ব্রড-ওকসদের দিনে সব আলো কেড়ে নিলেন স্মিথ

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৪৩ এএম, ০২ আগস্ট ২০১৯

খবরের শিরোনামে বড় করে থাকতে পারতো শুধুই স্টুয়ার্ট ব্রডের নাম কিংবা অস্ট্রেলিয়ানদের ভিত কাঁপিয়ে দেয়া স্টুয়ার্ট ব্রড-ক্রিস ওকসের নাম। কিন্তু তা হতে দিলেন না অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথ। অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম দিনের সব আলো কেবল স্মিথেরই ওপর।

ইনিংসের ৪০তম ওভারে পেলেন নিজের চতুর্থ উইকেট শিকার করেন ব্রড, তখন ক্রিস ওকসের ঝুলিতেও রয়েছে ৩ উইকেট। এরপরই ঘুরে যায় সব। প্রায় ১৬ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে ফাইফার তথা পাঁচ উইকেট পূরণ করতে ব্রডকে অপেক্ষা করতে হয় ৮১ ওভার পর্যন্ত। মাঝের ৪০ ওভারেই সব আলো কেড়ে নেন ১৬ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করা স্টিভেন স্মিথ।

অবশ্যই, দুজনের প্রেক্ষাপট ছিলো ভিন্ন। বল হাতে টেস্ট ক্রিকেটে সবশেষবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন গতবছরের মার্চ মাসে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেয়ার পর খেলেছেন আরও ১১টি টেস্ট। যার মধ্যে দুবার নিয়েছেন ৪ উইকেট, বেশ কয়েকবার পেয়েছেন ৩ উইকেট। কিন্তু পাঁচ উইকেটের দেখা পাচ্ছিলেন না ডানহাতি এ পেসার।

অবশেষে মর্যাদার অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনেই ফাইফার নিয়ে নিলেন ব্রড। ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় (তার আগে চার্লি টার্নার ৩ বার ও পিটার সিডল ২ বার) বোলার হিসেবে অ্যাশেজের কোনো ম্যাচের প্রথম দিনেই ফাইফার নেয়ার রেকর্ডও গড়েন তিনি। একইসঙ্গে সপ্তম ইংলিশ বোলার হিসেবে অ্যাশেজে উইকেটের সেঞ্চুরিও পূরণ করেন ব্রড।

কিন্তু কিসের কি! দারুণ কীর্তি গড়েও কোথাও নেই ব্রডের নাম। অবশ্য থাকার কথাও নয়। কেননা নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা এক ইনিংস যে খেলে ফেলেছেন স্মিথ। ব্রডের মতো তার সেঞ্চুরিটি ১৬ মাস পরে নয়, তিনি বরং টেস্টই খেলতে নেমেছেন ১৬ মাস পরে। আর তাতেই বাজিমাত বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা এ ব্যাটসম্যানের।

বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির কারণে এক বছর নিষিদ্ধ থাকার পর টেস্টে প্রত্যাবর্তনটা হলো সোজা অ্যাশেজের মতো জমজমাট সিরিজ দিয়ে। এত দীর্ঘ বিরতির পরও ধার কমেনি স্মিথের ব্যাটের। শুধু ইংলিশ বোলার সঙ্গে লড়লেই হতো না স্মিথের, গ্যালারি থেকেও ক্রমাগত ভেসে আসছিল ধুয়োধ্বনি এবং সেই বল টেম্পারিংয়ের ব্যাপারে নানান কটুক্তি।

এত প্রতিকূলতার সঙ্গে যোগ হয় নিজ দলের শীর্ষ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা। ট্রাভিস হেড ৩৫ ও উসমান খাজা ১৩ ব্যতীত আর কেউই পারেননি দুই অঙ্কে যেতে, দল ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে মাত্র ১২২ রানে। সেখান থেকে কেউ হয়তো কল্পনাও করেনি অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস গিয়ে থামবে ২৮৪ রানে। যেখানে স্মিথের একার অবদানই ১৪৪ রান।

শেষের দুই ব্যাটসম্যান (আদতে বোলার) পিটার সিডল ও নাথান লিয়নকে নিয়ে স্মিথ যোগ করেছেন ১৬২ রান। নবম উইকেটে সিডলের সঙ্গে ৮৮ এবং লিয়নকে নিয়ে শেষ উইকেটে ৭৪ রানের জুটি গড়েন স্মিথ। দলীয় ১২২ রানের মাথায় যখন অষ্টম উইকেটের পতন ঘটে, তখন স্মিথ অপরাজিত ছিলেন ৪২ রানে। সেই তিনি দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ব্যক্তিগত সংগ্রহে যোগ করেন আরও ১০২ রান।

স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা কেউই সঙ্গে দিতে না পারলেও, লেজের দুই ব্যাটসম্যান সিডল ও লিয়ন দারুণ সহায়তা করেছেন স্মিথকে। নিজের ফিফটির খুব কাছে গিয়েও ৪৪ রানে আউট হন সিডল, লিয়ন অপরাজিত থাকেন ১২ রান করে। আর স্মিথ গড়েন ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া যেকোনো অ্যাশেজের প্রথম দিনে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

Smith.jpg

এছাড়া মাত্র ১১৮ ইনিংসে ক্যারিয়ারের ২৪তম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম ব্যাটসম্যান বনে যান স্মিথ, পেছনে ফেলে দেন ১২৩ ইনিংসে ২৪তম সেঞ্চুরি করা বিরাট কোহলিকে। মাত্র ৬৬ ইনিংসে ২৪তম সেঞ্চুরি করে যথারীতি এ তালিকার শীর্ষে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান।

ক্যারিয়ারের ২৪তম হলেও অ্যাশেজে স্মিথের এটি নবম সেঞ্চুরি। মর্যাদার এ সিরিজে তার চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি রয়েছে কেবল স্যার ডন ব্র্যাডম্যান (১৯), স্যার জ্যাক হবস (১২) এবং স্টিভ ওয়াহর (১০)। সমান ৯টি করে সেঞ্চুরি নিয়ে এ তালিকার চতুর্থ স্থানে ওয়ালি হ্যামন্ড এবং ডেভিড গাওয়ারের সঙ্গী হয়েছেন স্মিথ।

অথচ দিনের শুরুতেই টস জিতে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়াকে যেভাবে চেপে ধরে ইংলিশ বোলাররা, সেটা কিছুটা বিস্ময়করই বটে। গত বছর কেপটাউনের নিউল্যান্ডসে বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির পর এই প্রথম টেস্ট দলে ফিরেছেন ডেভিড ওয়ার্নার, ক্যামেরন বেনক্রফট এবং স্টিভেন স্মিথ।

ওয়ার্নার আর বেনক্রফটকে দিয়েই অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের সূচনা হয়। কিন্তু এই দুই ব্যাটসম্যান অসিদের স্বস্তি উপহার দিতে পারেননি। শুরুতেই উইকেট হারিয়েছেন এই দুই ওপেনার। তাদের পর দ্রুত ফিরে যান উসমান খাজাও।

শুরুতেই দুই ইংলিশ অভিজ্ঞ পেসার জেমস অ্যান্ডারসন আর স্টুয়ার্ট ব্রডের তোপের মুখে পড়ে অসিরা। বিশেষ করে স্টুয়ার্ট ব্রড। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই অসিদের ওপর আঘাত হানেন ব্রড। ১৪ বলে ২ রান করা ডেভিড ওয়ার্নারকে এলবিডব্লিউ করে সাজঘরে ফিরিয়ে দেন তিনি।

এরপর ইনিংসের ৮ম ওভারে আবারও ব্রডের আঘাত। এবার তিনি ফিরিয়ে দেন ক্যামেরন বেনক্রফটকে। ২৫ বলে ৮ রান করা ব্রেনক্রফটকে রুটের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন স্টুয়ার্ট ব্রড।

১৭ রানে ২ উইকেট পড়ার পর জুটি বাধার চেষ্টা করেন স্টিভেন স্মিথ আর উসমান খাজা। কিন্তু এই জুটিও বেশিক্ষণ টিকতে পারলো না। অস্ট্রেলিয়ার ৩৫ রানের মাথায় উসমান খাজাকে ফিরিয়ে দেন ক্রিস ওকস। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত বোলিং করা ওকস ১৫তম ওভারে আঘাত হানেন খাজার ওপর।

ওভারের দ্বিতীয় বলে ওকসের ফুল লেন্থের বলটি ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে জমা পড়লেও আম্পায়ার আঙ্গুল তোলেননি। রিভিউ নেন ইংলিশ অধিনায়ক জো রুট। পরে দেখা গেলো ব্যাট ছুঁয়ে গেছে বলটি। এবার আউট দিতে বাধ্য হন আম্পায়ার।

অস্ট্রেলিয়াকে ৮১ ওভারে অলআউট করে শেষ বিকেলে ২ ওভারের জন্য ব্যাটিংয়ে নেমেছিল ইংল্যান্ড। দুই ওপেনার ররি বার্নস এবং অভিষিক্ত জেসন রয় ১০ রান করে দিন শেষ করেছেন।

এসএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।