বলেন, ‘আসলে আমি চেষ্টা করছি দিন দিন আরো উন্নতি করার এবং ফিটনেস নিয়ে কাজ করার। বাকিটা নির্বাচকদের ওপরে। ওনাদের যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাকে নেবে এবং আমি আমার সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।’
তামিম না থাকায় জাতীয় দলে ওপেনার হিসেবে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটাকে কিভাবে দেখছেন? জহুরুলের জবাব, ‘আসলে তামিম অনেক বড় মানের খেলোয়াড়। তার গ্যাপ পূরণ করাটা কঠিন। এরপরেও এটি বড় একটি সুযোগ সাদমান, ইমরুল, আমি, সৌম্য...যাদেরকে সুযোগ দেবে তাদের জন্য। টেস্ট সবসময় ক্রিকেটের বড় ফরম্যাট। এখানে ভালো পারফর্ম করা গেলে সব ফরম্যাটে পারফর্ম করা সহজ। আমি বলবো যে যেহেতু তামিম নেই, তাই যারা সুযোগ পাবে তাদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ।’
বিসিবির পরিকল্পনায় তাকে রাখা হয়েছে, এজন্য অনেক খুশি জহুরুল। টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যানের ধারণা, তার ব্যাচের যারা আছে তারাও অনেক খুশি হবে। বলেন, ‘বয়স আসলে কোনো ব্যাপার নয়। আপনি যদি ফিটনেস ধরে রাখেন এবং পারফর্মেন্স ভালো করেন- এই দুটি যদি মিলে যায় তাহলে অবশ্যই বয়সটি কোনো বাধা হতে পারে না।’
এআরবি/এমএমআর/এমএস