কিউই আগুনে বোলিংয়ের বিপক্ষে এবার ইংলিশদের ব্যাটিংয়ের লড়াই

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা লর্ডস, লন্ডন থেকে
প্রকাশিত: ০৮:২০ পিএম, ১৪ জুলাই ২০১৯

প্রবচন আছে যুক্তরাজ্যের ‘টু ডব্লিউ’য়ের চরিত্র, আচরণ বোঝা দায়। এক ডব্লিউ দিয়ে উইম্যান তথা নারী। অন্য ডব্লিউ দিয়ে ওয়েদার বা আবহাওয়া। ইংলিশ নারীর আচরণ, প্রকৃতি কেমন? তা নিয়ে হয়ত বহু মতও আছে। কিন্তু আবহাওয়া নিয়ে সংশয়-সন্দেহ নেই এতটুকু।

কোন লিখা-যোখা নেই। নিশ্চয়তার লেশমাত্র নেই। এই রোদ তো এই বৃষ্টি। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসগুলো সত্য হয়। যা আভাস দেয়া থাকে, তার অনেকটাই মিলে যায়। কিন্তু কেন যেন আজকের মানে বিশ্বকাপ ফাইনালের দিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস তেমন মিললো না। সেরকম কোন বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল না।

বিবিসির আবহাওয়া প্রতিবেদনে বলা ছিল সকালে একটু আধটু বৃষ্টি হতে পারে। তবে তা খুব বেশি সময়ের জন্য নয়, আবার পরিমাণেও খুব সামান্য। কিন্তু সকাল সাতটার আগে থেকেই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি লন্ডনে। চললো প্রায় সাড়ে আটটা পর্যন্ত। সকাল নয়টার আগে বৃষ্টি থেমে গেলেও আকাশ পরিষ্কার হলো না। মেঘে ঢাকা থাকল সূর্যম বৃষ্টি গেল। কিন্তু নতুন আপদ হয়ে দেখা দিল ঠান্ডা বাতাস।

মোদ্দা কথা জুলাইয়ের মাঝামাঝি আবার যেন সেই জুনের আবহাওয়া। টিপটিপ বৃষ্টির সঙ্গে কনকনে বাতাস। বৃষ্টির বাঁধায় টস আর খেলা বিলম্বিত হলো। সাড়ে ১০ টার বদলে খেলা শুরু হলো পৌনে ১১ টায়। এমন বৃষ্টি ভেজা কনকনে বাতাস বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারেনি। বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখকে ‘ক্রিকেট মক্কা’ লর্ডসে এসে হাজির ২৫ হাজারের বেশি ক্রিকেট অনুরাগি।

এরকম ঠান্ডা সকাল, ভাবা হলো যে অধিনায়কই টস জিতবেন, তিনিই ফিল্ডিংয়ে নেমে পড়বেন। পেসারদের বলবেন, নাও বোলিং শুরু করো। তোমাদের অনুকূল আবহাওয়া ও কন্ডিশন। বল ম্যুভ করতে পারে একটু আধটু। কিন্তু সবাইকে অবাক করে রোববার সকালে লর্ডসে টস জিতে বোলিং না নিয়ে ব্যাটিং নিয়ে নিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।

পুরো লর্ডস জুড়ে বিস্ময়! আশপাশে অনেকেই চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞেস করলেন, কিউই ক্যাপ্টেন বোলিং না করে ব্যাটিং নিলেন কেন? তাদের সুরে সুর মেলালেন ইংলিশ অধিনায়ক মরগ্যানও। বললেন, আসলে আমিও খানিক দ্বিধায় ছিলাম টস জিতলে কি করতাম, দোটানায় ছিলাম। ৫০-৫০ অবস্থা ছিল। উইকেটের চরিত্র ঠিকই আছে। মানে ব্যাটিং সহায়ক। কিন্তু আবহাওয়া বৈরী। তাই ঠিক করে উঠতে পারিনি আসলে কি করবো।

বৃষ্টি হয়ে গেছে, সূর্য মেঘে ঢাকা, বাতাস বইছে বেশ- এমন কন্ডিশনে উইলিয়ামসন কেন, ব্যাটিং করলেন? কিউই ক্যাপ্টেন পরিষ্কার করে কিছু না বললেও ইংলিশদের আগে ব্যাটিংয়ে না পাঠানোর একটা কারণ খুঁজে ফিরলেন কেউ কেউ।

পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড হচ্ছে একমাত্র দল যারা ছয়বার ৩০০'র বেশি রান করেছে। এর মধ্যে পাঁচবার আবার আগে ব্যাট করে। কাজেই ইংলিশদের আগে ব্যাট করতে দেয়া মানেই বড়সড় রান তাড়া করার চাপ। যা কঠিন এক চ্যালেঞ্জ।

যে দলের জো রুট, জনি বেয়ারস্টো দুটি করে, জেসন রয়, জস বাটলার ও অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যানরা এরই মধ্যে একবার করে সেঞ্চুরি করেছেন, সেই দলকে আগে ব্যাট করতে দেয়া মানেই শিয়ালের নাকের ডগায় মুরগি দেয়ার মত কাজ। বোঝাই গেল, আবহাওয়া যেমনই থাকুক, ইংলিশদের প্রথম ব্যাট করতে দিয়ে সেই ঝুঁকি নিতে চাননি কেন উইলিয়ামসন।

সেটা হয়ত তার যুক্তিতে ঠিকই আছে। তবে নিউজিল্যান্ড ক্যাপ্টেন হয়ত আরেকভাবেও ভেবে দেখতে পারেন। নিউজিল্যান্ড হলো একমাত্র দল যারা কোনো ম্যাচে ৩০০ না করেও ফাইনালে। এবারের বিশ্বকাপে কিউইদের সর্বাধিক স্কোর ২৯১/৮, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবং সেটা আগে ব্যাট করে। আর এইতো সেদিন; ৯ জুলাই ম্যানচেস্টারে ভারতের বিপক্ষে ২৩৯ রানের স্বল্প মাঝারি স্কোর গড়েও জয়ের রেকর্ড আছে তাদের।

কাজেই ব্ল্যাকক্যাপস ক্যাপ্টেন হয়তো ভেবেছিলেন ২৭০-২৮০ রানের একটা স্কোর দাঁড় করাতে পারলেই হয়ত ইংলিশদের একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া যাবে। কিন্তু তার আর হলো কই? যার ব্যাটে এতটা পথ হেটে আসা, যিনি আগের ৯ খেলায় দুটি করে সেঞ্চুরি আর হাফ সেঞ্চুরিতে প্রায় সাড়ে ৫০০ রান করেছিলেন। সেই নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক নিজেই ফাইনালে তেমন কিছু করতে পারলেন না। ফিরে গেছেন ৩০ রানে।

অধিনায়ক অন্য ম্যাচের মত ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে না পারাটাই ভুগিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। লড়িয়ে পুঁজি গড়ার জন্য দরকার ছিল আর কারও বড় ইনিংস। ওপেনার হেনরি নিকোলাস (৭৭ বলে ৫৫) আর মিডল অর্ডারে উইকেটকিপার টম লাথাম (৫৬ বলে ৪৭) রানের দুটি মাঝারি ইনিংস খেললেও কাজের কাজ করতে পারেননি।

সকালে হালকা এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। বাতাস আছে। রোদও নেই তেমন। উইকেটে একটু আধটু বল সুইং করবে। এখানে অযথা শর্ট বল করার কোন মানে হয় না। যতটা পারো ওপরে ওপরে বল করো। নিশ্চয়ই বোলারদের এমন বার্তাই দিয়ে থাকবেন ইংলিশ অধিনায়ক মরগ্যান।

ফাস্ট মিডিয়াম ক্রিস ওকস (৯ ওভারে ৩/৩৭), ফাস্ট বোলার লিয়াম প্লাঙ্কেট (১০ ওভারে ৩/৪২), জোফরা আর্চার (১০ ওভারে ১/৪২) এবং মার্ক উড (১০ ওভারে ১/৪৯) ঠিক অধিনায়কের নির্দেশ মতই প্রায় সারাক্ষণ ভাল জায়গায় মানে ঠিক ড্রাইভিং জোনের একটু নিচে বল করলেন।

এমন টাইট লাইন লেন্থের বোলিংয়ের বিপক্ষে তেড়েফুড়ে ব্যাট চালনা কঠিন। আর সাহস নিয়ে সে কাজটি করার চেষ্টায়ও করলেন না কোন নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যান। সবাই যেন ইংলিশ ফাস্ট বোলারদের লক্ষ ও নিশানা ঠিক করা সমীহ জাগানো বোলিংয়ের বিপক্ষে সনাতন ক্রিকেট শটই খেলার চেষ্টা করলেন। হাত খুলে খেলতে পারলেন না কেউ। আর তাই ২৪১ রানে থেমে যাওয়া।

ইংলিশরা যেমন ফর্মে আছে, তাতে হয়ত ২৪২ কম রান, ছোট টার্গেট। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি আর লকি ফার্গুসনরা এর চেয়ে কম পুঁজি নিয়েও সেমিফাইনালে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি আর ধোনির ভারতকে ১৮ রানে হারিয়ে ফাইনালে এসেছে।

কিউইরা হয়ত অমন বারুদ মাখানো বোলিংয়ের আশায়ই আছেন। দেখা যাক তাদের সে আশা পূরণ হয় কি-না? নাকি জো রুট, জনি বেয়ারস্টো আর জেসন রয়রাই হাসেন শেষ হাসি?

এআরবি/এসএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।