উইলিয়ামসন: বাদামি দাড়ির এক ভদ্রলোকের গল্প
বাদামি দাড়ির ধবধবে সাদা চামড়ার একজন। সঙ্গে হালকা মোচ আর কালো জার্সি। একজন কেন স্টুয়ার্ট উইলিয়ামসনের গল্প। সর্বদাই খেলেন দলের জন্য, দেশের জন্য। ঠাণ্ডা মাথায় চুপচাপ করে যান নিজের কাজটা। সবসময়ই থাকেন আলোচনার বাইরে, আসলে থাকতে চানও না।
কিউইদের সাবেক অধিনায়ক ম্যাককালামকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো উইলিয়ামসন সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় নার্ভাস থাকেন কিনা? কারণ কথা বলতে বলতে হঠাৎই কথা বন্ধ হয়ে যায় তার। তিনি জবাব দিয়েছিলেন ‘ব্যাপারটা আসলে নার্ভাসনেস নয়। ও আসলে বুঝতে পারেন না তাকে এতো কিছু জিজ্ঞেস করার কী আছে!’
উইলিয়ামসন এমনই, ঠাণ্ডা মাথার খুনি। দলের পরিকল্পনার যিনি সাজান মাঠের কোনো অংশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে। বোলারের সাথে খুব বেশি কথা বলেন না, ফিল্ডারও নাড়াচাড়া করেন না খুব বেশি। কোনোকিছুতেই তার উজ্জাস নেই, উত্তেজনাও না।
যে কারণে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা ভারতকে হারিয়ে দিয়েও তার ভাবটা এমন যে অফিসের কাজ শেষ করে চারটা বাজা মাত্রই অফিস ছাড়লেন। সবসময়ই তো তিনি এমন ভাবলেশহীন একজন। যার জীবন নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা নেই। দেশের হয়ে যার এতো এতো কীর্তি সেই উইলিয়ামসনের জীবনের সেরা উপহার প্রেমিকার দেয়া হেডফোন। বিশ্বাস করতে না চাইলেও এটাই সত্যি।
জন্মটা নিউজিল্যান্ডের তাওরাঙা নামক শহরে। এক জমজ ভাইসহ আছে আরো তিন বোন। যাদের কারোরই ক্রিকেটে আগ্রহ নেই। উইলিয়ামসনের আছে, ছিল রাগবীতেও। তবে শেষ পর্যন্ত জীবনের গাঁটছড়া বেঁধেছেন ক্রিকেটের সঙ্গে। ভালোবেসেছেন, সফলও হয়েছেন।
নিজের দেশ নিউজিল্যান্ডকে দ্বিতীয়বারের মতো তুলেছেন ফাইনালে। ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন পুরো আসর জুড়ে। বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্বও করেছেন। সঙ্গে দলের বাকিদের সহায়তা। ব্যস, প্রথমবারের বিশ্ব শিরোপা উঁচিয়ে ধরার একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেল উইলিয়ামসনের হাত ধরেই।
ছোটবেলা থেকেই যে কাজে হাত দিয়েছেন সবকিছুতেই সফল হয়েছেন। সেটা হোক ক্রিকেট, ফুটবল কিংবা রাগবি। ভালোবাসেন সার্ফিং করতে। সময় পেলেই বন্ধুদের নিয়ে নেমে পড়েন সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে।
সার্ফিং বোর্ড হাতে সমুদ্রের সঙ্গে লড়াই করে যিনি টিকে থাকেন প্রতিবার। তার সামনে আজ আরো বড় এক লড়াই। তার প্রিয় ক্রিকেট মাঠে। এই যুদ্ধে তাওরাঙার যোদ্ধা কিউইদের জেতাতে পারবেন কিনা সেটা বলবে সময়। তবে লড়াইটা কখনো থামবে না নিশ্চয়ই!
এমএইচবি/এসএস/পিআর